লিগ্যাসি ফুটওয়ার, আলিফ ইন্ড্রাস্ট্রিজ শেয়ার দরে সমানে কারসাজি, জড়িত কারা?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৭ জুন ২০২৩, ২২:১১ | প্রকাশিত : ০৭ জুন ২০২৩, ২০:০৮

লিগ্যাসি ফুটওয়ার ও আলিফ ইন্ড্রাস্ট্রিজ শেয়ার দরে সমানে কারসাজি চলছে। বছরের পর বছর ধরে খারাপ ইপিএস ও নামমাত্র ডিভিডেন্ট বা লভ্যাংশ দেওয়া কম মৌলভিত্তির দুর্বল কোম্পানি দুটি ছক কষে দাম বাড়াচ্ছে শেয়ারের। এমন অভিযোগই তুলেছেন বিনিয়োগকারীসহ বাজারসংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, উল্লেখযোগ্য কোনো মেরিট না থাকলেও দুর্বল এ প্রতিষ্ঠান দুটির শেয়ারদর মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। গ্যাম্বলিং বা কারসাজি করেই এটি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ একাধিক বিনিয়োগকারীর। ফলে প্রশ্ন আসছে—জড়িত কারা?

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, খোদ মালিক পক্ষ ও ‘এম’ আদ্যাক্ষরের একজন গ্যাম্বলার, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কোনঠাসা হয়ে ছিলেন, কারসাজির দায়ে বিভিন্ন সময়ে গুনেছেন জরিমানা, তিনিই আবার তেড়েফুড়ে তৎপর হয়ে উঠেছেন বাজারে। কারসাজির ছক নিয়েই কোমর বেঁধে নেমেছেন পুঁজিবাজারের অর্থ হাতাতে।

ইতোমধ্যেই তিনি বেশকিছু দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দরে কারসাজি করে অতি উচ্চ দর তুলেছেন। এর মধ্য দিয়ে পুঁজিবাজারের ওই খেলোয়ার নিজে আর্থিক লাভবান হয়েছেন। আর এরই মধ্যে তার ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা। ওই গ্যাম্বলার নামে-বেনামে বিও অ্যাকাউন্ট খুলে বিশেষ ছক নিয়ে মাঠে রয়েছেন।

ঢাকা টাইমসের অনুসন্ধান বলছে, এ ধরনের কতিপয় গ্যাম্বলার ও মালিকপক্ষ যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে কম মৌলভিত্তির দুর্বল কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ করছে। টানছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরও। এ কারণে কম মৌলভিত্তির শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ তুলনামূলক বেশি। সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরও প্রলুব্ধ করা হচ্ছে। আকৃষ্ট করা হচ্ছে বিভিন্ন কৌশলে। আর ভালো ক্যাশ ডিভিডেন্ট (লভ্যাংশ) দেওয়া মৌলভিত্তির প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তেমন একটা যাচ্ছেন না।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য-উপাত্ত বলছে, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার শেয়ার বাজারে আসে ২০১৭ সালে সালে। ২০২১ সাল ও ২০২২ সালের কোনো ডিভিডেন্ট কোম্পানিটি দিতে পারেনি। আর ২০২০ সালের লাভের ওপর ২০২১ সালে মাত্র ১% ক্যাশ ডিভিডেন্ট দিয়েছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। আর ২০১৯ সালে দিয়েছে ৫% ক্যাশ ডিভিডেন্ট। গত ৭ মে এর শেয়ার দর ছিল ৬৫.৯০ টাকা। যা ৪ জুন ১০৬ টাকা ১০ পয়সা এবং বুধবার ১১০ টাকা ৬০ পয়সায় পৌঁছেছে।

একইভাবে আলিফ ইন্ডান্ট্রিজের শেয়ার ২৫ মে ছিল ৫৩ টাকা ৪০ পয়সা। তবে ৭ জুন বুধবার এর দর ওঠে ৮০ টাকা ২০ পয়সা। শেয়ার বাজারে এসে ২০১৭ সাল থেকে ক্যাশ ডিভিডেন্ট দিচ্ছে এ কোম্পানিটি। ২০২২ সালে দিয়েছে ১২% ক্যাশ, ২০২১ সালে ১০% ও ২০২০ সালে ৫%। বুধবার কোম্পানিটির শেয়ার ২.৯৫ শতাংশ (পার্সেন্ট) ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে।

অথচ মৌলভিত্তির বড় মূলধনি কোম্পানি রেকিট বেনকিজার, যারা ২০২১ সালে ক্যাশ ডিভিডেন্ট দিয়েছে ৯৮০%। আগের বছর দিয়েছে ১৬৫০%। সেই কোম্পানির শেয়ারের বুধবার দাম কমেছে ৬৫ শতাংশ। যারা গত তিন বছর ধরে গড়ে ১০০% থেকে ১২০০% বা এর বেশি ডিভিডেন্ট ক্যাশ দিয়ে এসেছে, সেসব শেয়ারের দর বাড়ছেই না। কোনোটি কচ্ছপ গতিতে এগোচ্ছে, কোনো শেয়ার ঘুমিয়ে আবার কোনোটির দাম পড়ছেই।

এর আগে ২০১৭ সালের মে থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত লিগ্যাসি ফুটওয়্যার কারসাজি করেছে বলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির তদন্তে প্রমাণিত হয়। এরপর ২০১৯ সালে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লিমিটেডসহ ১৫ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে সতর্ক করে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে কমিশন।

বিএসইসি ও ডিএসইসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, এ কারসাজির সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও কোম্পানির কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত। এ পর্যন্ত যেসব কারসাজির তদন্ত হয়েছে, সেসব তদন্তে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

গ্যাম্বলিংয়ে জড়িত কথিত বিনিয়োগকারীদের সিন্ডিকেটগুলোই দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি করে রাতারাতি দাম বৃদ্ধি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ হাতানোর ফাঁদ পেতে থাকে।

বুধবার শেয়ারবাজার ঘুরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা কারসাজিচক্রের কাছে অসহায় বলে জানান। কারসাজিকারীদের নিয়ে বিনিয়োগকারীদের যত ভয়।

জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন বিনিয়োগকারী ঢাকা টাইমসকে বলেন, তার কয়েক লাখ টাকা শেয়ারবাজারে খোয়া গেছে। এখন পুঁজিবাজার ছাড়তেও পারছেন না। আবার শেষ সম্বলটুকুও যদি চলে যায় তার এই ভয়ও আছে।

‘শেয়ারবাজারে বুঝে ইনভেস্ট (বিনিয়োগ) করতে পারলে লাভ হয়। কিন্তু এটা বোঝার আগেই তো আমার মতো বিনিয়োগকারীরা সব হারিয়ে ফেলে। কর্তৃপক্ষ শক্তভাবে গ্যাম্বলারদের নির্মূল করলে আমাদের ভয় থাকবে না’—যোগ করেন এ বিনিয়োগকারী।

বিনিয়োগকারী ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারটা চাঙ্গা আছে, ভালো লাগছে। সাবধানে বিনিয়োগ করছি। যেন গ্যাম্বলারের হাতে না পড়ে যাই।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ বলছে, কারসাজির বিষয়ে তাদের কড়া নজর রয়েছে। এ কারণে শেয়ারবাজার আগের তুলনায় সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে।

ডিএসইর উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের দর বৃদ্ধির বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ডিএসইতে কারসাজির বা গ্যাম্বলারদের কোনো স্থান নেই। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করতে ডিএসই প্রধানসহ কর্তৃপক্ষ আন্তরিক।’

আর বিএসইসির কমিশনার ড. শামসুদ্দিন আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মৌলভিত্তি সম্পন্ন শেয়ার বোঝাতে নানামুখী উদ্যোগ কমিশন গ্রহণ করেছে। আর পুরনো গ্যাম্বলারদের দিকে নজর রয়েছে। যাতে কোনো পক্ষ যোগসাজশ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লোভের ফাঁদে ফেলে সর্বনাশ করতে না পারে।’

ইতোমধ্যেই তিনটি কোম্পানির বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার কথা জানিয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, কমিশন চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশে আমাদের উইংগুলো অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি পাওয়া শেয়ারগুলোর বিষয়ে নিয়মিত পর্যালোচনা অব্যাহত রেখেছে। কমিশনের নিজস্ব মনিটরিং রয়েছে। পাশাপাশি গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্রে যেসব কোম্পানির বিষয় উঠে আসে বা আমাদের দৃষ্টিতে আসে, আমরা সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক কাজ শুরু করি। কমিশনের লক্ষ্যই হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ উপযোগী শেয়ারবাজার গঠন।’

(ঢাকাটাইমস/০৭জুন/আরআর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

ঢাবির কেমিস্ট্রি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক কামরুল, সম্পাদক আফতাব আলী

বিডিবিএল-সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি

প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রথম প্রান্তিক ব্যবসায়িক সম্মেলন

তিন উৎসবে রঙিন এনআরবিসি ব্যাংক

নারীর অধিকার আদায়ে ইসলামী ব্যাংকের মুদারাবা মোহর সঞ্চয়ী হিসাব

রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা

ব্যাংক এশিয়া কিনে নিচ্ছে পাকিস্তানি আলফালাহ ব্যাংক

এনসিসি ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মধ্যে চুক্তি

এক্সিম ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন মইদুল ইসলাম

ডিএমডি হলেন অগ্রণী ব্যাংকের শামিম উদ্দিন আহমেদ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :