ভৈরবে সাইন বোর্ড লেখা নিয়ে দুই গ্রামে সংঘর্ষ, আহত শতাধিক
ভৈরবে কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আকবরনগর ও মিরারচর গ্রামের নাম বাজারের সাইনবোর্ডে লেখা নিয়ে দুই গ্রামবাসীর মধ্য সংঘর্ষে উভয়পক্ষের শতাধিক গ্রামবাসী আহত হয়েছেন।
শনিবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর দুইটা পর্যন্ত দুই গ্রামবাসীর মধ্য তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরে কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে পুলিশের একটি বিশেষ টিম এসে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আহতরা হলেন, আকবরনগর গ্রামের যুবলীগ নেতা মোবারক হোসেন, হেলাল, হাসান আলী, আশারাফ উদ্দিন , বোরহান, মাছুম, দুলাল। মিরারচর গ্রামের আহতরা হলেন, আনোয়ার হোসেন, ফারুক মিয়া, মুর্শিদ, শাহ আলম, সেলিম, মানিক, রনি, মানিক মিয়া, সুমন, বাছির, সাগর, সফিকুল, ছিদ্দিক, রবিন প্রমূখ।আহদের মধ্য অনেকরই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের মধ্য কেউ কেউ স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে আসছেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ভৈরব উপজেলার আকবরনগর ও মিরারচর সংযুক্ত এলাকায় অবস্থিত একটি বাজারের নামকরণ নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দুই গ্রামবাসীর বিরোধ চলছিলো। এরই জের ধরে গত এক মাস আগে ভৈরব- কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের পাশে বাজার এলাকায় একটি সাইনবোর্ডে বাজারের নাম লেখা নিয়ে দুই গ্রামবাসীর মধ্য সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ভৈরব - কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে গত জুলাই মাসের দিকে একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়। এই সাইনবোর্ডে সড়ক ও জনপদ বিভাগ আকবর নগর বাজার লিখে সড়কের সাইডে সাইনবোর্ডটি লাগানো হয়। পরে পার্শ্ববর্তী মিরারচর গ্রামের লোকজন সাইনবোর্ডটি ভেঙ্গে ফেলে। এই নিয়ে গত ৯ জুলাই দুদল গ্রামবাসীর মধ্য সংঘর্ষ বাঁধে। পরবর্তীতে স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ থানার ওসির মাধ্যমে ঘটনাটি মিংমাসা করা হয়। মিমাংসার এক মাস পর আবার একই ঘটনার জের ধরে দুই গ্রামবাসীর মধ্য সংঘর্ষে সুত্রপাত হয়। এসময় উভয় পক্ষ রামদা, লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একে অপরকে ধাওয়া করে। তারপর ব্যাপক সংঘর্ষে মেতে উঠে দুই গ্রামবাসী। ঘটনার সময় কিছু লোক দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা সংঘর্ষে উভয় পক্ষের শতাধিক লোক আহত হয়েছে।
মিরারচর গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব রহমান বলেন, বাজারের নাম নিয়ে বিশ বছর পূর্বেও দুই গ্রামের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরর্বতীতে এলাকার গণ্যমান্য হাজী কালু মিয়াসহ ব্যক্তিরা শালিসী দরবারের মাধ্যমে এলাকার বাসস্ট্যান্ডের নামকরণ করেছিলেন আকবরনগর গ্রামের নামে আর বাজারের নামকরণ করা হয়েছিলো মিরারচর-আকবরনগর গ্রামের নামে। কিন্তু গত জুলাই মাসে সড়ক ও জনপদ বিভাগ বাজারের নামে একটি সাইনবোর্ডে আকবরনগর গ্রামের নাম লেখা হয়। এই ঘটনার জের ধরেই দুবার সংঘর্ষ হয়। পরে থানার ওসি সহ নেতৃবৃন্দ শালিশ করে পূর্বের মতই নামকরণ করে দেন। কিন্তু মিরারচরের গ্রামের মানুষ এটি মেনে নিতে পারেনি। যার ফলে দুই গ্রামবাসীর মধ্য সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আকবরনগর গ্রামের বাসিন্দা মো.রাসেল আহমেদ বলেন, সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে সড়কের পাশের একটি সাইনবোর্ডে বাজারের নাম আকবরনগর লেখা হয়েছে। এ বিষয়টিকে নিয়ে মিরারচরের গ্রামবাসী বাজারের তাদের গ্রামের নাম না লেখায় সাইনবোর্ডটি ভেঙে দেয়। এই ঘটনার জেরে দুগ্রামের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আবার এর এক মাস পর মিরারচরবাসীরা জোর করে বাজারের নাম পরিবর্তন করতে চাই সেজন্যই আমরা আকবরনগর বাসী একত্রিত হয়ে এর প্রতিবাদ করছি।
কালিকাপ্রসাদ ইউপির চেয়ারম্যান মোঃ লিটন মিয়া বলেন, আকবরনগর ও মিরারচর গ্রামের নাম বাজারের সাইনবোর্ডে নাম লেখা নিয়ে দুইদল গ্রামবাসী এর আগেও বহুবা সংঘর্ষ করেছে। আজও তারা সরকারি সাইনবোর্ডের বাজারের নাম লেখাকে কেন্দ্র করে আবার সংঘর্ষে মেতে উঠে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশকে সাথে নিয়ে সংঘর্ষ থামায়। এই সমস্যা সমাধানের দুপক্ষের সাথে কথা বলে মিমাংসার জন্য বসবেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম জানান, দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দীর্ঘ সময় পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সাইনবোর্ডে এলাকার নাম নিয়ে ঘটনাটি ঘটে। এবিষয়ে মীমাংসার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। বর্তমানে এলাকায় পুনরায় আর কোন ঘটনা না ঘটে সেজন্যই পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে তিনি জানান।
(ঢাকাটাইমস/১২আগস্ট/এআর)