নিয়মিত শরীরচর্চায় দূর হবে বহু মারাত্মক রোগের ঝুঁকি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১০ জুন ২০২৩, ০৯:২৯| আপডেট : ১০ জুন ২০২৩, ১২:৩০
অ- অ+

সুস্থ থাকতে শরীরচর্চার সত্যিই কোনো বিকল্প নেই। শরীরচর্চা বা ব্যায়াম মানবদেহের জন্য অনেক উপকারী। এর ফলে শরীরের বাড়তি মেদ কাটে, কাজ করার ক্ষমতা বাড়ে, শারীরিক সক্ষমতা ও শক্তি বাড়ে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মন প্রফুল্ল থাকে।

বিভিন্ন উপায়ে এরূপ বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন হতে পারে। যেমন ব্যায়ামাগার বা জিমে গিয়ে, মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে, সাঁতার কেটে, যোগাসন করে, শারীরিক পরিশ্রম করে এবং এরূপ বা অনুরূপ যেকোনো পদ্ধতিতে। তবে ক্যালরি ক্ষয় এবং শারীরিক সচলতা চাই-ই চাই! সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু লাভের মৌলিক অনুষঙ্গ হিসেবে এর কোনোই বিকল্প নেই। এমনকি বয়োবৃদ্ধদের ক্ষেত্রেও নিয়মিত ব্যায়াম জরুরি। তবে উপরোক্ত কঠিন পদ্ধতিতে নয়; হাঁটাচলা, যোগাসন, আকুপ্রেশার বা অন্যকোনো থেরাপিউটিক পদ্ধতিতে।

নিয়মিত ব্যায়াম অনুশীলনের ফলে শারীরিক সুস্থতা, মানসিক সচেতনতা, রোগ নিরাময়, রোগ প্রতিরোধ ছাড়াও আরো কত বিষয়ে যে উপকারলাভ করা যায়, তার ইয়ত্তা নেই। এমনকি নিয়মিত ব্যায়াম করলে ক্যানসারের মৃত্যুর ঝুঁকি কমার পাশাপাশি এর চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হ্রাস পায়।

তাছাড়া ব্যায়ামের সঙ্গে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও অটিজম দূর হওয়ার সম্পর্কও খুঁজে পেয়েছেন নেদারল্যান্ডসের একদল বিজ্ঞানী। তারা বলছেন অটিজম বা লার্নিং ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুর সমস্যা দূর করতে ঘাম ঝরানো ব্যায়াম হতে পারে একটি চিকিৎসা। একইসঙ্গে নিবিড় ব্যায়াম শিশু থেকে শুরু করে ৩৫ বছরের যুবক পর্যন্ত যেকোনো মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাও বাড়ায়।

ব্যায়াম অনুশীলন না করার ফলে কেউ মুটিয়ে যায়, অল্প বয়সেই রোগ-শোকে আক্রান্ত হয়ে মনের বার্ধক্যে উপনীত হয়। অন্যদিকে ঐ একই বয়সি মানুষ নিয়মিত ব্যায়াম করে স্মার্ট, চৌকস, সুঠামদেহী ও চিরসবুজ জীবনযাপন করতে থাকে। ছোটবেলা থেকে নিয়মিত যোগাসন ও ব্যায়াম অনুশীলনের মাধ্যমে অনেকে সুস্থ ও আনন্দঘন জীবনযাপনই শুধু করে না, বহুক্ষেত্রে সাফল্যও ছিনিয়ে আনে; যা ঘটে থাকে খেলোয়াড় ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের জীবনে।

ব্যায়ামের ফলে শরীর থেকে প্রচুর গ্লুকোজ ও তরল বের হয়ে যায়। তাই ব্যায়ামের পর এমন খাবার খাওয়া উচিত, যা ধীরে ধীরে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করবে। কিন্তু যদি এমন খাবার খাওয়া হয়, যা শরীরে কেবল চর্বি ও লবণ বাড়াবে, তাহলে তা শরীরকে গ্লুকোজ আর পানি গ্রহণে বাধা দেবে; এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

ব্যায়ামের পরপরই চর্বি ও লবণযুক্ত যেসব খাবার খাওয়া উচিত নয় তা হলো পনির, প্রক্রিয়াজাত মাংস, বেকন, সালামি, সসেজ, সেরিয়ালস, রুটি, ফলের রস, ডিমভাজি, মিল্কশেক, কাঁচা সব্জি ইত্যাদি।

নিজ বাগানে শরীরচর্চার মাধ্যমে নিশ্চিত সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুলাভ আপনার বাড়ির আঙিনায় বা আশপাশে একটি বাগান তৈরি করে তার পরিচর্যা নিজ হাতে রাখলেই আপনি স্বাস্থ্যের দিক থেকে ভীষণ সমৃদ্ধ ও সুখী মানুষ বনে যেতে পারেন সহজে। কারণ এই একটি বাগান আপনাকে যেমন সৃজনশীলতা, সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক চর্চায় নিয়োজিত করে রাখবে; তেমনি মানসিক চাপ, অবসাদ ও হতাশা দূর করে আপনাকে কর্মক্ষম, কর্মদ্যোগী, সুস্থ-সবল ও দীর্ঘায়ুর নিশ্চয়তা দেবে।

ঔষধ হিসেবে ভাবলে ব্যায়ামের নিরাময় ক্ষমতা বিস্ময়কর। নিয়মিত ব্যায়াম ও নড়াচড়ায় ঠান্ডা-সর্দির মাত্রা কমে যায় বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এর পাশাপাশি স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে ২৭ শতাংশ, ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে ৫০ শতাংশ, উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি কমে প্রায় ৪০ শতাংশ, ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় ৫০ শতাংশ, কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ৬০ শতাংশেরও বেশি, আলঝেইমারস হওয়ার ঝুঁকি কমায় ৪০ শতাংশ; বিষণ্নতা কমায় ঠিক যেমন কমে ঔষধ বা বিভিন্ন থেরাপি নিলে।

পুষ্টিবিদ থেকে চিকিৎসক, সকলের একটাই পরামর্শ— নিয়ম করে শরীরচর্চা করে যেতে হবে। তবেই মিলবে সুফল। দূর হবে বহু মারাত্মক রোগের ঝুঁকিও। অনেকেই হয়তো জানেন না যে, এমন কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে যেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব শুধুমাত্র শরীরচর্চার অভ্যাসেই।

হৃদরাগের ঝুঁকি কমে

গবেষকরা দেখেছেন যারা প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ মিনিট ব্যায়াম করে, তাদের হৃদরাগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যারা ব্যায়াম একেবারেই করে না, তাদের চেয়ে ১৪ শতাংশ কম। গবেষকরা বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী প্রত্যেকের উচিত নিয়মিত শরীরচর্চা করা। এতে শরীর সুস্থ থাকার পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকিও কমবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

রক্তে শর্করার মাত্রা হু হু করে বাড়তে থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে শরীরচর্চা করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। ডায়াবেটিকদের সুস্থ থাকার অন্যতম রাস্তা হল শরীরচর্চা। নিয়ম করে যদি অল্প সময়ের জন্য হলেও শরীরচর্চা করা যায়, তা হলে ডায়াবিটিস বশে রাখা সত্যিই সহজ হবে।

মানসিক চাপ উপশম করে

আমাদের শরীরে স্ট্রেস হরমোন হলো কর্টিসল এবং অ্যাড্রেনালিন। শরীরচর্চা এই দুটি হরমোনের মাত্রা কমায়। শররিচর্চা আপনাকে শুধু স্ট্রেস সামলাতে সাহায্য করে না, এটি স্ট্রেস প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। অফিসে প্রচণ্ড চাপ সামলানোর পর একদিন ব্যায়াম করেই দেখুন, কিছুটা হলেও স্বস্তি অনুভব করবেন।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে

শরীরচর্চা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল-এর পরিমাণ কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে শরীরচর্চার অভ্যাস ভাল কোলেস্টেরেল এইচডিএল-এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। কোলেস্টেরলের হাত ধরে হৃদ্‌রোগ, হার্ট অ্যাটাকের মতো অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ে। তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে শরীরচর্চা করতেই হবে।

ক্যানসার দূর করে

প্রতিদিন শরীরচর্চা করলে ঝুঁকি কমে ক্যানসারের। এমনটাই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ায় যে কোষগুলি, শরীরচর্চার ফলে সেই কোষগুলি সক্রিয়তা হারাতে থাকে। ক্যানসারের জীবাণুকে প্রতিহত করার ক্ষমতা তৈরি হয় শরীরের। তাই মারণরোগের আশঙ্কা দূর করতে শরীরচর্চা করা জরুরি।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়

অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, বাইরের খাবার খাওয়ার প্রবণতা, মানসিক চাপ— এমন কিছু কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার শিকার অনেকেই। ওষুধ খেয়েও রক্তচাপের মাত্রা কমানো সব সময় সম্ভব হয় না। এই রোগ বশে রাখতে কিন্তু অন্যতম ভরসা হতে পারে শরীরচর্চা। রক্তচাপের মাত্রা কমাতে শরীরচর্চা করা বাধ্যতামূলক।

(ঢাকাটাইমস/১০ জুন/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নিয়মিত শরীরচর্চায় দূরে থাকে ক্যানসার-ডায়াবেটিস! কমে হৃদরোগের ঝুঁকিও
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা