রক্তাক্ত এক ইতিহাসের সাক্ষী মহান মে দিবস

অর্নব সরকার
 | প্রকাশিত : ০১ মে ২০২৩, ১২:২৮

পহেলা মে। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের ঐতিহাসিক গৌরবময় দিন। ইতিহাসের পাতায় বঞ্চনা, নির্যাতন ও বৈষম্যের বিপক্ষে শ্রমিকদের সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ের একটি উজ্জ্বল ও চিরস্মরণীয় রক্তাক্ত দিন।

উনিশ শতকে শিল্প বিপ্লবের গোড়ার দিককার কথা, তখন দেশে দেশে পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষের কষ্টের সীমা ছিল না। সপ্তাহে ৬ দিনের প্রতিদিনই মানুষ গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কলুর বলদের মতো অমানবিক পরিশ্রম করতো কিন্তু তার বিপরীতে মিলত অতি নগণ্য মজুরি। এর প্রতিবাদে ১৮৬০ সালে শ্রমিকরাই মজুরি না কেটে দৈনিক ৮ ঘণ্টা শ্রম নির্ধারণের প্রথম দাবি জানায়। কিন্তু কোনো শ্রমিক সংগঠন ছিল না বলে এই দাবি জোরালো করা সম্ভব হয়নি। ১৮৮০-৮১ সালের দিকে শ্রমিকরা প্রতিষ্ঠা করে 'ফেডারেশন অব অর্গানাইজড ট্রেডস অ্যান্ড লেবার ইউনিয়নস।'

১৮৮৬ সালের প্রথম দিকে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আমেরিকার শিকাগো, নিউ ইয়র্ক, উইসকনসিন এবং বিভিন্ন রাজ্যে গড়ে ওঠে সংঘবদ্ধ আন্দোলন। অক্টোবরে আমেরিকার ‘ফেডারেশন অব অর্গানাইজড ট্রেডস অ্যান্ড লেবার ইউনিয়নস’-এর এক বৈঠকে ৮ ঘণ্টা কাজের সময় প্রতিষ্ঠার জন্য সবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অতঃপর

১৮৮৬ সালের ১ মে, ট্রেড ইউনিয়ন (২) দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, শিকাগোর ম্যাককরমিক হার্ভেস্টিং মেশিন কোম্পানির অর্ধেক শ্রমিক আট ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে ধর্মঘট করে। দুই দিন পর ম্যাককরমিক হারভেস্টার মেশিন কোম্পানির কাছে একটি শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রায় ৬০০০ শ্রমিক এতে যোগ দেয়। সমাবেশে শ্রমিক নেতারা বক্তব্য রাখেন। তারা শ্রমিকদের একত্রে দাঁড়ানোর, তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার এবং তাদের মালিকদের কাছে নতি স্বীকার না করার আহ্বান জানান। সমাবেশের এক পর্যায়ে কয়েকজন হরতালব্রেকার সভাস্থল ত্যাগ করতে থাকে। তাদের ফিরিয়ে আনতে রাস্তায় নেমে পড়েন হরতালকারীরা। হঠাৎ প্রায় ২০০ জন পুলিশ সদস্য ক্লাব ও রিভলবার নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। একজন স্ট্রাইকার তাৎক্ষণিকভাবে নিহত হন, অন্য পাঁচ-ছয়জন গুরুতর আহত হন এবং আরও অনেকে আহত হন। এই হতাহতের কারণে শ্রমিকরাও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এর পরের দিন হাজার হাজার শ্রমিক আন্দোলনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে শিকাগোর 'হে মার্কেট স্কয়ারে' সমবেত হন।

অতঃপর ১৮৮৯ সালের মে মাসের ১ তারিখকে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ বলে ঘোষণা দেয় ‘ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর ওয়ার্কার্স অ্যান্ড সোশ্যালিস্টস’। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছরের ১ মে বিশ্বব্যাপী পালন হয়ে আসছে ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’। ১৯১৭ সালে আমেরিকা সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে ‘দিনে ৮ কর্মঘণ্টা’র স্বীকৃতি দেয়। ১৯১৭ সালের পর থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে বেশ জাঁকজমকতার সাথে মে দিবস পালন করা হতো। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক দেশেই পালিত হতো না মে দিবস। তবে বর্তমানে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা ও ওশেনিয়া মহাদেশের প্রায় প্রতিটি উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত ছোট-বড় সব দেশেই প্রতি বছর পালিত হয় ‘আন্তর্জাতিক মে দিবস’ এবং ৮০টি দেশে এই দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয় ও সরকারি ছুটি প্রদান করা হয়।

অর্নব সরকার, শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :