ইউটিউব দেখে আমের বাগান করে সফল ভিপি মালেক

রাজবাড়ী জেলা সদরের চন্দনী ইউনিয়নের ৫০ বছর বয়সী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ভিপি মোহাম্মদ আব্দুল মালেক শিকদার। নিজের আড়াই একর জমিতে আম বাগান করে সফলতার মুখ দেখেছেন তিনি।
রাজশাহী ও নওগা থেকেও সুমিস্টি ও সুস্বাদু আমের চাষ হচ্ছে রাজবাড়ীতে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এখন রাজবাড়ীতেও আম কিনতে আসছেন।
চলতি মৌসুমে তার আড়াই একর জমিতে তিন শতাধিক আম গাছে প্রচুর আম ধরেছে। উন্নত জাতের আম বাগান করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন তিনি।
মোহাম্মদ আব্দুল মালেক শিকদার জেলা সদরের চন্দনী ইউনিয়নের জৌকুড়া গ্রামের আব্দুল খালেক শিকদারের ছেলে। তিনি চন্দনী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, চলতি মৌসুমে রাজবাড়ী জেলার ৫ উপজেলায় ৪৮০ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে জেলা সদরে ২৫৫ হেক্টর, কালুখালী উপজেলায় ১১০ হেক্টর, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৪৫ হেক্টর, গোয়ালন্দ উপজেলায় ১০ হেক্টর ও পাংশা উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করেছেন চাষিরা। যার প্রতি হেক্টর জমিতে ১১ মেট্রিকটন আমের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
সরেজমিনে চন্দনী ইউনিয়নের শৌখিন আম চাষি মোহাম্মদ আব্দুল মালেক শিকদারের বাগানে দেখা যায়, তার প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ধরে আছে আম্রপালি, হিম সাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, বারি ফোরসহ বিভিন্ন উন্নত সুমিষ্ট জাতের বড় বড় আম। বাগানেই আম কিনতে এসেছেন অনেক ক্রেতা।
মোহাম্মদ আব্দুল মালেক শিকদার ঢাকাটাইমস বলেন, ২০১৮ সালে আমি ইউটিউবে দেখি অনেক কৃষি উদ্যেক্তা উন্নত জাতের আমের বাগান করে ভালো ফলন ও লাভবান হচ্ছেন। তারপরে আমি বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়িয়ে খোজ খবর নিয়ে চন্দনী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে ডাউকি গ্রামে আড়াই একর জমির উপরে তিন শতাধিক আমের গাছ রোপণ করি। এ বছর আল্লাহর রহমতে প্রতিটি গাছে ব্যাপক ফলন হয়েছে। আনুমানিক হিসেবে প্রতিটি গাছে ৩০ থেকে ৪০ কেজি আম আছে।
সে হিসেবে তিন শতাধিক গাছে দুইশ থেকে আড়াইশ মণ আমের ফলন পাব বলে আশা করছি। প্রতি কেজি আমের দাম যদি ৫০ টাকা কেজি ধরি তাহলে এই বাগানে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার আম বিক্রি করব ইনশাআল্লাহ। উন্নত জাতের আম চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। আমার সফলতা দেখে এই গ্রামের অনেকেই আমের বাগান করেছেন।
তিনি জানান, আমার এই বাগানে ভালো মানের আম্রপালি, হাঁড়িভাঙ্গা, মল্লিকা, ফজলি, হিমসাগর, ল্যাংড়াসহ আরও অনেক উন্নত জাতের আম রয়েছে। আমি আমার এই বাগানে কোনো প্রকারের ক্ষতিকারক ওষুধ বা কীটনাষক প্রয়োগ করিনি। তাই সকলের কাছে আমার বাগানের আমের সুনাম রয়েছে। আমি বাগানে সূলভ মূল্যে আম বিক্রি করি।
বাগানে আম কিনতে আসা ক্রেতা দুলাল ফকির বলেন, আগে বাজার থেকে আম কিনতাম। সেগুলোতে অনেক সময়ে পোকা থাকতো। এখন আমাদের এখানে স্থানীয় অনেক আমের বাগান হয়েছে। বাগানে এসে সরাসরি আম ক্রয় করছি। রাজবাড়ী জেলার বাগনের আমগুলো অনেক স্বাদ। দামও মোটামুটি হাতের নাগালে। আমরা এখন ভালো মানের আম কিনতে পেরে অনেক খুশি।
আমের ব্যাপারী শুকুর আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা প্রতি বছর এখন রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন গ্রামের আম বাগান ধরে ক্রয় করি। সঠিক সময়ে আম গাছ থেকে সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারসহ আশপাশের কয়েকটি জেলাতে বিক্রি করি। সারা দেশে রাজবাড়ী জেলার আমের সুনাম দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক চাষিই আম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসের চন্দনী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার নারায়ন মন্ডল ঢাকা টাইমসকে বলেন, রাজবাড়ী জেলার মাটি আম চাষের জন্য উপযোগী। চন্দনী ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক আমের চাষাবাদ করেছেন। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আব্দুল মালেক শিকদার অন্যতম। তিনি আম চাষে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। তার দেখাদেখি অনেকেই আম চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
আরও পড়ুন: একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিকটিও ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত আম চাষিদের নানাবিধ প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি আগামীতে এই অঞ্চলে আমের চাষাবাদ আরও বাড়বে।
(ঢাকাটাইমস/৩১মে/এসএম)

মন্তব্য করুন