দিনাজপুরে স্বপ্ন জাগাচ্ছে সমতলের চা বাগান

মোহাম্মাদ মানিক হোসেন, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর)
  প্রকাশিত : ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৬:০৮
অ- অ+

দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা গ্রামের সমতল ভূমিতে চা বাগান করে চমক দেখিয়েছেন র‌্যাবেন গ্রুপের পরিচালক এম আতিকুর রহমান।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দুটি ইউনিয়নে প্রায় ১২ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। সুগন্ধি ধান-লিচুর জন্য এ উপজেলার নাম ডাক থাকলেও এখন চা পাতার ফলন বেশ ভালো হচ্ছে। চা বাগানগুলোতে স্থানীয় শতাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বিশেষ করে নারী শ্রমিকেরা বেশি কাজ করছে। আগে এখানকার নারীরা ঘর-সংসার সামলাতো। এখন ঘর-সংসারের পাশাপাশি চা বাগানে কাজ করে পুরুষের সঙ্গে নারীরাও সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।

বাগানের ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত আড়াই বছর আগে পঞ্চগড় থেকে চা গাছের চারা এনে নিজস্ব জমিতে পরীক্ষামূলক রোপন করেন।

বর্তমানে তিনি ৪৫ থেকে ৫০ দিন পরপর চা পাতা বিক্রি করছেন। একটি চা কোম্পানি তার বাগানে এসে চা পাতা নিয়ে যায়। বাগান থেকে প্রতি কেজি চা পাতা ১৬ থেকে ২৭ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। মরিয়ম চা বাগানে এলাকার কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। গত ১২ মার্চ রবিবার তিনি প্রায় এক হাজার কেজির মতো চা পাতা বিক্রি করেছেন। সামনে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার কেজি চা পাতা বিক্রি হবে বলে তিনি ধারণা করছেন।

চিরিরবন্দর উপজেলার মরিয়ম টি বাগানে চা শ্রমিক দিলাপ কুমার বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে এ বাগানে চায়ের পাতা তুলি। আগে বাসায় কাজ না থাকলে দূরে যেতাম কাজের জন্য এখন বাসার কাছে চা বাগান হওয়ায় কিছুটা শান্তিতে আছি। তবে চা বাগানে কাজ করে মজুরি টা একটু কম হয়ে যায়। বাগান মালিক যদি আমাদের মজুরিটা বাড়িয়ে দেয়, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়। কারণ বাজারে সব জিনিসের দাম অনেক চড়া।

চা শ্রমিক অনিকা রায় বলেন, চা বাগানটি বাসার কাছে হওয়ায় খুব ভালো হয়েছে। আগে বাসায় বসে থাকতাম কোনো কাজ করতাম না। এখন বাসার কাছে চা বাগান হওয়ায় এখানে কাজ করে সংসারে কাজে লাগাতে পারছি। বাচ্চাদের লেখা-পড়ার খরচ দিতে পারছি। তবে নারী শ্রমিকদের মজুরিটা কম হয়েছে। আমরা চাই আমাদের দিন মজুরিটা আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়া হোক।

চা শ্রমিক লতা রানি বলেন, আগে কৃষি জমিতে কাজ করতাম। বাসা থেকে আমার স্বামী কাজে যেতে নিষেধ করতো। এখন আমার স্বামীসহ দুজনে মরিয়ম টি বাগানে কাজ করি। কৃষি কাজ তো সবসময় থাকে না। আগে কাজ না থাকলে বাসায় বসে থাকতে হতো। এখন বাড়ির সাথে চা বাগান হওয়ায় দুজনে মিলে চা বাগানে কাজ করে আমাদের সংসারে অভাব দূর হয়েছে।

চিরিরবন্দর উপজেলার মরিয়ম চা বাগানের মালিক এম আতিকুর রহমান বলেন, কৃষির জেলা দিনাজপুর হলেও এখানকার কৃষকরা অবহেলিত। আমি চিন্তা করেছি এখানকার কৃষকরা যাতে অবহেলিত না থাকে বা কৃষি শ্রমিকরাও যাতে বেকার না থাকে। সে চিন্তা থেকে জেলার চিরিরবন্দর উপজেলায় সাতলালা ইউনিয়নের ২০২০ সালে চায়ের বাগান শুরু করি। প্রথমে প্রায় ৫ একর জমিতে শুরু করি। এক বছরের মাথায় চা পাতা তোলা শুরু করি। দেখলাম অন্য জেলার তুলনায় আমার বাগানে পাতার ফলন ভালো, তখন বাগান বাড়িয়েছি। এখন প্রায় ১০ একর জমির উপর মরিয়ম চা বাগান।

তিনি বলেন, চিরিরবন্দরে আমরা প্রথম পরীক্ষামূলক চা বাগান লাগাই। আমরা মোটামুটি সফল। আমাদের এদিকে যে চা গাছ ভালোই হয় সেটা আমরাই প্রমাণ করলাম। অনেকেই বলেছিল এদিকে চা বাগান হবে না। কিন্তু চেষ্টা এবং পরিশ্রম করেছি। আল্লাহর রহমতে চা বাগান ভালোই হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখানে চা বাগান করে স্থানীয় শতাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা আছে আমরা এখানে চায়ের ফ্যাক্টরি বানাবো খুব দ্রুত এবং মরিময় টি বাগানের চা বাহিরের দেশে রপ্তানি করব।

চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা বলেন, চিরিরবন্দরের কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে চা চাষ। আমাদের উপজেলার সাতনালা ও ফতেজংপুর দুটি ইউনিয়নে প্রায় ১২ একর জমিতে চায়ের চাষ হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে চা চাষিদের। এবছর প্রথম আজ থেকে পাতা তোলার কাজ শুরু হয়েছে, পাতার ফলন বেশ ভালো হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৩১মার্চ/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ঢাকা-১৪: এস এ খালেকের উত্তরাধিকার সাজুকেই বিএনপির নির্ভরযোগ্য প্রার্থী ভাবছেন স্থানীয়রা
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ডাকাতি হওয়া বিপুল পরিমাণ সৌদি রিয়ালসহ ৭ জন গ্রেপ্তার
ডেঙ্গুতে আরও ১জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৫৮
জুনে ১৩৫টি মোবাইল উদ্ধার করেছে ১২ এপিবিএন, মালিকদের কাছে হস্তান্তর
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা