সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার সুরক্ষা ও বিকাশই প্রজন্মকে প্রগতিশীল করবে

এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার
  প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১০:৩৪
অ- অ+

জাতিরাষ্ট্রের নিজস্ব সংস্কৃতি বাঁচলেই কেবল বাঁচবে দেশ। সম্প্রতি খুব খেয়াল করলে আমরা দেখতে পাই রাজনৈতিক চর্চায় সাংস্কৃতিক চর্চা প্রায়ই যেমন উপেক্ষিত হচ্ছে, তেমনি করে সাংস্কৃতিক চর্চায় রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি সেটিও কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতিতে এ দুটো বিষয় একে অপরের পরিপূরক হয়ে যতদিন স্বাধীনভাবে সমান্তরালে পথ হাঁটতে পেরেছে, ততদিন পর্যন্ত কখনও একটি হোঁচট খেলে,সাময়িক বেকায়দায় পড়লে অন্যটির জোরালো প্রভাব খুব সহজেই তা উতরিয়ে পুনরায় সহবস্থানের চলার পথ প্রশস্ত করেছে। আন্দোলন-সংগ্রামে, সমাজের অভিব্যক্তি প্রকাশে, অধিকার আদায়ে, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত সংগতি, অসঙ্গতি, প্রেম-ভালোবাসা, এক কথায় ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল অঙ্গে, এমনকি মহান মুক্তিযুদ্ধে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমরা জানি। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় প্রণীত বাংলাদেশ সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। প্রতিটি স্তম্ভেই বাঙালি সংস্কৃতির মানসপট গ্রথিত রয়েছে অত্যন্ত সাবলীল ভাবে। কোথাও কোনও বিরোধ নেই। অপরাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত মানুষগুলো মূল সংস্কৃতির একটি ক্ষুদ্রতম অংশ ধর্মীয় সংস্কৃতিকে অপ-ব্যাখ্যা করে প্রকৃত বাঙালি সংস্কৃতিকে বিজাতীয় সংস্কৃতি বলে বিরোধ তৈরি করে নানা রকম ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছেন এ দেশের জন্ম লগ্ন থেকেই।

পুঁথিগত আলোচনায় কোন ধর্মেই সংকীর্ণতার স্থান নেই বলেই জানি। তবে আচারে, রীতিনীতিতে প্রত্যেক ধর্মেরই বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ধরেই নেয়া যেতে পারে বিষয়গুলো ওই নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষের জন্যই কেবল ধর্মীয় বিবেচনায় প্রযোজ্য। আর মানব জীবনের ভালো-মন্দ বিচার বিশ্লেষণের মাপকাঠিতে সকল ধর্মেই কিছু সাধারন বিষয় রয়েছে যা মানুষের কল্যাণে অনেক বেশি শিক্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ । প্রতিটি ধর্মের ঔদার্য এর পরিধিও অনেক ব্যাপক এবং বিস্তৃত। তা সত্ত্বেও ধর্মের ব্যবহারিক প্রয়োগে একটা সীমাবদ্ধতা চোখে পড়ে সবসময়। সেটা হল সকল ধর্ম একসাথে সমান্তরালে খুব সুন্দর সম্পর্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে কোন নির্দিষ্ট ভূখন্ডে উল্লেখ করার মতো কোনও সুনির্দিষ্টকাল স্বাচ্ছন্দ্যে পার করতে পেরেছে, এমন কোন উদাহরন বিশ্বে নেই। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সীমাবদ্ধতা। যদিও কোনও ধর্মই এমন কথা বলে না যে অন্য ধর্মের সাথে তার যুগপৎ চলতে কোনও সীমাবদ্ধতা আছে।

ধর্মের বাইরেও প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। কোনও কোনও জাতিরাষ্ট্র গড়েই উঠেছে জাতীয় পরিচয় ভিত্তিক সংস্কৃতির চরিত্র ধারণ করে, যার স্বরুপ অসাম্প্রদায়িক। সংস্কৃতির এ রূপটির ঔদার্য,সৌন্দর্য এতটা পরিশীলিত ও সক্ষমতা সম্পন্ন যে, সকল ধর্মের মানুষকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সমমর্যাদা, অধিকার এবং ধর্ম ব্যবহারের স্বাধীনতা প্রশ্নে যার যার ক্ষেত্রে প্রতিটি নাগরিকের ই সমমর্যাদার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। সে অর্থে এ সংস্কৃতি ধর্মনিরপেক্ষতাকে অত্যন্ত আপন করে প্রত্যেক নাগরিককে তার নিজের সন্তানের মত চিন্তা করেছে। এমনকি, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান অধিকারও নিশ্চিত করা হয়েছে সংবিধান কর্তৃক। জনসংখ্যার ভিত্তিকে বিবেচনায় নিয়ে বৃহৎ কিংবা ক্ষুদ্র কোনও জনগোষ্ঠীর ধর্মাচার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনও পার্থক্য নেই এখানে। মহাকালের মহান বিশ্বনেতা বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক বাঙালি চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেই মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সকল ধর্মমতের মানুষের জন্য একটি তীর্থস্থান এ বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিলেন। আর দীর্ঘ সময় সকল জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এ ভূখণ্ডে একসাথে বাঙালি সংস্কৃতির বলয়ে সমতার ভিত্তিতে বসবাস করেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মহান নেতার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন নিঃসন্দেহে। ধর্মাশ্রয়ী বিশেষ কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ সে সময় এ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। তারা হয়তো ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের মুখোশে ক্ষমতার লোভে তৎকালীন পাকিস্তানের পক্ষে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান করে ৩০ লক্ষ বাঙালির রক্তে রঞ্জিত করেছে আমাদের ব-দ্বীপকে। যুদ্ধে পরাজয় মানতে না পেরে পাকিস্তানি প্রভুদের ইচ্ছে অনিচ্ছের সাথে একমত পোষণ করে তখন থেকে আজ পর্যন্ত বাঙালি জাতীয়তাবাদের বাংলাদেশকে তারা একদিকে যেমন মানতে পারেনি, অন্যদিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে এ বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে আজও পর্যন্ত। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যা করে পরবর্তীতে সুদীর্ঘ ২০ বছর ক্ষমতায় থেকে বাংলার সংস্কৃতিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার জন্য হেন কোনও ষড়যন্ত্র নেই, হেন কোনও ঘৃণ্য নৃশংসতা নেই, যা তারা করে যাচ্ছে না। উদ্দেশ্য একটিই, বাঙালি সংস্কৃতি তাদের প্রধান শত্রু। এ সময়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সরকার দেশ পরিচালনার মধ্য দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতিকেই শুধু দুর্বল কিংবা নিশ্চিহ্ন করেনি, বিপরীতে সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির ব্যাপ্তি এতটাই বৃহৎ আকার ধারণ করেছে যে, বিয়ের অনুষ্ঠানেও এখন মাইক বাজানো দুষ্কর হয়ে গেছে। জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম থেকে শুরু করে প্রচারযন্ত্র, প্রশাসন রাষ্ট্রের সমস্ত অঙ্গে এমনভাবে ডালপালা ছড়িয়ে এবং সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। এমনকি, চিহ্নিত আল-বদর, আল-শামস, যুদ্ধ অপরাধী ব্যক্তিবর্গ ক্ষমতায় থেকে বাঙালি জাতির সবচেয়ে সম্মানিত অর্জন লাল সবুজের পতাকা তাদের গাড়িতে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে কতটা ভয়ানক শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পেরেছিলো তার প্রভাব আমরা এখনও পরতে পরতে দেখেই চলেছি।

বলে রাখা প্রয়োজন, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংস্কৃতি বান্ধব একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব ছিলেন বলে বাংলাদেশ জন্মের বহু আগেই চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন ঢাকা তার হাতে যাত্রা শুরু হয়। যাহোক, তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৭৫ পরবর্তী দেশে ফিরে এসে বাবার পথ ধরে রাজনীতির পথে ত্যাগ-তিতিক্ষা, অত্যাচার নির্যাতন উপেক্ষা করে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণভোমরা হিসেবে ১৯৯৬ সালে এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন।

মুক্তিযুদ্ধের গতি ত্বরান্বিত করতে যে সকল অনুষঙ্গ সে সময় অত্যন্ত কার্যকরী ছিল তার মধ্যে অন্যতম একটি নান্দনিক অনুষঙ্গ ছিল সংস্কৃতিকর্মীদের অনন্য ভূমিকা। সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সঙ্গীত শিল্পী, শিল্প ও সাহিত্য অঙ্গনের অন্যান্য কর্মীদের উজ্জীবনী প্রচার-প্রচারণা, এমনকি বিদেশের মাটিতে সাংগীতিক কনসার্ট করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত তৈরি করার মত নান্দনিক কাজ করে একদিকে যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ের পক্ষে শক্তি যোগান দিয়েছেন, অন্যদিকে জনমত তৈরি এবং কনসার্ট করে অর্জিত আর্থিক অনুদান যুদ্ধ শিবিরে আশ্রিত মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করে যে উদাহরণ তৈরি করেছে সত্যি সে ঋণ শোধ হবার নয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলে দীর্ঘসময়ের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া সাংস্কৃতিক কর্মীরা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। পুনরায় সৃষ্টিশীল কাজে নিজেদের নিবেদিত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূলমন্ত্রকে কাজে লাগাতে সংস্কৃতিকর্মীরা আবার তৎপর হয়ে ওঠেন। কিন্তু দীর্ঘদিনের অপশাসন, সাম্প্রদায়িক অপসংস্কৃতির ব্যাপক অনুপ্রবেশ, বিদেশি সংস্কৃতির ঢালাও প্রবেশ, সেই সাথে রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক চেতনার ঘাটতি ইত্যাদি বর্তমানে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার, বাঙালি সংস্কৃতি কে ইতোমধ্যেই বিজাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে কয়েকটি প্রজন্মের মধ্যে যে ধারণার জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছে অপরাজনীতির ধারক-বাহকরা, সেই ধাক্কা অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মূল বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনাভিত্তিক সাংস্কৃতিক চর্চার স্বরূপে ফেরা সত্যিই বেশ কষ্টসাধ্য ।

তদুপরি, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সময়ের মধ্যে দুটো অতি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় মামলা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার এবং মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি নানারকম নারকীয় শক্তি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটিয়েছে বারংবার। এমনকি কিছু বিদেশী রাষ্ট্র আমাদের আভ্যন্তরীণ বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তাদের শক্তি প্রদর্শনের সাহস আরও বৃদ্ধি করেছিল। এ সকল রাষ্ট্রের অনেকেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এই সাম্প্রদায়িক পক্ষকে সমর্থন করেছে ইতিহাস তাঁর সাক্ষ্য বহন করে। এরকম প্রেক্ষাপটে আমাদেরকে দেখতে হয়েছে রমনার বটমূলে বোমা হামলা করে সংস্কৃতিকর্মীদের রক্তে রঞ্জিত করেছে তাদের হাত, জাতি-ধর্ম-বর্ণ সকলের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক যাত্রা পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান উদযাপন করতে আমরা বারংবার তাদেরই পৈশাচিক বিচরণে সম্মিলিত এ অনুষ্ঠানের সৌন্দর্যকে নষ্ট করতে দেখেছি, নারীদের প্রতি বিশৃংখল আচরণ করে অভিভাবকসহ দেশ-বিদেশে অনুষ্ঠানের বিশৃংখলা প্রচার করে ভবিষ্যতে এমন অসাম্প্রদায়িক সম্মিলিত অনুষ্ঠান যেন বাঙালি জাতি করতে না পারে, সে লক্ষ্যে নগ্ন পদক্ষেপ পরিকল্পিতভাবে প্রদর্শন করেছে এই চিহ্নিত নরপিশাচেরা। সিনেমা হলে বোমা নিক্ষেপ করে বাঙালি সংস্কৃতির সবচেয়ে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র জাতীয় চলচ্চিত্র শিল্প, যা বঙ্গবন্ধুর হাতে সাংস্কৃতিক শিল্প বিকাশের মাধ্যম হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল তাদের সেই ভীতি প্রদর্শনের কারণে আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। সেই সাথে দীর্ঘদিন ধরে সমাজে নতুন একটি প্রেকটিস চালু হয়েছে। প্রগতিশীল চেতনার রাজনৈতিক স্থানীয় নেতাদেরকে প্রতিক্রিয়াশীল মানুষের রাজনৈতিক সমাবেশে ধর্মের মুখোশ পরিয়ে সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করে অনুষ্ঠানকে যেমন সফল করছে, তেমনি করে অনুষ্ঠানকে নিরাপদ করার কাজটি খুব কৌশলে সুচতুরভাবে সম্পন্ন করে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কে বসিয়ে রেখেই কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রধান অতিথির নিজের দলের নীতি-নৈতিকতাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে কৌশল করে। বাঙালি সংস্কৃতিকে বিজাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে সাধারণ মানুষের অন্তরে গ্রথিত করে, সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বলয়ভুক্ত করে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে সমাজে অবাঞ্চিত করবার লক্ষ্যে সংস্কৃতি কর্মীদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন, ভয়-ভীতি দেখানো, এমনকি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের সরাসরি বিরোধিতা করা, শক্তি প্রদর্শন করে ভাঙচুর করার মত অতি দুঃসাহসিক কাজ একের পর এক করে চলেছে প্রকাশ্যে। এই যখন সমাজের চিত্র, সেই সাথে যুক্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের বাইরে যে সকল রাজনৈতিক ঘরানার অস্তিত্ব ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন উত্তর সে সকল রাজনৈতিক কর্মীরা আধুনিক গেরিলা যুদ্ধের অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের কর্মী সমর্থকদেরকে কাজে লাগিয়ে জ্বালাও-পোড়াও, নানা রকম মিথ্যা প্রচার প্রচারণা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে সার্বক্ষণিক সরকারকে দেশ-বিদেশে বিব্রতকর অবস্থায় রাখার ষড়যন্ত্রে দিবানিশি কাজ করে চলছে। কখনো কখনো জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে স্থায়ী রূপে সাংগঠনিক আকার ধারণ করতে মরিয়া। সংস্কৃতিকর্মীদের ব্যক্তিজীবনের কোনও স্ক্যান্ডাল তা এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লিড নিউজ ও ঘন্টার পর ঘন্টা টেলিভিশন টকশোতে মুখ্য আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিক্রিয়াশীলদের পরিকল্পিত ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কাছে বুদ্ধিভিত্তিক চর্চায় রাষ্ট্র, সমাজ ও সংস্কৃতির ভাবমূর্তি রক্ষায় কতটুকু গুরুত্ব দিয়ে কোন সংবাদটি প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন সে বিবেচনার বড়ই অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে কিছু কিছু মূল গণমাধ্যমের প্রচারনায়। তারা পরিকল্পিত ভাবে সামাজিক যোগাযোগ ও অনলাইন গনমাধ্যমের বিরোধিতা করার সাথে কিছু কিছু গুজব রটিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোকেও পর্যায়ক্রমে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে প্রচার করেছে। ফলস্বরূপ, প্রশাসনিক ভাবে এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অনুষ্ঠানের কলেবর সংকুচিত করার যে নতুন ধারা প্রচরিত হয়েছে সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বেই যে কোনও অনুষ্ঠানসূচি শেষ করার, এই চর্চা থেকে বেরিয়ে দিন, সপ্তাহ কিংবা মাসব্যাপী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাবার পুরাতন সংস্কৃতিতে ফিরে যাওয়া আর কখনও সম্ভব হবে কিনা সে বিষয়ে দারুন শংকা রয়ে গেছে। পূর্বে সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দিতে দেখা যেত। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই অন্তর্ভুক্তির চেতনা নির্ভরতা খুব একটা চোখে পড়ে না। কোথাও কোথাও কিছুটা চোখে পড়লেও তা নিতান্তই দায়সারা গোছের মনে হয়। অন্যদিকে প্রতিক্রিয়াশীল অংশের প্রাতিষ্ঠানিক সংখ্যা বৃদ্ধি এমনভাবেই ঘটেছে যে, বিপরীতে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রের ততোধিক বিস্তৃতি সমাজে ঘটানো সম্ভব না হলে ভারসাম্যে ফিরে আসা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। যার প্রতিফলন আমরা ইতোমধ্যেই অনেকখানি টের পেয়ে গেছি।

লেখক: পুলিশ সুপার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মানিকগঞ্জের সাবেক এমপি মমতাজ গ্রেপ্তার
কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে অনিয়মের প্রমাণ পেল দুদক
কোতয়ালী এলাকায় বিশেষ অভিযান, মাদক কারবারিসহ গ্রেপ্তার ১৫
ফরিদপুরে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা