হাতিয়ায় এখনও ঘাটে ফেরেনি অনেক মাছ ধরার ট্রলার, মালিক-স্বজনদের শঙ্কা

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে রবিবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। ইতোমধ্যে সকল উপকূল থেকে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া সকল মাছ ধরার ট্রলারকে নিরাপদে সরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকেল থেকে সকল ধরনের নৌ-যান চলাচলেও দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
শুক্রবার রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ৮নং মহাবিপদ সংকেত জারি করা হলেও নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বেশির ভাগ ঘাটে এখনও ফিরে আসেনি অনেক মাছ ধরার ট্রলার।
গভীর সমুদ্রে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় তাদের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে সংকিত হয়ে পড়েছেন ট্রলার মালিক ও মাঝি-মাল্লাদের স্বজনরা।
সরজমিনে হাতিয়ার কাটাখালি ঘাট, আমতলি ঘাট, জঙ্গোলিয়া ঘাট, মুক্তারিয়া ঘাট ও চেয়ারম্যান ঘাট সহ বিভিন্ন ঘাট ঘুরে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের কথা জানার পরও গত ৮, ৯ ও ১০ মে বিভিন্ন ঘাট থেকে মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে যায় প্রায় ৮ থেকে ৯শত ট্রলার।
যার মধ্যে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ঘাটে ফিরেছে এর অর্ধেক মাছ ধরার ট্রলার, অনেকের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছে এবং যারা সিগন্যাল সম্পর্কে জানেন রাতের মধ্যে ফিরে আসবেন তারা। এছাড়াও অনেকগুলো ট্রলার নেটওয়ার্কে বাইরে থাকা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ঝড়ের অবস্থা ও ট্রলারে থাকা রেডি থেকে বার্তা ফেলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে তারা ঘাটে ফিরে আসবে এমন প্রত্যাশা ট্রলার মালিক ও মাছি-মাল্লার স্বজনদের।
জাহাজমারা আমতলী গ্রামে বসবাস করেন জেলে আবুল কাশেম। এক সপ্তাহ আগে ফিসিং ট্রলারে সাগরে যান। শনিবার দুপুর পর্যন্ত তীরে ফিরে আসেননি তিনি।
কথা হয় কাশেমের স্ত্রী জয়নব বানুর সঙ্গে, তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, মোবাইলে তার স্বামীকে পাওয়া যাচ্ছে না। ওই ট্রলারে থাকা অপর ১৭ জন জেলেদের মুঠোফোনেও কল যাচ্ছে না। খুবই চিন্তা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আমতলী গ্রামের মোটরসাইকেল চালক মো. রাসেল ঢাকাটাইমসকে জানান, গত বছর সিত্রাং এ তার ভাই সোহেলসহ একটি ট্রলার সাগরে ডুবে যায়। ৫ দিন পর মহিপুর একটি ট্রলার তাকে জীবিত উদ্ধার করে। এবার ভয়ে সাগরে যাননি তিনি। তবে তাদের বাড়ির পাশে অনেক ট্রলার সাগরে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অনেকে ফিরে এলেও আমতলি ঘাটের হাসেম মাঝির ট্রলারসহ ৮-১০টি ট্রলার এখনও সাগরে অবস্থান করছে। সাগরে থাকা ট্রলারের জেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে পরিবারের সদস্যরা উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন।
জাহাজমারা ট্রলারের মালিক মাইন উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে জানান, জাহাজমারা কাটাখালী ঘাটে প্রায় দুই শতাধিক ফিসিং ট্রলার রয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক ট্রলার ঘাটে ফিরে এলেও এখনো সাগরে রয়েছে অনেকে।
মাছ ধরার ট্রলারগুলোতে জিপিএস ট্রেকার ও ওয়ারলের্স নেটওয়ার্ক থাকলে সেগুলোর অবস্থান নির্ণয় ও মাঝি-মাল্লাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হতো। গত বছর সিত্রাং এর সময় হাতিয়ায় দুটি মাছ ধরার বঙ্গোপসাগরের বইডুবি এলাকায় ডুবে যায়। পরবর্তীতে ওই ঘটনায় ৩ জেলের লাশ, ২১ জনকে জীবিত উদ্ধার ও ৮ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তাই ঘাটে না ফেরা ট্রলারগুলো নিয়ে তাই আতঙ্ক বিরাজ করছে।
হাতিয়া বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নবির উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে জানান, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ছোট-বড় মাছ ধরার ঘাট রয়েছে প্রায় ৪০টি। এসব ঘাট থেকে মাছ শিকারে নদী ও গভীর সমুদ্রে যায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ট্রলার। যার মধ্যে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করে অন্তত ১ হাজার ট্রলার। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় মোখার উৎপত্তির পর থেকে উপকূলে জেলেদের নিরপদে সরে আসার জন্য সরকারিভাবে চালানো হয় বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রণ কক্ষসমূহের নম্বর
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কায়সার খসরু ঢাকাটাইমসকে বলেন, বোট মালিক, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ বোট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ওই ট্রলাগুলোর ঘাটে ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও শনিবার সকালে সাগরে থাকা ট্রলারের বিষয়ে নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ডকে অবগত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পুরোপুরো আঘাত হানার আগে তাদের নিরাপদ স্থানে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/১৩মে/এসএম)

মন্তব্য করুন