রোগ প্রতিরোধে ম্যাজিকের মতো কাজ করে যোগ ব্যায়াম

যোগ সারায় রোগ। সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে যোগ দিবস। আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের স্লোগান 'বসুধৈব কুটুম্বকম'। সমগ্র মানবজাতিকে একটি পরিবারে নিয়ে আসা। যার মূল দর্শন রোগ থেকে মুক্তি এবং সেই রোগমুক্তির স্থায়িত্ব। শরীর ও মনের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে যোগের কার্যকারিতা এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে এই দিনটি পালন করা হয়।
প্রাচীন ভারতে শরীরকে সুস্থ রাখার অন্যতম মাধ্যম ছিল যোগব্যায়াম বা যোগাসন। নিয়মিত যোগব্যায়াম হার্ট ভাল রাখতে, রক্তচাপ কমাতে, নমনীয়তা বাড়াতে এবং পেশী শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে যোগব্যায়াম। এছাড়া, শ্বাসযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করতে, সামগ্রিক মানসিক সুস্থতা দেয় যোগাভ্যাস । শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য যোগাভ্যাস যে অব্যর্থ ওষুধ, তা এক কথায় মেনে নিচ্ছেন সমস্ত চিকিৎসক থেকে বিশেষজ্ঞরা।
মানুষের দেহ, মন ও শক্তি- এ তিনটি জিনিসের সমন্বয়ে শরীর চলে। এর কোনো একটি যদি ঠিকঠাক কাজ না করে তাহলে আমাদের শরীর ঠিকভাবে কাজ করবে না। যোগ ব্যায়াম ঠিক এ কাজটাই করে থাকে এ তিনটির সমন্বয় করে। শরীরের অনেক জটিল সমস্যা সমাধান করে দিতে পারে যোগ ব্যায়াম। তবে এই ব্যায়ামের সঙ্গে যেহেতু শরীর ও মন দুটোরই সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ, তাই এটা করার সময় পূর্ণ মনোযোগ দেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ থাকতে যোগাসন বা যোগ ব্যায়ামের বিকল্প নেই।
যোগ ব্যায়েমের মাধ্যমে শরীরের সমস্ত সমস্যা নির্মূল হতে পারে। এর পাশাপাশি এই ব্যায়াম করতে লাগে না কোন বিশেষ সরঞ্জামের। তাই যে কোনো জায়গায় যে কোনো পরিস্থিতিতেই আপনি যোগ ব্যায়াম করতে পারবেন।
তবে একটি বিষয় জেনে অবাক হবেন যে, আমাদের যে বিভিন্ন শারীরিক রোগ হয় সেগুলো নিরাময়ের ক্ষেত্রেও যোগ ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
জেনে নিন কোন কোন রোগের ক্ষেত্রে কোন কোন যোগা ব্যায়াম অভ্যাস করতে পারলে আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
হজমের সমস্যা
যাদের নিয়মিত গ্যাস, অম্বল বা হজমের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে পবনমুক্তাসন বা সুপ্ত বজ্রাসন খুব ভালো কাজে দেয়। এক্ষেত্রে আপনাকে চিত হয়ে শুয়ে ডান পা ভাজ করে পেটের সঙ্গে লাগিয়ে রাখতে হবে। বাম পা সোজা রাখবেন। এরপর একই প্রক্রিয়া করবেন বাম পায়ের সঙ্গে। তখন ডান পা সোজা রাখতে হবে। এটি নিয়মিত করতে পারলে খিদে বাড়বে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও মিটবে।
কোমরের ব্যথা
যাদের কোমরের যন্ত্রণা বা ব্যথা রয়েছে তারা ভুজঙ্গাসন করতে পারেন। তারা পবনমুক্তাসনও ট্রাই করে দেখতে পারেন। উপুড় হয়ে শুয়ে পা উপরে তুলে একপদ সলভাসন করলে ভালো ফল পাবেন।
পেট ও নিতম্বের চর্বি কমানো
বেশিরভাগ মেয়েরা এই সমস্যায় ভোগেন। তাদের ক্ষেত্রে ভালো কাজে দিতে পারে অর্ধকূর্মাসন। মাটিতে বজ্রাসনে বসতে হবে। এরপর দুটি হাত সোজা করে মাথার উপরে নমস্কার এর ভঙ্গিতে তুলুন। পেট ও বুক উরুর সঙ্গে লাগিয়ে রাখতে হবে। এই পজিশনে মনে মনে কুড়ি পর্যন্ত গুনতে হবে। এবার সোজা হয়ে আস্তে আস্তে বসে শবাসনে দুই মিনিট বিশ্রাম নিন।
ঘাড়ের ব্যথা
ঘাড়ের ব্যথা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আইসোমেট্রিক প্রেসার অভ্যাস করুন। দুই হাত মাথার পেছনের দিকে নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে ঘাড় সোজা করে চাপ দিন। এভাবে নিজের মাথাকে চারদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আস্তে আস্তে চাপ দিতে হবে। এবার চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে চিবুকে হাত দিয়ে চাপ দিলে ও ঘাড়ের উপর চাপ পড়ে এবং ব্যথা আস্তে আস্তে কেটে যায়।
শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা
শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার মোকাবিলায় সিদ্ধাসন খুবই কার্যকরী। মেরুদণ্ড সোজা রেখে পা গুটিয়ে বসে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে। এটি দেখতে অনেকটা পদ্মাসনের মতোই। সিদ্ধাসনে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় সেই সঙ্গে ফুসফুসের কার্যক্ষমতাও বাড়ে।
হাঁটুর ব্যথা
হাঁটুর ব্যথা কমানোর জন্য উত্থানপদাসন করলে উপকার মিলবে। চেয়ারে বসে পা তোলা ও নামানো অর্থাৎ সিটেড লেগরাইজ বা পেলভিস ব্রিজ (চিৎ হয়ে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করে উপরের দিকে তোলাকে পেলভিস ব্রিজ বলা হয়) করা যেতে পারে। এতে থাইয়ের পেশি সঙ্কুচিত বা প্রসারিত হয়।

মন্তব্য করুন