নীলফামারীতে আখের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
উত্তরের নীলফামারীকে আখের রাজ্য বলে সবাই। সবুজ পাতার নিচে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টি সোনালি ও সাদা রংয়ের আখ। কৃষকেরা অল্পপুজি ও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে। এ বছরে বৃষ্টি কম হওয়ায় আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। আখের বাম্পার ফলন হওয়ায় একদিকে যেমন কৃষক খুশি। তেমনি দাম পেয়ে মিষ্টি আখের মিষ্টি হাসি ফুটে উঠেছে চাষিদের মুখে। এতে করে এবার সাফল্যের মুখ দেখছে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জের
মাগুরা ও জলঢাকা উপজেলার আখ চাষিদের। আখের বাম্পার ফলন হওয়ায় অধিক লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা। এতে করে দিন দিন বেড়েই চলছে উপজেলাগুলোতে আখের চাষ।
এমনি চিত্র ফুটে উঠেছে উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বিন্যাকুড়ী গ্রামে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছে আখ কাটতে। সারি সারি ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে এ আখ নিয়ে যাওয়ার জন্য। এখান থেকে আখ স্থানীয় বাজারসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এসে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে কথা হয় কিনতে আসা আখ ব্যাবসায়ী মমিনুলের সাথে।
তিনি বলেন, আমি গত ৫ থেকে ৬ বছরের ধরে আখ ব্যবসার সাথে জড়িত। প্রতি বছর এখান থেকে আখ ক্রয় করে পাশ্ববর্তী জেলাগুলোতে পাইকারি হিসাবে বিক্রি করে থাকি। প্রতি দিন প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার পিস আখ ক্রয় করে থাকি। এখানকার আখ খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু। এখানকার আখ বিক্রি করতে আমাদের কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।
পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর এলাকার আখ চাষি খাদেমুল বাসার এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় আমি প্রথমবার অল্প পরিসরে আখের চারা রোপণ করি, তাতে আখের বাম্পার চাষ হয়েছে।
একই এলাকার নুর আলম গত কয়েক বছরে ধরে আখ চাষ করে সাবলম্বী হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের মাগুরা কৃষক তুহিন বলেন, আমি গত কয়েক বছর আখ চাষ করে আসছি এ বছরে কৃষি অফিসের কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী আমি ৭ বিঘা জমিতে ঈশ্বরদী ও ফিলিপাইন জাতের আখের চারা রোপণ করি। আখের চারা রোপণের কয়েক মাস পর তা বিক্রির উপযোগী হয়। এছাড়া আখ চাষের মধ্যেই সাথী ফসল হিসেবে আলু-৭ ও স্কোয়াস চাষ করেছিলাম। বর্তমানে এ দুই ফসলে আমার খরচের সব টাকা উঠে এসেছে। বর্তমানে আখ আমার বোনাস ফসল। আখের বাম্পার ফলন হয়েছ। ৭ বিঘা জমিতে প্রায় ১০ লাখ টাকার আখ বিক্রি করার স্বপ্ন দেখছি ইনশাআল্লাহ তা বিক্রি হবে। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন গ্রামে আখ চাষের সাথে জড়িত হয়েছে।
ডোমার উপজেলার আখচাষি পাপ্পু বলেন, আখ আমাদের দেশের খাদ্য ও শিল্পে ব্যবহার্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্থকরী ফসল। চিনি, গুড় ও চিবিয়ে খাওয়ার জন্য আখ ফসল চাষ করা হয়ে থাকে। আখ একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল, যা জমিতে প্রায় ৮-৯ মাস থাকে। বাংলা সনের আশ্বিন ও কার্তিক মাসে আখ জমিতে রোপণ করা হয়। আখ বাজারজাতকরণের উপযোগী হতে সময় লাগে প্রায় ৯ হতে ১০ মাস।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বেলে ও দোআঁশ মাটি আখ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে আখের ফলন পাওয়া যায়। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে আমারা কৃষকদের সব সময় পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে থাকি। যারা উপজেলায় আখ চাষ করেছে তাদের সাথী ফসল হিসেবে আখ চাষের মধ্যে অন্যান্য ফসল রোপন করার পরমর্শ দিয়েছি। এতে আখ চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। আখ উঁচু ও নিচু জমিতেও চাষ করা যায়। আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের কারণে আশানুরূপ ফলন ও বাজারে বেশ চাহিদা থাকায় দিন দিন আখ চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। আখের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে, সরিষা, বাদাম, মিষ্টি কুমড়া, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, স্কোয়াশ ইত্যাদি চাষ করা যায়।
এ বিষয়ে নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, নীলফামারীর মাটি আখ চাষের জন্য উপযোগী। এবার জেলায় ৫৩ হেক্টর জমিতে ইশ্বরদী ৪১, ৩৭, ১৬ ও ৮ জাতের আখ চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে চাষিরা যেন তাদের ফসল বাঁচাতে পারে সে জন্য যথাসময়ে কৃষি অফিসের মাধ্যমে সঠিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/০২আগস্ট/এসএ)
মন্তব্য করুন