ইউপি চেয়ারম্যান থেকে মন্ত্রিত্ব: দাগহীন হেঁটেছেন সাধন চন্দ্র

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর-পোরশা ও সাপাহার) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। এক কথায় বলা যায় একজন সফল মন্ত্রী। কিন্তু তার এই সাফল্য একদিনে আসেনি।
১৯৮৪ সালে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরপর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন তিনি। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। কিন্তু দমে যাননি। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হন। এরপর দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জয়ী হন। ২০১৯ সালে তিনি প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েই পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।
একেবারে তৃণমূল থেকে উঠে আসা সাধন চন্দ্র মজুমদার খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-১ আসনে স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হয়েছেন কেউ। সাধন চন্দ্র মজুমদার ১৯৫০ সালের ১৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। নওগাঁ ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ (স্নাতক) পাস করেন। তার পৈতৃক বাড়ি জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে। তবে নওগাঁ শহরের পোস্ট অফিসপাড়ায় সপরিবারে বসবাস করেন। বাবা মৃত কামিনী কুমার মজুমদার ও মা মৃত সাবিত্রী বালা মজুমদার। তিনি চার কন্যাসন্তানের জনক। অত্যন্ত সৎ ও নিষ্ঠাবান হিসেবে সাধন চন্দ্র মজুমদারের সুখ্যাতি রয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের মধ্যেও তিনি পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার পাত্র।
করোনা মহামারিকালে খাদ্যমন্ত্রীর অবদান:
করোনা মহামারির সময় উপজেলা হেল্থ কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট একটি স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। শহর থেকে এত দূরে ছায়া সুনিবিড় গ্রামীণ জনপদ নিয়ামতপুরের জন্য এটা ছিল স্বপ্নের মতোই। অসাধারণ এ উদ্যোগটির উদ্যোক্তা ও স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি। কোভিড-১৯ এর প্রথম ঢেউয়ের ভয়াবহতা দেখে খাদ্যমন্ত্রী একান্ত নিজস্ব ভাবনায় উঠে এসেছিল হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়টি। তিনি বলেছিলেন অক্সিজেন না পেয়ে যেন কোনো রোগীকে কষ্ট পেতে না হয়।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে খাদ্যমন্ত্রীর ভূমিকা:
নিয়ামতপুরে সমতলভূমির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বসবাস করেন। বিগত ১৪ বছর আগে এইসব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান ছিল অনেকটাই নুন আনতে পান্তা ফুরায়ের মতোই। কিন্তু বর্তমান সরকার এবং খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের অক্লান্ত পরিশ্রমে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবন মানে আকাশ ছোঁয়া পরিবর্তন এসেছে।
আদিবাসী গোষ্ঠীর জীবনমান পরিবর্তনে মন্ত্রীর অবদান:
১৪ বছর আগে নিয়ামতপুরে বসবাসকারী আদিবাসীরা সুবিধা বঞ্চিত ছিল। বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে এমপি সাধন চন্দ্র মজুমদারের সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণে এই এলাকার আদিবাসীদের মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রগুলো সমৃদ্ধ হয়েছে। পাশাপাশি সরকার এদের জমির মালিকানার বিষয়টি সুরাহা করে দিয়েছেন। বর্তমানে আদিবাসীরা নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারছে। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প-এর আওতায় আদিবাসীদের আকাশে নব রবি উদিত হয়েছে।
কৃষি জমিতে দূর হলো পানি সংকট:
নওগাঁ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ। বছরে একটি মাত্র ফসল বৃষ্টি নির্ভর আমন চাষ করতেন এই এলাকার কৃষকেরা। তবে খাদ্যের সংকটের চেয়ে পানির সংকট ছিল প্রকট। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় পর ১৪ বছর সাংসদ থাকায় নির্বাচনী এলাকায় তৃণমূল থেকে নেতাকর্মী সু-সংগঠিত ও এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। এখন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে গভীর নলকূপের মাধ্যমে জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন হচ্ছে।
প্রতিবছর কৃষিতে উপজেলার প্রায় ১০ হাজার কৃষককে বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া হয়ে থাকে।
নিয়ামতপুরের উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয় বাড়াতে মন্ত্রীর অবদান:
নিয়ামতপুর উপজেলার বাহারী ঢঙে সাজানো উন্নয়নের পশরা দেখে মনে হয় এ যেন গ্রাম-গঞ্জ নয়; ইট, বালি, পাথর ও সিমেন্টে গড়া নান্দনিক উন্নয়নের এলাকা। নিয়ামতপুর ছিল এককালের দুর্গম এলাকা। এসব এলাকায় মানুষগণ জেলা শহর হতে যেন অনেক দূ-রে বাস করতো। তবে দেরিতে হলেও উন্নয়নের জোয়ার হতে ছিঁটকে পড়েনি নিয়ামতপুর। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে, সর্বস্তরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে উদ্ভাসিত হয়েছে এই স্থানগুলো। নওগঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার নিয়ামতপুরের দুর্গমতাকে ইতহাসে পরিণত করতে নিরলস প্রচেষ্টা করেছেন।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় মন্ত্রীর অবদান:
১৪ বছর আগে নিয়ামতপুরের সঙ্গে নওগাঁ সদর ও পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত ছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করে বর্তমান সরকার এই এলাকাকে উন্নয়নের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনে বিশাল ভূমিকা রেখেছেন। বর্তমানে নিয়ামতপুরের জনগণ সর্বক্ষণ নওগাঁ সদর ও অন্যান্য জেলায় নিরাপত্তার সঙ্গে যাতায়াত করতে পারছেন।
নিয়ামতপুরের শিক্ষা ব্যবস্থায় খাদ্যমন্ত্রীর অবদান:
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ১৪ বছরে নিয়ামতপুরের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ে গিয়েছেন অমূল্য উচ্চতায়।
নিয়ামতপুরে একশ আটাশটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তেতাল্লিশটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ছয়টি কলেজ রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন অকল্পনীয়। এক কোটি ২২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সাংশৈল আদিবাসী স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী হোস্টেল নির্মান, তিন কোটি টাকা ব্যায়ে চন্দননগর কলেজের চারতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ, ১ কোটি ২২ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নিয়ামতপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী হোস্টেল নির্মান করা হয়েছে।
ধর্মীয় উপাসনালয়ে অবদান:
নিজে হিন্দু ধর্মের অনুসারী হলেও প্রতিটি ধর্মের প্রতিই অগাধ শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা রয়েছে সাধন চন্দ্র মজুমদারের। যার প্রমাণ মিলবে নিয়ামতপুরে বিভিন্ন ধর্মীয় উপসনালয়ে। উপজেলায় ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন কেন্দ্রীয় মসজিদ। দ্বিতীয় দফায় নির্মাণ করা নিয়ামতপুর উপজেলা মডেল মসজিদ। যা নজর কাড়বে যে কারো। এ ছাড়া শিবপুরে আধুনিক মসজিদ ও মন্দির নির্মাণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মন্ত্রী।
সুবিধাভোগীদের জন্য তার অবদান:
নিয়ামতপুরের সকল নিম্ন শ্রেণির মানুষ, হতদরিদ্র পরিবারের মানুষ ভিজিএফ-ভিজিডির আওতাধীন রয়েছেন। এছাড়াও বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, হিজড়া ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতার আওতাধীন রয়েছেন উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ।
এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, দেশকে স্বাধীন করতে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। জীবনের মায়া করিনি কখনও। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে জীবনের একমাত্র আদর্শ হিসেবে শিখে এসেছি। তিনিই শিখিয়েছেন রাজনীতি কেবলই মানুষের জন্য। তার সুযোগ্যকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই আমি কাজ করে যাচ্ছি। এটি নিজের জীবনকে বিলাসি করার জন্য নয়। আর তাই রাজনীতির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কেবলই মানুষের জন্যই কাজ করে যাচ্ছি।
(ঢাকাটাইমস/৫সেপ্টেম্বর/এআর)

মন্তব্য করুন