ওলামা লীগের সম্মেলন আজ, পদ পেতে বিতর্কিতদের দৌড়ঝাপ

জাফর আহমেদ, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২০ মে ২০২৩, ০০:২২ | প্রকাশিত : ২০ মে ২০২৩, ০০:০২

আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে ছোট-বড় সব সংগঠনকে পুনর্গঠন করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এর ধারাবাহিতকায় আজ শনিবার আওয়ামী ওলামা লীগের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

প্রায় তিন দশক পর এই সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর আমলে এই সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হলেও বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরে বন্ধ যায়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উৎসাহ দিলে আবার সক্রিয় হয় ওলামা লীগ। কিন্তু দীর্ঘ তিন দশকেও হয়নি সম্মেলন। এবার সেই জটলা কাটিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বে এগিয়ে যেতে চায় ওলামা লীগের এক ঝাঁক নেতা।

তবে ওলামা লীগের সম্মেলনকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন জামায়াতপন্থি ও বিতর্কিত ব্যক্তিরা। এরমধ্যে শীর্ষ নেতৃত্ব পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে যারা ওলামা লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদেরকে কোনঠাসা করে বিতর্কিতরা পদে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ওলামা লীগের সম্মেলন ঘিরে একাধিক গ্রুপ করে দলীয় পদ ভাগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগের নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অনেকে।

ওলামা লীগ না করা এবং নামধারী মাওলানা, বিত্তশালীর কেউ কেউ টাকার বিনিময়ে পদ পেতে ত্যাগীদের সংগঠন থেকে দূরে রাখারও চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ আছে।

শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সংগঠনটির প্রথম সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়া বিশেষ অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

ওলামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওলামা লীগের জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই হেফাজত-জামায়াতপন্থি দলবদলকারী একটি চত্রু সক্রিয়। বিভিন্ন অভিযোগে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থাকায় এপ্রিল মাসের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করার পরেও সম্মেলন বাতিল করার নিদের্শেনা দেয় আওয়ামী লীগ। মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার সমিতির নেতা, ক্যাসিনো চিপস সাল্পাইয়ার, নামধারী মাওলানা, মামলার আসামি বিতর্কিত কার্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ব্যাক্তিরা ওলামা লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হতে লবিং-তদবির শুরু করেছেন।

এদিকে এরই মধ্যে প্রার্থীদের জীবন-বৃত্তান্ত জমা নিয়েছেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ড. কেএম আব্দুল মমিন সিরাজী। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপের নির্দেশেই জীবনবৃত্তান্ত জমা নিয়েছেন। ওলামা লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে প্রায় ৪০ জন প্রার্থী জীবন-বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।

এদের বিষয়ে খোজঁ খবর নিয়ে জানা গেছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর মধ্যে অনেকে জেলা থেকে ঢাকায় এসেই নিজে নিজে কেন্দ্রীয় ওলামা লীগের নেতা হয়ে গেছেন। আবার ওলামা লীগের শীর্ষ পদপ্রার্থীদের অনেকেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় ইসলামি মহাজোটেও যোগ দিয়েছিল। কেউ আবার নতুন করে ওলামী লীগে নাম লেখিয়েছেন।

সভাপতি প্রার্থী মাওলানা আসাদুজ্জামান আসাদ দলের দুঃসময়ে ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি মরহুম ইলিয়াস বিন হেলালীর সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মূল্যায়ন না পেয়ে মাওলানা আসাদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এরশাদের নেতৃত্বে ইসলামি মহাজোটে যোগ দেন। সেখানে সুবিধা করতে না পেরে পুনরায় ওলামা লীগে ফিরে আসেন। এখন সভাপতি প্রার্থী।

চট্টগ্রামে ওলামা লীগের রাজনীতি করা হাফেজ মাওলানা আলতাফ হোসাইন মোল্লা নিজেই দল খুলে ইসলামী মহাজোটে যোগ দেন। ওলামা লীগের সম্মেলনের আগ পর্যন্ত তিনি জাতীয় পার্টির বিদিশা এরশাদের সঙ্গে ছিলেন। এখন ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তিনি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

মুসলিম নিকাহ্ রেজিস্ট্রার সমিতির মহাসচিব হাফেজ সাগর আহমেদ শাহীন। তিনিও ওলামী লীগের শীর্ষ পদ পেতে লবিং-তদবির শুরু করেছেন। ওলামা লীগের সভাপতি প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার যখন ওলামা লীগের পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেন তখন থেকে আমি ওলামা লীগের আমি যুক্ত। কখনো ওলামা লীগ থেকে বিচ্ছিন্ন হইনি। দল থেকে যদি আমাকে দায়িত্ব দেওয়া তাহলে আমি দায়িত্ব পালন করবো।

ওলামা লীগের আরেক সভাপতি প্রার্থী মো. সুলাইমান। কিশোরগঞ্জ বাড়ি হওয়ায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছের লোক বলে সর্বত্র পরিচয় দেন। আসন্ন আওয়ামী ওলামা লীগের সম্মেলনকে ঘিরে বেশ সক্রিয় মো.সুলাইমান। হতে চান সভাপতি। এই সংগঠনের সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে নিজেকে জাহির করে নিজের সক্রিয়তার জানান দিচ্ছেন তিনি।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, মো. সুলাইমান নিজেকে হাফেজ মাওলানা দাবি করলেও বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দলের সঙ্গে ভালোভাবে সম্পৃক্ত না হলেও দলের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপর্কম করেছেন তিনি। বিভিন্ন সময় মাদক সেবন করার পাশাপাশি দেশে বিদেশি বিভিন্ন হোটেল রঙিন জীবনে মজে থাকেন। এছাড়া ‘ক্যাসিনোর চিপস সাল্পাইয়ার’ বলে পরিচিত। ক্যাসিনোর চিপস (ক্যাসিনো খেলার গুটি) সরবরাহ করে অবৈধভাবে অঢেল টাকার মালিক হয়েছে। যেকোনো মূল্য হতে চান আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি। এজন্য ওলামা লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতাকে ২০ লাখ টাকার অফার দিয়েছেন বলে নেতাকর্মীদের মধ্যে খবর প্রচার হয়েছে।

মাওলানা হয়ে দেশে-বিদেশ নারীদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক এবং ওলামা লীগের সভাপতি হতে ২০ লাখ টাকা অফার দিয়েছেন এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. সুলাইমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, আপনি যা শোনেছেন সবই সত্যি। আপনি লিখে দেন। বিদেশে আমার ব্যবসা আছে, ব্যবসার জন্যই আমি বিদেশে যাই।

সম্মেলন প্রস্তুতির কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল মোমেন সিরাজী ঢাকা টাইমসকে বলেন, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন ওলামা লীগের নেতারা। জাতীয় সম্মেলনের আগে প্রতিটি বিভাগে ওলামা লীগের সম্মেলন করা হয়েছে। সংগঠনের মর্যাদা রক্ষায় ওলামা লীগের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্মেলনে উপস্থিত থাকবে।

ওলামা লীগের নেতাকর্মীদের দাবি, সংগঠনের মধ্য থেকে ত্যাগী ও ওলামা লীগ করা লোকদের দিয়েই কমিটি করা হোক। কোনো বহিরাগত লোককে ওলামা লীগের নেতা না করলেই খুশি হব। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ওলামা লীগের মধ্য থেকে যাকে দায়িত্ব দেবেন আমরা সংগঠনের স্বার্থে তাদের মেনে নেব। তবে জামায়াত ও হেফাজতপন্থিদের যাতে ওলামা লীগে জায়গা দেয়া না হয়।

(ঢাকাটাইমস/২০মে/জেএ/আরআর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :