ভেষজ ঔষধি কদম ফুল গাছ রোগ প্রতিরোধের দাওয়াই

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ জুন ২০২৩, ১০:২৭ | প্রকাশিত : ১৫ জুন ২০২৩, ০৮:৫৬

বর্ষা ঋতু যেন শুধু বাঙালিদের ঋতু। কদম ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণ যুগে যুগে নগরবাসী কিংবা গ্রামবাসীকে মুগ্ধ করে এসেছে। বর্ষা কবিদের ঋতু, নজরুল-রবীন্দ্রনাথের ঋতু। বৃষ্টি ঝরুক আর নাই-বা ঝরে পড়ুক। বাদল দিনে প্রথম কদম ফুল ফুটুক আর নাই-বা ফুটুক, ১৫ জুন দিনটি ছিল পহেলা আষাঢ়। ময়ূর পেখম মেলুক আর নাই-বা মেলুক, আজ শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে কবিতার খাতা, ডায়রির পাতা ভরে তোলার দিন। মেঘের ভেলায় ভেসে কদম ফুলের ডালি সাজিয়ে নব যৌবনা বর্ষার সতেজ আগমন ঘটে এই দিনে। কারণ, সেদিন দুপুরে হঠাৎ ঝরেছিল প্রবল বৃষ্টি। স্নাত করে দিয়েছিল শুষ্ক মাটির বুক, সিক্ত করে দিয়েছিল তৃষ্ণার্ত গাছপালা। বৃষ্টির শীতল স্পর্শ জুড়িয়ে দিয়েছিল তপ্ত হৃদয়। বৃষ্টির স্বচ্ছ পানি ভিজিয়ে দিয়েছিল আমাকে। আর আমি হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিয়েছিলাম বৃষ্টিকে!

কদম ফুলের সরস রূপে সেজে নগরে বর্ষা এসেছে। কদম ফুলের সুঘ্রাণ জানান দিয়ে যায় নবযৌবনা বর্ষার আগমনী বার্তা। কদম গাছগুলো সাদা-হলুদের মিশ্র রঙের ফুলে ছেয়ে গেছে। বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ কদম ফুলের সুবাস।

প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কদম ফুলের আধিপত্য। মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যেও কদম ফুলের সৌরভমাখা রাধা-কৃষ্ণের বিরহগাথা রয়েছে। ভগবত গীতাতেও রয়েছে কদম ফুলের সরব উপস্থিতি। কদম ফুল শুধু বর্ষায় প্রকৃতির হাসি নয়, এর রয়েছে নানা উপকারিতা। কদম গাছের ছাল জ্বরের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কোনো কোনো অঞ্চলে কদম ফুল তরকারি হিসেবে রান্না করেও খাওযা হয়। কদম গাছের কাঠ দিয়ে দিয়াশলাই তৈরি করা হয়ে থাকে।

বর্ষার বাতাসে ভেসে আসা কদমের গন্ধ মনকে আকুল করে তোলে। বর্ণে, গন্ধে এ গাছটি বাঙালির খুব প্রিয়। কদমের অন্যান্য নাম- নীপ, মেঘাগমপ্রিয়, কর্ণপূরক, ভৃঙ্গবলণ্ডভ, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, ললনাপ্রিয়, সুরভি, সিন্ধুপুষ্প ইত্যাদি। আমাদের ঐতিহ্য ও সাহিত্যে কদম গাছ ও ফুল ২ হাজার বছরের পুরোনো।

কদম গাছের আদি নিবাস বাংলাদেশ, ভারত ও চীন। কদম হলুদ, সোনালি বা লাল রংয়ের হয়। লাল কদম দুর্লভ। কদম সমান্তরাল শাখাযুক্ত বড় আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ। কদম ফুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Neolamarckia cadamba, এটি Rubiaceae পরিবারের সদস্য। কাণ্ড সোজা, শাখা-প্রশাখা ছড়ানো। গাছ ১৮ মিটার উঁচু হয়। নিবিড় পত্রবিন্যাসের জন্য কদম ছায়াঘন। শীতে কদমের পাতা ঝরে এবং বসন্তে কচি পাতা গজায়। সাধারণত পরিণত পাতার চেয়ে কচি পাতা অনেকটা বড়। কদমের কচি পাতার রং হালকা সবুজ। বাকল ধূসর। পাতা সরল, হূৎপিণ্ড আকৃতির, লম্বাটে, বড় আকারের, ডিম্বাকার, চকচকে এবং উজ্জ্বল সবুজ। পাতা ১৫ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। জুন থেকে আগস্ট মাসে ফুল ফোটে। ফুল ক্ষুদ্রাকার, সবুজাভ হলুদ, সুগন্ধি।

কদম ফুল অনেক ফুলের মঞ্জরি। বলের মতো গোল, মাংসল পুষ্পাধারে অজস্র সরু ফুল থাকে। এ ধরনের পুষ্পমঞ্জরির নাম হেড। প্রতিটি ফুল খুবই ছোট, বৃতি সাদা, দল হলুদ, পরাগচক্র সাদা এবং বহির্মুখীন, গর্ভদণ্ড দীর্ঘ।

ভেষজ ঔষধিগুণে ভরপুর কদম গাছ। বিবিধ রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাচীনকাল থেকেই ঘরোয়া উপায়ে কদম গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, এই গাছের পাতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আশীর্বাদের চেয়ে কম নয়! বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মোকাবিলায় সহায়ক। এর ব্যবহারে শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে থাকে। যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে।

কদমের পাতা ও ছাল ব্যথানাশক। কদমের ছাল জ্বরের ওষুধ হিসেবেও উপকারী। প্রচলিত লোকজ ব্যবহারে কৃমি ও ব্যথা সারাতে কদমের বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রে পায়ের তালু জ্বলা, ব্রণসৃষ্ট ক্ষত ও গ্রন্থিস্ফীতি ইত্যাদি রোগে কদমের ব্যবহার প্রচলিত ছিল। একশিরা রোগে কদমের ছাল কেটে বর্ধিত স্থানে কদমপাতা দিয়ে বেঁধে রাখলে উপকার পাওয়া যায়।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কদমফুল পানিতে সেদ্ধ করে সে পানি দিয়ে কয়েকবার কুলি করলে সেরে যায়।

শিশুদের কৃমি সারাতে কদমপাতার গুঁড়া পরিমাণমতো খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। শিশুদের মুখের ঘা সারাতে কদমপাতার সেদ্ধ পানি মুখে ধারণ করলে অতিদ্রুত ঘা সেরে যায়। এসব ছাড়াও কদমের বাকল জ্বরে উপকারী, পাতার রস ছোদের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার্য।

(ঢাকাটাইমস/১৫ জুন /আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :