ভৈরবে পানিতে ডুবে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বড় বোনের আত্মহত্যা

ভৈরব ( কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১২ জুন ২০২৩, ২২:৫৭| আপডেট : ১৪ জুন ২০২৩, ০৯:৫৪
অ- অ+

ভৈরবে ডোবার পানিতে ডুবে ছোট ভাই নিরব মোল্লা (১২) মারা যাওয়ার খবর শুনে বড় বোন নাজা বেগম (১৮) বাসার দুতলার ছাদ থেকে পড়ে আত্মহত্যা করেছে । ঘটনার পর নিহত নিরবকে স্বজনরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এসময় স্বজনরা কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রওশন আরা রিপাকে লাঞ্চিত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় ৪ জন আহত হয়।

সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহরের চন্ডিবের মোল্লা বাড়ি এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটেছে।

নিহতের বড় বোন নাজা বেগমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে নারায়ণগঞ্জে ভুলনা এলাকায় পথিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। নিহত নিরব মোল্লা চন্ডিবের মোল্লা বাড়ির বাছির মোল্লার ছেলে।

প্রত্যক্ষ্যদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ সোমবার বিকাল ৫টার দিকে চন্ডিবের মোল্লা বাড়ীর ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নিরব মোল্লা বাড়ির পাশের একটি মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে যায়। খেলার সময় ফুটবল মাঠের পাশের ডোবার পানিতে পড়ে গেলে ফুটবলটি পানি থেকে আনতে গিয়ে সে পানিতে ডুবে যায়। এসময় তার বন্ধুরা তাকে পানি থেকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। তারপর স্বজনদের অনুরোধে তাকে ইসিজি করানোর জন্য পাশের একটি প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে নার্স খাদিজাকে ডেকে আনা হয়। পরে ইসিজি করার পর বলা হলো নিরব মারা গেছে। এসময় তার স্বজনরা নার্স খাদিজাকে মারধোর শুরু করে। তাকে বাঁচাতে কর্তব্যরত ডাক্তার ও কর্মচারীরা এগিয়ে এলে তাদেরকেও মারধোর করে আহত করা হয়। আহতরা হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রওশন আরা রিপা, উপসহকারী মো. সেলিম, ক্লিনিকের নার্স খাদিজা বেগম ও ক্লিনিক কর্মচারী শাহ আলম। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।

এদিকে ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে বোন নাজা বেগম তার বাসার দুতলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে স্বজনরা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে এলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরে রাত ৯টার দিকে ঢাকায় নেয়ার পথে তিনি মৃত্যুবরণ করেন ।

আহত নার্স খাদিজার মা রওশনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ে ইসিজি করতে ক্লিনিক থেকে হাসপাতালে আসে। ইসিজি করার পর মৃত্যুর খবরে নিরবের স্বজনরা অন্যায়ভাবে আমার মেয়েকে মেরে গুরুতর আহত করে। আমার মেয়ের কি দোষ ছিল কেন অন্যায়ভাবে তাকে মারধর করেছে তার বিচার চান তিনি।

নিহত নিরব মোল্লা ও নাজা বেগমের চাচা নাছির মোল্লা বলেন, আমার ভাতিজা পানিতে ডুবে মারা যায়। এখবর পেয়ে আমার ভাতিজি দুতলার ছাদ থেকে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। হাসপাতালের ঘটে যাওয়া ঘটনাটি দুঃখজনক।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রওশন আরা রিপা জানান, নিরব নামের শিশুটি হাসপাতালে আনার পর তাকে মৃত পায়। স্বজনদের চাপে ইসিজি করা হয়েছে। হাসপাতালে কর্মী না থাকায় বাইরের ক্লিনিক থেকে নার্স খাদিজাকে ডেকে আনা হয়। ইসিজি করার পর মৃত ঘোষণা করা হলে নিহতের স্বজনরা আমার ওপর চড়াও হয় এবং আমাকে তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। অফিসের কর্তব্যরত উপ-সহকারী সেলিম মিয়াকে মারধর করে। এ সময় তারা আরও তিনজনকে মেরে আহত করে। এরপর তার বোন নাজা বেগমকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হলে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে বলে তিনি জানান ।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বুলবুল আহমেদ জানান, ঘটনাটি দুঃখজনক। মারা যাওয়া রোগীকে ডাক্তাররা জীবিত করে দিতে পারবেন না। নিহতের স্বজনরা ডাক্তারসহ ৪ জনকে মেরে আহত করেছে। এ বিষয়ে ঘটনাটি পুলিশকে অবহিত করা হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ঘটনা জানিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা করছি।

(ঢাকাটাইমস/১২জুৃন/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করলে ভালো হতো: জামায়াত আমির
জামালপুরে মাদ্রাসায় ছাত্রী ভর্তিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০
ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছে ডিএনসিসির কর বকেয়া ৩০ কোটি টাকা
শহীদ নিজামীর খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে ইনশাআল্লাহ: রফিকুল ইসলাম 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা