কুয়াকাটা সৈকতে ফিরেছে নান্দনিকতা

আব্দুল কাইয়ুম, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
 | প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:৩৩

সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবারের ঈদে ঝঞ্জালমুক্ত নান্দনিক দৃশ্য উপভোগ করেছেন পর্যটকরা। এখন থেকে সমুদ্র সৈকতের সোন্দর্য বর্ধন রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা অব্যাহত থাকবে বলে জানায় জেলা প্রশাসন।

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের জিরোপয়েন্ট এলাকা হতে পূর্বে ও পশ্চিমে এক কিলোমাটারের বাইরে জাল নৌকা স্থানান্তর করাসহ বিচ বাইক, মোটর বাইক প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং সৈকতের ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আধা কিলোমিটার পূর্বে নির্দিষ্ট স্থানে বসানোর মাধ্যমে পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষা করে পর্যটকদের মনোরম সৈকত উপহার দিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রশাসন। এতে কিছু ভাসমান ব্যবাসায়ীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেও অনেক ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

দেখা গেছে, সৈকতের নিয়ম মানতে আবার অনেককেই প্রশাসনের দেয়া নির্দেশনা উপেক্ষা করার ফলে করা হয়েছে অর্থদণ্ড।

এর আগে বেশ কয়েক বছরধরে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের আধা কিলোমিটার এলাকার মধ্যে যত্রতত্রভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যে যার মতো মনগড়া ভাসমান দোকানপাট বসিয়ে কেনাবেচা করত; যা পরিবেশ বিনষ্টসহ পর্যটন কেন্দ্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

গত বছরের ১২ নভেম্বর সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দোকানগুলোতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসন। মূলত সৈকত এলাকার সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে এবং ৪৮নং পোল্ডারের পাউবো বেড়িবাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য এ সব ভাসমান দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হয়। তখন সৈকতের ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্থায়ীভাবে ব্যবসার পরিবেশ চেয়ে দাবি জানান। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে মৌখিকভাবে ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট জায়গায় বসানোর কথা বলা হয়েছিল জানা যায়। যার সূত্র ধরে জেলে প্রশাসনের উদ্যোগে ভাসমান ব্যবসায়ীদের স্থায়ী বসানোর কার্যক্রম নেয়া হয়।

ঈদুল ফিতরের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী দীর্ঘসময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন) মো. রবিউল ইসলাম ও কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের উপস্থিতিতে কুয়াকাটা ট্যুরিজম পার্কের পূর্বপাশে এসকল ভাসমান দোকান বসার জায়গা করে দেয়া হয়। নির্দিষ্ট স্থানে সারিবদ্ধভাবে ওষুধের দোকান, খাবার হোটেল, চায়ের দোকান, চটপটির দোকান, বার্মিজ আচারের দোকান, ফিশ ফ্রাইয়ের দোকানসহ অন্য দোকানগুলো পুনর্বাসন করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট জায়গা পেয়ে ব্যবসায়ীরা দোকান নির্মাণের কাজ করেছেন।

সৈকতের ব্যবাসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের যেখানে বসানো হয়েছে এখানে পর্যটকরা আসছেন না। আমাদের ট্যুরিজম পার্কের পূর্ব পাশে না বসিয়ে পশ্চিম পাশে বসালে বেচাকেনা ভাল হতো।

আবার অনেক ভাসমান ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বছর একবার দু’বার উচ্ছেদের কবলে পড়তে হতো আমাদের। যার কারণে আমাদের অনেক ব্যবসায়ীর মারাত্মক ক্ষতি হতো। এখন নির্দিষ্ট জায়গা পাচ্ছি। মনে হচ্ছে, এখন থেকে নির্ভয়ে শান্তিতে ব্যবসা করতে পারব। তবে এবারের ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটা বিপুলসংখ্যক পর্যটক এলেও আমাদের বেচাকেনা মোটেও ভাল হয়নি। সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে দূরত্ব বেশি হওয়ায় পর্যটকরা এতো দূরে আসছেন না।

কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষ জানান, কুয়াকাটার বিভিন্ন সংগঠনের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল- দোকানগুলো এক জায়গায় নেয়ার। অবশেষে সেটা হচ্ছে, এতে সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। সৈকতের প্রবেশপথ একটি থাকার কারণে পর্যটকদের চাপের সময় সৈকতে ওঠানামা করতে নানা সমস্যা হয়। দোকানগুলো স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে সমস্যার সমাধান হলো। জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।

কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (কুটুম) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, জেলা প্রশাসন যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সফল হলে কুয়াকাটা সৈকত এলাকার সৌন্দর্য ফিরে আসবে।

এ প্রসঙ্গে কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বারবার উচ্ছেদের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। যেখানে সেখানে দোকানগুলো থাকলে সৈকতের পরিবেশ নষ্ট হয়। আমি জেলা প্রশাসকের সাথে বারবার এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। অবশেষে দোকানগুলোকে নির্দিষ্ট জায়গা বসাতে পারছি। এতে দোকানিরা পাবে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ, সৈকতে বাড়বে সৌন্দর্য।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কুয়াকাটার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বারবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু পুনর্বাসন করা হয়নি। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মহোদয় স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে সম্ভব হয়নি। তাই আপাতত অস্থায়ীভাবে সৈকতের আশেপাশে এলোমেলো বসে থাকা দোকানগুলো ট্যুরিজম পার্কের পাশে বসানো হচ্ছে। পরবর্তীতে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের সেখানে স্থানান্তর করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৯এপ্রিল/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :