ডায়াবেটিস দূরে রাখে ভেষজ ঢেঁড়স

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ মে ২০২৩, ১১:১৩ | প্রকাশিত : ২২ মে ২০২৩, ০৯:০৮

সারা বিশ্বে এখন ডায়াবেটিস ক্যাপিটালে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর নতুন করে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডায়াবেটিস শরীরে বাসা বাঁধলে অনেক কিছু খাবার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। মিষ্টি তো বটেই, সেই সঙ্গে পছন্দের এমন অনেক পদ আছে, যেগুলো থেকে দূরে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়লে চিকিৎসকরা সবজি খাওয়ার উপরেই বেশি জোর দেন। তবে সবজি মানেই সব নয়। যেগুলো খাওয়া যাবে, ঢেঁড়স তার মধ্যে অন্যতম। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ঢেঁড়স ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। এই সবজি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

গবেষণা বলছে প্রতিদিন ৬-৮ টা ঢেঁড়শ খেলে শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে।

নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে ডায়াবেটিস নিয়ে ভয়ে থাকতে হবে না। কারণ এর ভেতরে এমনকিছু উপাদান রয়েছে যা ডায়াবেটিসকে দূরে সরিয়ে আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। শুধু তাই নয় খুব কম ফ্যাট থাকায় ওজন কমানোর ডায়াটে ঢেঁড়স সবজি রাখার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢেঁড়স সিদ্ধ, ভাজা, তরকারির পাশাপাশি ঢেঁড়শ ভেজানো পানিও খেতে পারেন।

ঢেঁড়স ফাইবার, ভিটামিন বি৬ ও ফোলেটে ভরপুর। ভিটামিন বি ডায়াবেটিক স্নায়ুর নানা সমস্যা প্রতিহত করে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণে রাখে হোমোসিস্টেইনের মাত্রা। এই উপাদানটি ডায়াবিটিস বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ঢেঁড়শে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় দুই ধরনের ফাইবারই থাকে। ফাইবার পাচন প্রক্রিয়া ধীর করে। ফলে খাবার খাওয়ার পর ধীরে ধীরে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে। তা ছাড়া ঢেঁড়সে ক্যালোরির মাত্রাও বেশ কম। ফলে অনায়াসে খাওয়া যেতে পারে ঢেঁড়স।

ঢেঁড়স গাছ একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। ঢেঁড়সের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাবেলমোছাস এসসিউলেনটাস। ফুল হয় ৪-৮ সেমি চওড়া। প্রতিটি ফুলে ৫টি পাপড়ি থাকে এবং পাপড়ির রং সাদাটে হলুদ। প্রতিটি পাপড়ির কেন্দ্রে লাল বা গোলাপি বিন্দু থাকে। ঢেঁড়স ফল প্রায় ১৮ সেমি দীর্ঘ, দেখতে ক্যাপসুলের মতো এবং এর ভেতরে অসংখ্য বিচি থাকে।

ঢেঁড়সের আদি নিবাস ইথিওপিয়ার উচ্চভূমি এলাকায়। ঢেঁড়স ইউরোপে লেডিস ফিঙ্গার নামে পরিচিত। ঢেঁড়সকে ইংরেজিতে ওকরা বলা হয়। ওকরা নামটি পশ্চিম আফ্রিকা থেকে এসেছে। আফ্রিকার বান্টু ভাষায় এটাকে বলা হয় কিঙ্গুম্বো। আরবি ভাষায় এর নাম বামিয়া । দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটিকে ভেন্ডি বা ভিন্ডি বলা হয়।

ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। যা ডায়াবেটিসকে দূরে রাখে। এ সবজির গ্লাইসেমিক সূচক কম। তাই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ‘আমেরিকান ডায়াবিটিস অ্যাসোসিয়েশন’-এর মত অনুযায়ী, হাই ক্যালোরি, লো ফ্যাটের এই সবজি ডায়াবেটিসদের জন্য খুবই উপকারী।

ঢেঁড়সের ভেতর রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, ভিটামিন এ, সি এবং ফলেট। সেই সঙ্গে রয়েছে ভিটামিন কে, বি, আয়রন, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, মেঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিটা ক্যারোটিন। সবকটি উপাদান একযোগে ডায়াবেটিস, অ্যাস্থেমা, অ্যানিমিয়া, ক্যানসারসহ একাধিক রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ঢেঁড়স কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

তবে ঢেঁড়স খেলেই হবে না। ডায়াবেটিস রোগীদের যে হেতু সব ক্ষেত্রেই বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়, ফলে ঢেঁড়স খাওয়ার ক্ষেত্রেও মানতে হবে নিয়ম। কী ভাবে ঢেঁড়স খেলে সুফল পাবেন?

যেভাবে বানাবেন ঢেঁড়স ভেজানো পানি। প্রথমে ৪-৫টি ঢেঁড়স ভাল করে ধুয়ে মাথা কেটে বাদ দিন। তারপর সবকটি ঢেঁড়স লম্বালম্বিভাবে কেটে ফেলুন। এবার একটি কাঁচের জারে তিন কাপ পানি ঢেলে তাতে ঢেঁড়সগুলো সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ওই পানির মধ্যেই ঢেঁড়সগুলো ভাল করে চিপে অতিরিক্ত পানিটা বার করে ফেলে দিন ঢেঁড়সগুলো। এই পানি পান করলেই ডায়াবেটিস জব্দ হবে।

বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন মানুষের শরীরের সুগার লেভেল যখন বাড়ে সেই সময়ে ঢেঁড়সের বীজ খাওয়ার পর অবিশ্বাস্যভাবে সুগারের মাত্রা কমে যায়। কারণ ১০০ গ্ৰাম ঢেঁড়সের মধ্যে ক্যালোরির পরিমাণ মাত্র ৩৩। এই কারণেই এই খাবারকে অ্যান্টি ডায়াবেটিক খাবার বলা হয়ে থাকে।

সাধারণত খাওয়া দাওয়ার মানুষের রক্তে সুগারের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যায়। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিন্তু ঢেঁড়স খেলে এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। তাই অনেক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন, যারা ডায়াবেটিসের আগের স্টেজ আছেন বা ডায়াবেটিস রোগে সবেমাত্র আক্রান্ত তারা কিন্তু ঢেঁড়স খেয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।

দুশ্চিন্তার আধিক্যের জন্য ডায়াবেটিস রোগ চেপে বসে। এমনকি স্ট্রেস থেকে রক্তে সুগারের মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই দুশ্চিন্তা ও অত্যাধিক মানসিক চাপ থেক রেহাই একান্ত জরুরি। বিশেষজ্ঞ দের মতে এক্ষেত্রেও ঢেঁড়সের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। ঢেঁড়সে আছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেসকে কমাতে সাহায্য করে। এই স্ট্রেস কমলে আমাদের রক্তে সুগারের মাত্রা সহজে ওঠানামা করতে পারে না।

রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে তা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। হার্টের রোগের সমস্যা ও ডায়াবেটিস মিলে বড় সর্বনাশ করতে পারে যেকোনো রোগীর। তাই সুগারের মাত্রা ঠিক রাখার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ। ঢেঁড়সে কোনোরকম স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা কোলেস্টেরল থাকে না। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টই কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

ঢেঁড়সের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের ক্লান্তি দূর করে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে কাজের শক্তি আনতে ক্লান্তি দূর করা একান্ত প্রয়োজন। আর তার সমাধান লুকিয়ে ঢেঁড়সে। এটি ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি কার্ডিও ভাসকুলার ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে যা শরীরকে সচল ও সতেজ রাখতে অত্যন্ত প্রয়োজন।

ঢেঁড়সে রিবোফ্লাবিনের পরিমাণ বেগুন, মুলা ও টমেটোর চেয়ে বেশি আছে। এটা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পেটের প্রস্রাব ও পায়খানা পরিষ্কার করতে ঢেঁড়শের অনেক গুণ । খুসখুসে কাশিতেও উপকার করে এই সবজিটি। হজমশক্তি বাড়ায়, বাতের প্রকোপ কমায়। ডায়বেটিসের জন্য অনেক উপকারী। প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্ষরণ দূর করে এই ঢেঁড়স।

গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ তৈরির জন্য ভালো ঢেঁড়স গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের মস্তিষ্ক তৈরিতে সাহায্য করে, মিসক্যারেজ হওয়া প্রতিরোধ করে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে এর ফলেট উপাদানটি গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশে সাহায্য করে।

ঢেঁড়স কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। ঢেঁড়সের উচ্চমাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে।

নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে সহজেই রক্তশূন্যতা দূর হয়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে এর ফলেট উপাদানটি গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশে সাহায্য করে।

ঢেঁড়সে আছে বেটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, লিউটিন যা চোখের গ্লুকোমা, চোখের ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

গলগণ্ড রোগ দূর করে ঢেঁড়স। আয়োডিনের অভাবে সৃষ্ট গলগণ্ড- রোগ এবং মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ড- দুর্বলতার প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর। প্রতিটি ঢেঁড়সে রাইবোফ্লাভিনের পরিমাণ বেগুন, মুলো, টমেটো আর শিমের থেকে বহুগুণ বেশি।

এছাড়া কিডনি ভাল রাখতে প্রতিদিনই ঢেঁড়স খাওয়া উচিৎ। শরীর ভাল রাখতে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই সঙ্গী করে নিন ঢেঁড়সকে আজ থেকেই ৷

(ঢাকাটাইমস/২২ মে /আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :