পানির অভাবে এবারও বিপাকে সালথা-নগরকান্দার পাট চাষিরা

নুরুল ইসলাম, সালথা-নগরকান্দা (ফরিদপুর)
  প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০২৩, ১১:২৬| আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৩, ১১:৫২
অ- অ+

গত বছর পানির অভাবে পতিত জমির মাটি খুঁড়ে গর্ত করে পাট জাগ দিতে হয়েছিল ফরিদপুরের সালথা-নগরকান্দা উপজেলার পাট চাষিদের। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছিল তারা। একদিকে লেগেছিল অতিরিক্ত খরচ, অন্যদিকে কাঁদামাটি জড়িয়ে পাটের রং নষ্ট হয়ে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন তারা। এবারও পাটচাষিরা একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন বলে আশঙ্কা।

পানির অভাবে চরম বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে ফরিদপুর শহরতলীর সিএন্ডবি ঘাটের সুইচ গেটটি পুরোপুরি খুলে দেওয়ার জোর দাবিও জানিয়েছেন পাটচাষিরা।

কৃষকরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সোনালী আশ পাট কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু মাঝে মাঝে বৃষ্টি হলেও খাল-বিল, নিচু জমি ও জলাশয়গুলোতে তেমন পানি জমেনি। এমনকি চাষিদের ব্যক্তিগত পুকুরেও নেই পর্যাপ্ত পানি। এমন অবস্থায় কৃষকদের একমাত্র ভরসা এখন কুমার নদের পানি।

তবে কুমার নদে যদি উভয় উপজেলার চাষিরা একযোগে পাট জাগ দেয়, তাহলে নদের পানি পচে মরে যেতে পারে সকল প্রজাতির দেশীয় মাছ। তারপরও এখানকার প্রধান ফসল ঘরে তুলতে নছিমন ও ভ্যানযোগে কাচা পাটের আটি কুমার নদে এনে জাগ দিতে শুরু করেছেন তারা।

সালথার খারদিয়া গ্রামের পাটচাষি মজিবর মোল্লা ঢাকা টাইমসকে বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে গত বছরও পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছিলাম। যে কারণে পাটচাষ লোকসান গুণতে হয় আমাদের। এবারও বৃষ্টি নেই, বর্ষার পানিও জলশায়গুলোতে ঢুকছে না। এদিকে ক্ষেতের পাটও কাটার উপযোগী হয়েছে। অনেকে পাট কাটাও শুরু করে দিয়েছে। তারা কয়েক কিলোমিটার অদূরে গিয়ে কুমার নদে পাট জাগ দিচ্ছে। কিন্তু হাজার হাজার পাটচাষি রয়েছে সালথায়।

কতজন কুমার নদের পাট জাগ দেওয়ার মতো জায়গা পাবে? সব মিলিয়ে আমরা চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছি। এমন অবস্থায় ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাটের সুইচ গেটটি খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

নগরকান্দার তামলা ইউনিয়নের কৃষক আবুল হোসেন ও জব্বার মোল্লা ঢাকা টাইমসকে বলেন, মাত্র দুবছর আগেও বর্ষা মৌসুমে আমাদের এলাকার ছোট বড় নদ-নদী, খাল-বিল, নিচু জমি ও জলাশয়গুলো পানিতে থই থই করতো। তখন আমাদের পাট জাগ দিতে কোন ধরণের সমস্যায় পড়তে হতো না। কিন্তু অনাবৃষ্টি আর নদ-নদীর অবব্যস্থাপনার কারণে গতবছর থেকে পানির অভাবে পাট আবাদ নিয়ে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। পানিহীন পাটচাষ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এবারও কোথায় পানি নেই। কুমার নদে গিয়ে পাট জাগ দিলে খরচও হবে ডাবল হয়। এমন অবস্থায় এখনই যদি সুইচ গেট খুলে না দেয়, তাহলে কৃষকরা ঘরে বসে যাবে।

শিক্ষক মো. জাহিদুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, সালথা-নগরকান্দার মাটি অনেক শক্তিশালী। এখানে প্রচুর পাট জন্মায়। বৈদেশিক অর্থ উপার্জনে এখানকার কৃষকরা পাটের মাধ্যমে বড় ধরণের ভূমিকা রাখেন। আবার নিজেদের জীবনমান উন্নয়নও হয় পাটচাষ থেকে। সব মিলিয়ে পাটের উপর নির্ভর করে এখানকার কৃষকদের ভাল থাকা না থাকা। এখন পাট কাটার ভর মৌসুম চলছে। এখন মাঠে প্রচুর পানির প্রয়োজন। কিন্তু কোথাও পানির দেখা মিলছে না। সুইচ গেটের দরজা এখন খুলে না দিলে, কৃষকের পাট ক্ষেতে শুকিয়ে মরবে।

সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, সালথায় ১২ হাজার ৩০৩০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হচ্ছে। আশানুরূপ ফলনও হয়েছে এবার। কিন্তু পানির অভাবে দুশ্চিন্তায় রয়েছে চাষিরা। ফরিদপুর সিএন্ডবি ঘাটের সুইচ গেটটি খুলে দেওয়া হলে খাল-বিল ও জলাশয়গুলোতে দ্রুত পানি ঢুকবে। এতে কৃষক অনেক উপকৃত হবে।

আরও পড়ুন: মেয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে বাবার মৃত্যু

নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলোক কুমার বোস ঢাকা টাইমসকে বলেন, নগরকান্দায় ১১ হাজার ৭০৪ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। তবে কৃষকরা পানির অভাবে পাটি নিয়ে বিপাকে পড়েছে। গেল বছরগুলোতে কৃষকরা পাট কেটে ক্ষেতেই জাগ দিয়েছেন। কিন্তু এবার আর তা পারছেন না। পানি না থাকায় পাট কেটে গাড়িতে করে নদ-নদীতে ফেলে জাগ দিতে হচ্ছেন। এতে কৃষকদের দ্বিগুণ শ্রমিক লাগছে। এই অবস্থায় ফরিদপুর সিএন্ডবি ঘাটের সুইচ গেটটি খুলে দেওয়ার জন্য সেখানকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সুইচ গেট কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন, সুইচ গেটের পাটাতনের যতটুকু সহ্য ক্ষমতা রয়েছে, ততটুকু পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত চাপ দিলে সুইচ গেট ভেঙে পড়তে পারে।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/এসএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
জুলাইয়ের প্রথম শহীদ সাংবাদিক ঢাকাটাইমসের হাসান মেহেদীর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস হলেন আয়মন রাহাত
মতিঝিলে সেনা কল্যাণ ভবনে আগুন
জুলাই সনদ তৈরির প্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছ: প্রধান উপদেষ্টা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা