যে নিয়মে হাঁটলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ জুন ২০২৩, ০৯:০৩

হাঁটলেই শরীর থাকবে সুস্থ। সুস্বাস্থ্যের জন্য উৎকৃষ্ট ব্যায়াম হলো হাঁটা। যান্ত্রিক জীবনে অলসভাবে সবার সময় কাটে। এতে করে শরীরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিকিৎসকদের মতে, কয়েক পা হাঁটার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সুস্থতার চাবিকাঠি।

সম্প্রতি নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে যে, খাবার খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে যায়। স্পোর্টস মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় গবেষকরা সাতটি ভিন্ন গবেষণা বিশ্লেষণ করেছেন যে কীভাবে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পরিবর্তে হালকা শারীরিক ক্রিয়াকলাপ, যেমন দাঁড়ানো এবং হাঁটা রক্তে শর্করার মাত্রাসহ হার্টের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।

ডায়াবেটিস এমনই একটি রোগ, যার প্রধান কারণ আপনার অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা। ব্লাড সুগার বাড়ার কারণে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। চোখ, কিডনি, লিভার, হার্ট ও পায়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। এমনকি ডায়াবেটিস প্রাণঘাতীও হতে পারে।

ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। মানুষ যখন খাবার গ্রহণ করে, তখন শরীরের প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিনের কাজ হলো যে খাবার খাওয়া হচ্ছে সেটির অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমিয়ে দেওয়া। যখন ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় বা ইনসুলিন উৎপাদন হওয়ার পরও যখন কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকে। সেই অবস্থাকেই বলা হয় ডায়াবেটিস।

ডায়াবেটিসের হাত ধরেই জন্ম নেয় আরও অনেক শারীরিক সমস্যা। তাই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে রেহাই পাবেন অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে। চিকিৎসকেরা বলছেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে হাঁটার ভূমিকা অপরিসীম। তবে ডায়াবেটিস থাকলে হাঁটতেও হবে নিয়ম মেনে। প্রথমে ধীর গতিতে শুরু করতে হবে। তিন থেকে পাঁচ মিনিট ধীরপায়ে হাঁটার পর গতি বাড়াতে হবে। মাঝারি গতিতে পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর্যন্ত হাঁটতে হবে। টাইপ টু-র ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এ ভাবে হাঁটাহাঁটি স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ ভাল।

ডায়াবেটিস ধরা পড়লে জিমে যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু নিয়ম করে হাঁটা জরুরি। হাঁটাহাঁটির সুফল অনেক। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে যদি নিয়ম করে হাঁটাচলা করা যায়, তা হলে শর্করার মাত্রা কমবে।

পরিমিত খাওয়াদাওয়া, নিয়ম করে ওষুধ খাওয়া, মিষ্টিজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকা— ডায়াবেটিস হলে জীবনে এই নিয়মগুলির নতুন সংযোজন হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে মানেই নানা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। দৈনন্দিন রুটিন বদলে যেতে থাকে। রক্তে শর্করার মাত্রা বশে না রাখলে আরও অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সতর্ক থাকার কথা বলেন চিকিৎসকেরা।

ডায়াবেটিকদের সুস্থ থাকার একটি অন্যতম পথ হল শরীরচর্চা। নিয়ম করে যদি শরীরচর্চা করা যায়, তাহলে সুস্থ থাকা সম্ভব। শরীরচর্চা মানেই অনেকের কাছে জিমে গিয়ে ঘাম ঝরানো। সেটা যদি করা যায়, তার চেয়ে ভাল আর কিছু হয় না। কিন্তু ডায়াবিটিস ধরা পড়লে জিমে যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু নিয়ম করে হাঁটা জরুরি। হাঁটাহাঁটির সুফল অনেক। ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে যদি নিয়ম করে হাঁটাচলা করা যায়, তা হলে অচিরেই শর্করার মাত্রা কমবে।

ডায়াবেটিসের মূল সমস্যা হলো ইনসুলিনের অভাব অথবা অকার্যকারিতা। নিয়মিত হাঁটলে শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে। পেশিকোষে গ্লুকোজ প্রবেশ করার জন্য ইনসুলিনের প্রয়োজন। হাঁটার ফলে পেশিকোষে গ্লুকোজ প্রবেশ সহজ হয়। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নেমে আসে। এ ছাড়া হাঁটার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে ডায়াবেটিসের জটিলতা কমে। হাঁটলে ঘুমও ভালো হয়, যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুব জরুরি। হাঁটলে এনডরফিন নিঃসৃত হয় বলে মানসিক চাপ কমে, ফুরফুরে অনুভূতি হয়।

আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হাঁটা প্রয়োজন। একেবারে ঘামঝরানো হাঁটা। যাদের স্থূলতার সমস্যা আছে, তাঁদের হাঁটতে হবে আরও বেশি। প্রথম দিকে ৩ থেকে ৫ মিনিট আস্তে-ধীরে হাঁটুন। এরপর ২০ থেকে ২৫ মিনিট দ্রুত কদমে হাঁটুন। শেষ ১ থেকে ৩ মিনিট হাঁটার গতি কমিয়ে আনুন।

সকাল-বিকেল-রাত—যেকোনো সময় হাঁটা যায়। তবে হাঁটার জন্য একটি নির্ধারিত সময় থাকা জরুরি। টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের সকালে হাঁটা ভালো। সময় না পেলে তিন বেলা খাবারের এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট করে হাঁটুন।

দিনে ৩০-৪৫ মিনিট যদি হাঁটা যায়, ডায়াবেটিকরা সত্যিই সুফল পাবেন। কম করে অন্তত ১০ হাজার পা হাঁটলে শুধু ডায়াবিটিস নয়, পাশাপাশি আরও অনেক শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি কমবে। কিন্তু দশ হাজার পা হাঁটা মুখের কথা নয়। তবে পুরোটাই অভ্যাসের ব্যাপার। প্রথম দিন হাঁটতে বেরিয়েই এতটা পথ হেঁটে ফেলা যাবে না। রোজ হাঁটতে গেলে কয়েক দিনের মধ্যে লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে।

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, প্রথম চেষ্টা করুন ৫ হাজার পা হাঁটা। অনেকেরই মনে হতে পারে, সারা সকাল ধরে যদি হাঁটেন, তা হলে অফিস যাবেন কখন। সকালেই পুরোটা হেঁটে ফেলতে হবে, তার কোনও মানে নেই। দিনে তিনটি সময় ভাগ করে নিন। সকালে ১০ মিনিট হাঁটুন। দুপুরে সময় না পেলে বিকালে আরও ১০ মিনিট হাঁটুন। তার পর রাতে খাওয়াদাওয়ার পর ১৫ মিনিট হাঁটলেই যথেষ্ট।

নিয়ম করে হাঁটার এই অভ্যাসে হাড়ের অনেক সমস্যার ঝুঁকিও কমবে। ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। খাওয়াদাওয়ার যদি অনিয়মও হয়ে যায়, তা হলেও খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়। হাঁটার গুণেই সু্স্থ এবং রোগমুক্ত থাকবে শরীর।

গবেষকদের মতে, সারাদিনে কিছুক্ষণ হাঁটাও খুব উপকারী প্রমাণিত হতে পারে। সম্ভব হলে সারাদিন বসে থাকার পরিমাণ কমিয়ে দিন। আপনার কাজ যদি বসেই করতে হয়, তাহলে প্রতি ২০ থেকে ৩০ মিনিট পরপর উঠে একটু হাঁটুন। এর ফলে হাঁটা-চলা আপনার জীবনীশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। কারণ হাঁটা-চলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।

(ঢাকাটাইমস/১৮ জুন /আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :