কমছে পেঁঁয়াজের দাম, তবে হতাশ সালথা-নগরকান্দার কৃষকরা

নুরুল ইসলাম, সালথা-নগরকান্দা (ফরিদপুর)
  প্রকাশিত : ২৩ মে ২০২৩, ১০:১৮| আপডেট : ২৩ মে ২০২৩, ১২:২২
অ- অ+

হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় হিমশিম খাচ্ছিলেন ক্রেতারা। কয়েকদিন না যেতেই কমতে শুরু করেছে দাম। তবে এতে হতাশ ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার কৃষকরা।

পেঁয়াজের দাম বাড়ায় মুখে হাসি ফুটেছিল কৃষকদের। কিন্তু হঠাৎ করে পেঁয়াজ আমদানির খবরে দাম কমতে শুরু করায় হতাশ হয়েছেন তারা। যে কারণে হাসির বদলে তাদের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা যাচ্ছে।

কৃষকদের দাবি, বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়ছে, তা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই, শুধু পেঁয়াজের দাম বাড়লে সবার মাথা ব্যথা। তবে পেঁয়াজের দাম কমায় বেজায় খুশি হয়েছেন ভোক্তারা।

জানা গেছে, সালথা-নগরকান্দার প্রধান অর্থকড়ি মসলা জাতীয় ফসল হচ্ছে হালি পেঁয়াজ। এবারও সালথা-নগরকান্দায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষাবাদ করা হয়েছে। এখানকার কৃষকরা পেঁয়াজ চাষ করে বছরের অর্থনৈতিক চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। তাদের বছরজুড়ে ভালো থাকা না থাকা পুরোটাই নির্ভর করে পেঁয়াজের দামের ওপরে। গত বছর পেঁয়াজের দাম ভালো না পেয়ে পুরো বছরই অতিকষ্টে জীবনযাপন পার করেছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

সালথার সোনাপুর গ্রামের কৃষক সোহেল মোল্যা ও নগরকান্দার বিনোকদিয়া গ্রামের হালিম শেখ জানান, অতিবৃষ্টির কারণে এই বছর অনেকের ক্ষেতের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। আবার পেঁয়াজের ফলনও অন্যান্য বছরের তুলনায় কম হয়েছে। তবে মাসখানেক আগে পেঁয়াজ উত্তোলনের পর পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। গত সপ্তাহেও প্রতিমণ পেঁয়াজ ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছিল। কিন্তু পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর কয়েকদিন ধরে উভয় উপজেলার হাট-বাজারে একবারে মণপ্রতি পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কম দরে বিক্রি হয়েছে। যে কারণে কৃষকের হাসিমাখা মুখ মলিন হয়ে গেছে।

সোমবার সকালে সরেজমিনে সালথার বালিয়া বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে ভারতের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। তবে কয়েক দিনের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম কমে যায়। তবে আমদানির আগেই হঠাৎ এমন দরপতনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কৃষকরা। এদিকে পেঁয়াজের দাম কমায় বাজারে আসা ভোক্তারা অনেক খুশি। তাদের দাবি, বর্তমান বাজার মূল্য বজায় থাকলে সবার জন্যই ভালো।

বালিয়া বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা কৃষক হাফেজ মাতব্বর বলেন, গত বছর পেঁয়াজ চাষ করে লোকসান হয়েছে আমাদের। এবার ফলন তেমন ভালো পাইনি। এর মধ্যে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময় পেঁয়াজের দাম ভালো পেয়ে স্বস্তি ফিরেছিল আমাদের মধ্যে। এক সপ্তাহ আগেও একমণ পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৩ হাজার টাকা দরে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেই পেঁয়াজ একমণ বিক্রি করেছি ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা দরে। তবে আজকে ২৬০০ টাকা করে মণ বিক্রি করেছি। আজ ভালো দাম পেয়েছি। দাম এমন থাকলে কৃষকদের জন্য ভালো হয়।

মনির মোল্যা নামে আরেক কৃষক বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেপরোয়াভাবে বাড়ছে, তাতে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু কৃষকের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফসলের দাম বাড়লে সবাই পাগল হয়ে যায়। এটা কেউ চিন্তা করে না, কৃষক বাঁচলে, দেশ বাঁচবে। আমাদের কথা কেউ চিন্তা করে না। আমরা কত টাকা খরচ করে কত টাকার ফসল পাই, তাও হিসাব করে না কেউ। যত বিপদ যেন আমাদেরই মোকাবেলা করতে হবে।

সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জীবাংশু দাস বলেন, বর্তমান বাজারে কৃষকরা পেঁয়াজের দাম ভালো পাচ্ছে। দাম কিছুটা কম বেশি হচ্ছে, এটা ঠিক। এতে তেমন সমস্যা নেই বলে ধারণা। পেঁয়াজের দাম ভালো পেলে কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে উৎসাহিত হবে। তবে ভোক্তাদের বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত। দাম সহনীয় পর্যায় থাকলে ভোক্তাদেরও বিপাকে পড়ার সম্ভাবনা নেই।

(ঢাকাটাইমস/২৩মে/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা