সরকারি পাটের বীজ নষ্ট হচ্ছে কৃষকদের বাড়ি ও ইউপির গুদামে, এখনো সার পাননি কেউ

অর্থকরী ফসল পাটের উৎপাদন বাড়াতে প্রতিবছর চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ ও সার বরাদ্দ দিয়ে আসছে সরকার। কিন্তু এবার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) থেকে বিনা মূল্যে যে পাটের বীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা চাষ করতে আগ্রহী নন পাট উৎপাদনে বিখ্যাত ফরিদপুরের সালথা-নগরকান্দার কৃষকরা। যে কারণে গতবার কিছু কৃষক প্রণোদনার বীজ চাষ করলেও এবার বেশিরভাগ কৃষক বীজ গ্রহণ করেনি। আবার যারা বীজ সংগ্রহ করেছে, তাদের অধিকাংশই জমিতে বপণ না করে ঘরে রেখে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে বস্তাভর্তি সরকারি এসব পাটের বীজ নষ্ট হতে দেখা গেছে।
এদিকে এবার এখন পর্যন্ত প্রণোদনার সারও পায়নি উভয় উপজেলার কৃষকরা।
কৃষকদের দাবি, সরকার যেসব দেশীয় লাল পাটের বীজ দিচ্ছে তা তাদের জমিতে টেকসই না। ফলনও তেমন ভাল হয় না। সরকার যদি ভারতীয় জিআরও-৫২৪ জাতের সবুজ পাটের বীজ বরাদ্দ দেয়, তাহলে কৃষকরা উপকৃত হবে।
সংশ্লিষ্ট পাট উন্নয়ন অফিস সুত্রে জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবারও সালথায় ৩ হাজার ও নগরকান্দায় ৩ হাজার কৃষকের জন্য মোট ৬ হাজার কেজি পাটের বীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মূল্য ১২ লাখ টাকা। একই সঙ্গে প্রত্যেক কৃষককে ১২ কেজি করে সার দেওয়ার কথা। এর মধ্যে গত মার্চ মাসের ১৫ তারিখে পাটের বীজ আনুষ্ঠানিকভাবে বিতরণ দেখানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরাদ্দ পাওয়া ৬ হাজার কৃষকের মধ্যে সর্বোচ্চ ১ হাজার কৃষক সরকারি পাটের বীজ বপণ করেছেন। তবে সার এখনও বিতরণ করা হয়নি।
সম্প্রতি সালথার আটঘর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদের গোডাউনে ৪০০ কেজি (৮ বস্তা) পাটের বীজ পড়ে রয়েছে। বেশিরভাগ বীজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
গোডাউনে সরকারি পাটের বীজ পড়ে থাকার বিষয় ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল হাসান খান সোহাগ বলেন, এসব বীজ কোনো কৃষক নিতে চায় না। কৃষকদের অভিযোগ এসব বীজের পাট ভাল হয় না। তাই তারা এসব বীজ নিতে আগ্রহী নন। এখন আমরা কী করবো? কৃষকরা যদি বীজ না নেয়, তাহলে জোর করে তো দেওয়া যাবে না।
সোনাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. খায়রুজ্জামান বাবু বলেন, এবার প্রণোদনার পাটের বীজ বিতরণ নিয়ে চরম বিপাকে পড়লেও আমার ইউনিয়নের বরাদ্দকৃত সব বীজই বিতরণ করা হয়েছে। তবে কৃষকরা এসব বীজ নিয়ে ঘরে রেখে দিয়েছে বলে শুনেছি। আর এবার এখনও প্রণোদনার সার আসেনি।
গট্টি ইউনিয়নের কৃষক হাফেজ মোল্লা বলেন, সরকারি বীজ যখন বিতরণ করা হয়, তখন বেশিরভাগ কৃষক জমিতে কিনা পাটের বীজ বপণ করে ফেলে। সরকারি বীজ দেয় মার্চ মাসে আর আমরা বীজ বপণ করি ফেব্রুয়ারি মাসে। আগেভাগে বীজ বপণ না করলে বর্ষা সময় সমস্যায় পড়তে হয়। তাছাড়া সরকারি বীজ চাষ করে দেখেছি, আঁশ ভাল হয় না। পাটকাঠিও নরম হয়। আমার ঘরেও এক প্যাকেট বীজ রয়েছে। এবার সবাই ভারতীয় জিআরও-৫২৪ জাতের পাটের বীজ কিনে চাষ করছে। সরকার যদি ভারতীয় পাটের বীজ দেয়, তাহলে আমাদের নিতে সমস্যা নেই।
গোয়ালপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল সত্তার শেখ বলেন, গত বছর সরকারি দেশীয় লাল পাটের বীজ বপণ করেছিলাম। কিন্তু পাটের ফলন তেমন ভাল হয়নি। গাছও নরম হয়। জাগ দেওয়ার পর নরম গাছগুলো ভেঙ্গে যায়। তাই এবার আর সরকারি পাটের বীজ নেইনি। সরকার যদি ভারতীয় সবুজ পাটের বীজ দেয়, তাহলে আগামীবার থেকে নেবো।
সালথা উপজেলা উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, সালথায় ৩ হাজার কেজি পাটের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র আটঘর ইউনিয়নে ৪০০ কেজি পাটের রয়ে গেছে। এসব বীজ ফেরত দেওয়া হবে। অনেকেই এসব বীজ দিয়ে পাট চাষ করছেন। তবে শুনেছি অনেকে ঘরেও রেখে দিয়েছেন। এখন কৃষকরা যদি আমাদের কাছ থেকে বীজ নিয়ে ঘরে রেখে দেয়, তাহলে আমরা কী কবরো। তবে বীজ পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছি। আর সার এখনো এসে পৌঁছায়নি।
নগরকান্দা উপজেলা উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নগরকান্দায় ৩ হাজার কৃষককে পাটের বীজ দেওয়া হয়েছে। অনেকে এই বীজ ঘরে রেখে দিছে বলে শুনেছি। আমরা সেসব পাটের বীজ দেই, এগুলো যদি বপণের ১২০ দিন পর পাটের গাছ কাটে, তাহলে ভারতীয় বীজের চেয়ে আমাদের দেশীয় বীজের পাট ভাল হয়। কিন্তু আমাদের এলাকার চাষিরা ১০০ দিনের মধ্যে পাট কেটে ফেলে, যে কারণে পাটের আঁশ খারাপ হয় ও গাছ নরম হয়। তবে কৃষকদের অভিযোগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আর সার এখনও আসেনি।
ফরিদপুর জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা তারেক লুতফর আমিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, এবার সালথা ও নগরকান্দায় ৬ হাজার কৃষককে সরকারি পাটের বীজ বিতরণ করার পরপরই কৃষি অফিস থেকেও প্রায় ৫ হাজার কৃষককে পাটের বীজ দেওয়া হয়। যে কারণে অনেকে আমাদের বীজটা বপণ করেনি। তবে কয়েকদিন আগে সালথায় ৭৫ জন পাটচাষিকে প্রশক্ষিণ দেওয়া হয়। সেখানে চাষিদের কাছে বীজ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। তখন তারা কেউ অভিযোগ করেনি। সরকারি পাটের বীজের জীবনকাল হচ্ছে ১২০ দিন। কিন্তু চাষিরা আগেরভাগে পাট কেটে ফেলানোর কারণে ফলন খারাপ হয়।
আরও পড়ুন: মিতু হত্যা: চার্জশিটভুক্ত আসামি কালু গ্রেপ্তার
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, সরকারি বীজটা দেশের কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে। পরে সেই বীজ শুকিয়ে প্যাকেটজাত করতে মার্চ মাসের ৮-১০ পার হয়ে যায়। যেকারণে বীজটা বিতরণ করতে দেরি হয়। আগামীতে আগেরভাগে বীজ দেওয়া চেষ্টা করবো। আর সারও বরাদ্দ আসছে। হয়তো সপ্তাহখানেকের মধ্যে কৃষকদের মাঝে সার পৌছায় দেওয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/০৩জুন/এসএম)

মন্তব্য করুন