ইউটিউব দেখে শিখে জাল টাকা বানাচ্ছিলেন তারা
ফটোশপ ও গ্রাফিক্সের কাজ জানা মো. মেহেদী হাসান ইউটিউব দেখে শেখেন জাল টাকা বানানো। এরপর ফেসবুকের মাধ্যমে শাহজাদা ও তুষার নামে দুইজনের সহযোগিতায় জালটাকা তৈরি করে কেনাবেচা শুরু করেন। পাঁচ লাখ টাকা, ছয় লাখ টাকার চালানসহ চারটি চালান দেন তারা। মাত্র দুই হাজার টাকা খরচ করে তৈরি করেন এক লাখ টাকার জালনোট। এই এক চক্রের তিন সদস্যকে সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরখান থেকে আটক করেছে র্যাব।
আটককৃতরা হলেন মো. শাহজাদা আলম, মো. মাহেদী হাসান, আবু হুরায়রা ওরফে তুষার। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে ৯০০টি ২০০ টাকার জালনোট এবং ২০০টি ১০০ টাকার জালনোট জব্দ করা হয়। এছাড়াও জালনোট তৈরির কাজে ব্যবহৃত একটি করে ল্যাপটপ, ল্যাপটপ ব্যাগ, কিবোর্ড, পেনড্রাইভ, দুটি করে মাউস, ল্যাপটপ চার্জার, ১০টি বিশেষ মার্কার পেন, টাকা ছাপানোর কাজে ব্যবহৃত ২টি বিশেষ প্রিন্টার, টাকার ডিজাইন প্রিন্ট করার জন্য চারটি টোনার কার্টিজ, দুই রিম সাদা কাগজ, একটি ফয়েল পেপার রোল, তিনটি স্টিলের স্কেল, তিনটি এন্টি কাটার, একটি কাঁচি, চারটি মোবাইল, আটটি সিমকার্ড,১টি এনআইডি কার্ড, তিনটি মানিব্যাগ এবং তিন হাজার ৬০ টাকা জব্দ করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টায় রাজধানীর টিকাটুলিতে র্যাব-৩ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চক্রটি প্রথমে অনলাইন থেকে বাংলাদেশি বিভিন্ন নোটের ছবি ডাউনলোড করে তাদের ল্যাপটপে সংরক্ষণ করে এবং প্রিন্টার এর সাহায্যে প্রিন্ট করে। পরে সেসব ছবি ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করে এপিঠ-ওপিঠ সমন্বয় করে মোটা ও পিচ্ছিল অফসেট কাগজের ওপর এক পাতায় চারটি নোট প্রিন্ট করে। এরপর সেই কাগজে তারা গোল্ডেন কালার মার্কার দিয়ে নিরাপত্তা সুতার আদলে মার্কিং করে। সবশেষে তারা স্টিলের স্কেল এবং এন্টিকাটারের সাহায্যে জালনোটগুলো কেটে বান্ডেল করে বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করে। এ প্রক্রিয়া সূক্ষভাবে সম্পন্ন করতে তারা বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের কাগজ ব্যবহার করে সবশেষ লিপি গোল্ডকে বেছে নেয়।
লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এভাবে ৫০টি নোটের একটি বান্ডেল তৈরিতে তাদের আনুমানিক ২০০ টাকা খরচ হয় অর্থাৎ এক লাখ টাকা তৈরিতে আনুমানিক খরচ হয় দুই হাজার টাকা। এসব জালনোট বিক্রয়ের জন্য শাহজাদা এবং তুষার মিলে ফেসবুকে জালটাকা ক্রয়-বিক্রয়ের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপের পোস্টে জালটাকা ক্রয়ে আগ্রহী কমেন্টকারীদের সঙ্গে ইনবক্সে যোগাযোগ করে। পরে তারা ফোনে যোগাযোগ করে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে জালটাকা ডেলিভারির কাজ করে থাকে। এ চক্রটি বিগত সময়ে জালটাকার বড় ধরনের চারটি ডেলিভারি দিয়েছে। গত ১৫ মে তারা এ গ্রেড জালনোট গ্রুপের মাধ্যমে ৯০ টাকার বিনিময়ে পাঁচ লাখ টাকার জালনোটের একটি ডেলিভারি দেয়।
আরও পড়ুন>>১২৫ টাকার চিনি প্যাকেট খুলে ১৬০ টাকায় বিক্রি
গতকাল সোমবার দুই লাখ টাকার জালনোট ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতির সময় টাকা এবং মেশিন ও সরঞ্জামাদিসহ র্যাবের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে।
আটককৃতদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শাহজাদা ওই চক্রের মূলহোতা। সে ২০০৮ সালে বিজিবিতে যোগদান করে এবং ২০২০ সালে নৈতিক স্খলন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে চাকরিচ্যুত হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম ও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ২০২২ সাল থেকে সে জালটাকা প্রস্তুতকারী চক্রের সঙ্গে কাজ করে আসছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ফেসবুকে জালটাকা বিক্রির পেজ থেকে পরিচিত হয়ে মেহেদী এবং তুষারকে নিয়ে সে নিজেই জালটাকা প্রস্তুতের এই চক্রটি গড়ে তোলে। সেসময় থেকে মেহেদী এবং তুষারকে সে তার উত্তরখানের ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে। এখান থেকেই তারা তাদের চক্রের পরবর্তী কার্যক্রম চালাতে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ভয়ে এরা সাম্প্রতিক সময়ে এই বাসা ছেড়ে গাজীপুরে আরেকটি ভাড়া বাসায় চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল।
তুষার গাজীপুরের কাশিমপুরে গার্মেন্টসে চাকরি করতেন বলে জানিয়েছেন। বর্তমানে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে জালটাকা সরবরাহের কাজ করছিলেন। তিনি শাহজাদার বাসায় থাকার পাশাপাশি আগের কর্মস্থল গাজীপুর কাশিমপুরে সপ্তাহে দুই-তিন দিন গিয়ে জালটাকার বিক্রয়ের জন্য কাস্টমার জোগাড় করতেন। এভাবেই তাদের জালটাকার ব্যবসা ও ডেলিভারি চলতে থাকে।
ঈদকে কেন্দ্র করে জাল টাকা ছাপায় চক্রটি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারকে কেন্দ্র করে তারা এই টাকা ছাপান। আর টাকা ছাপানোর কাজে কম খরচ হয় বলে ২০০ টাকার জালনোট বেশি ছাপান।
আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন।
(ঢাকাটাইমস/২০জুন/এসএস/এএ/এফএ)