দুই জাপানি পর্যটকের টাকা-আইফোন ছিনতাই করে ঝর্ণা দেখতে সীতাকুণ্ডে যান তারা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে দুজন জাপানি পর্যটকের অর্থ ও আইফোনসহ মালামাল ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হচ্ছেন- মো. খায়রুল ইসলাম স্বপন, জিহাদুল ইসলাম মামুন ও মো. আবু রাসেল প্রত্যয়। এদের একজনকে মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তারের পর তার তথ্যে সীতাকুণ্ডের জলপ্রপাত দেখতে যাওয়া বাকি দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া কিছু অর্থ ও মালামাল উদ্ধার হয়েছে বলে শুক্রবার বিকালে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।

পুলিশ জানায়, ওই দুই জাপানি নাগরিকের কাছ থেকে দেড় লাখ জাপানি ইয়েন, ২৮ হাজার বাংলাদেশি টাকা, দুটি আইফোন ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে। জাপানি ইয়েন, টাকা ও আইফোন ছিনতাইয়ের পর জড়িতদের দুজন প্রমোদ ভ্রমণে যান কক্সবাজার। সেখান থেকে সীতাকুণ্ডে জলপ্রপাত দেখতে যান তারা। সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের একটি দল। এর আগে আরেকজনকে মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে বাকি দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বলেন, জাপানি ওই দুই নাগরিক গত ২১ এপ্রিল বাংলাদেশে আসেন। ২৪ এপ্রিল রাজধানীর শুক্রাবাদ এলাকার ‘নন্দিনী’ নামক আবাসিক হোটেল ওঠেন। সেদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ ও সংলগ্ন কবরস্থানে ঘুরতে যান তারা।

ডিসি আজিমুল আরও বলেন, রাত ৯টার দিকে জাপানি দুই নাগরিক কবরস্থান থেকে বের হতে চাইলে অজ্ঞাতনামা তিনজন যুবক তাদের মিসগাইড করে কবরস্থানের ভেতরের দিকে নিয়ে যান। একপর্যায়ে অজ্ঞাতনামা যুবকরা তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট, এক লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ জাপানি ইয়েন, ২৮ হাজার বাংলাদেশি টাকা, দুটি আইফোন, দুটি ক্রেডিট কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলথ কার্ড, একটি পোর্টেবল হটস্পট ও একটি ব্লু-টুথ ছিনিয়ে নেন।

জাপানি নাগরিকরা ভয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তারা কাউকে কিছু না জানিয়ে হোটেলে চলে যান। পরদিন হোটেল ম্যানেজারকে বিষয়টি জানান। হোটেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ বিষয়টি জানতে পারে। পরে এ ঘটনায় মামলা রুজু হয়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মোহাম্মদপুর থানার একটি টিম ঘটনাস্থল কবরস্থানের গেট ও আশপাশে স্থাপিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ, প্রযুক্তির সহায়তা ও সোর্সের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে ঘটনায় জড়িত চক্রটিকে শনাক্ত করে। এরপর গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুর থানাধীন বোটঘাট এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত আসামি মো. খায়রুল ইসলাম স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে মোহাম্মদপুর থানাধীন রায়েরবাজার শুটকির আড়তের পেছনে কবরস্থানের দেয়াল সংলগ্ন মাঠ থেকে লুণ্ঠিত জাপানি নাগরিকের পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলথ কার্ড, দুটি ক্রেডিট কার্ড ও একটি পাসপোর্ট ছেড়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

ডিসি আজিমুল হক বলেন, মোহাম্মদপুর থানার আরেকটি টিম অভিযান পরিচালনা করে সীতাকু- থানা এলাকা থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত আসামি জিহাদুল ইসলাম মামুন ও মো. আবু রাসেল প্রত্যয়কে গ্রেপ্তার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি আইফোন, ৩০ হাজার জাপানি ইয়েন, একটি পোর্টেবল হটস্পট ও একটি ব্লু-টুথ উদ্ধার করা হয়। জিহাদুল ইসলাম মামুন ও মো. আবু রাসেল প্রত্যয় ছিনতাইয়ের পর ৯০ হাজার জাপানি ইয়েন ও অন্যান্য মালামালসহ প্রমোদ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার চলে যান।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বলেন, কক্সবাজার যাওয়ার পর তারা কিছু ইয়েন ভাঙিয়ে খরচও করেন। তারা কক্সবাজার ভ্রমণ শেষে সীতাকু- জলপ্রপাত দেখার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। সীতাকু- পৌঁছালে মোহাম্মদপুর থানার একটি টিম তাদের গ্রেপ্তার করে। আবু রাসেল প্রত্যয়ের বিরুদ্ধে একটি দ্রুত বিচার আইনের মামলাসহ মোট তিনটি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেফতার ও ছিনতাই হওয়া অর্থ ও বাকি মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা এইচ এম আজিমুল হক।

(ঢাকাটাইমস/২৮এপ্রিল/আরআর/ইএস)