উপকূলের শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়ে শঙ্কা

সমুদ্রের বালু ক্ষয়ে বসতি হারানোর আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে উপকূলের বাসিন্দারা। গত বছর শীত মৌসুমে কয়েক হাজার উপকূলের বাসিন্দাদের রাত্রিযাপন করতে হয়েছিলো গাছের নিচে। পলিথিন, কাপড় ও তাবু টাঙ্গিয়ে বালু-মাটির ওপরে বিছানা পেতে দিন-রাত কাটানো এক সীমাহীন ভোগান্তি। এদের অনেকেই বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টির পানিতেও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষের কোনভাবে বসবাসের জন্য ছোট একটি ঘর তোলার সামর্থ নেই। দুর্বিষহ মানবেতর জীবনযাপনের যেন শেষ নেই। এমন অবস্থার মধ্যে শিশু ও বয়োবৃদ্ধ মানুষের কেমন দশা হচ্ছে সে বিষয়ে সচেতন মহলের কোনো তদারকি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে উপকূলের শতাধিক বাসিন্দারা।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা উপকূলের ভূমিহীন বাসিন্দারা সরকারের উচ্ছেদের কবলে পরে প্রায় এক বছর দুরুহ সময় পার করছেন। হাজারো পরিবারের মানুষ শীত ও বর্ষা মৌসুম উপেক্ষা করে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। তাদের দুঃখ দুর্দশার খবর রাখেনি কোনো মহল। তীব্র শীতের প্রকোপ এবং কুয়াশার মধ্যে শিশুদের ডায়রিয়া, বৃদ্ধদের জ্বর হওয়ার সীমাহীন ভোগান্তির কথা মনে পরলে আজও আতকে ওঠেন এ সকল মানুষরা। অদ্যবদি মেলেনি স্থায়ী বসবাসের ঠাঁই। উচ্ছেদের শিকার এসকল পরিবারের ৯৫% নিম্নবিত্ত মানুষ। জীবন যুদ্ধের বাজিমাতে ক্ষুদ্র পেশার বদৌলতে কোনভাবে সামান্য উপার্জন করে টিকে আছেন। তাদের সংসারে জন্মলগ্ন অভাব লেগেই আছে; টানপোড়নের মধ্যে কোনোমতে বেঁচে আছেন। তাদের নেই কোনো পৈত্রিক অথবা নিজস্ব ক্রয় করা সামান্য বসবাসের জমাজমি।
প্রসঙ্গত, গত বছর নভেম্বরে সমুদ্র সৈকত কেন্দ্রীক কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে পূর্বে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত বেড়িবাঁধের বাইরে অর্ধশত বছর বসবাসরত বাসিন্দাদের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন।
জানা যায়, সরকারের সাথে স্থানীয় কতিপয় মহলের গত ৫০ বছর ধরে আদালতে একটি মামলা চলামান রয়েছে। সেই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি এখনো। এর মধ্যেই কোনো প্রকার পূনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই পূর্ব নোটিশ ব্যতীত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। যদিও তখন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘর ও জমি দেয়া হবে। কবে নাগাদ ঘর ও জমি দেওয়া হবে তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উচ্ছেদের শিকার হাজারো বাসিন্দারা ছেড়াফুটা টিন ও ভাঙ্গাচুড়া কাঠ দিয়ে কোনরকম রান্না ঘরের আদলে ছোট দোচাঁলা মাচা দিয়ে ঘর তুলেছেন। গাদাগাদি করে পরিবারের সকলে এক ছাঁউনির নিচে একত্রে বসবাস করে আসছে। কেউ আবার পলিথিন ও তালপাতা দিয়ে ঘর বানিয়ে থাকছেন। এদের মধ্যে রয়েছে ৯০% সামর্থহীন মানুষ। বর্তমান বর্ষা মৌসুম নাগাদ অধিকাংশ মানুষই রয়েছে মারাত্মক রোগ জীবানুর ঝুঁকিতে। এই বিষয়ে নেই কোন সচেতনতা ব্যবস্থা।
মূলত এসকল বাসিন্দাদের একদিকে সমুদ্রের কড়াল গ্রাস তাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। অপরদিকে সমুদ্রে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে তাদের বাড়ি-ঘর পর্যন্ত পানি প্রবেশ করে। এতে চরম এক জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে বালু ক্ষয়ের কবলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়ায় সমগ্র উপকূল জুড়ে এখন দুর্ভোগ আরো প্রকট রূপ ধারণ করেছে। বছর ঘুরে গেলেও ৮০% বাসিন্দারা তুলতে পারেনি স্বাভাবিক পরিবেশে মাথা গোজার মতো বসবাসের বসত বাড়ি। তীব্র তাপদাহ, শীত, ঝড় বৃষ্টি এখন তাদের নিত্য সঙ্গী যেনো। মানবেতর জীবনের পরিসমাপ্তি নেই যেনো। উপকূলের বাসিন্দারা বলছেন এভাবে আর কতোদিন কাটবে? অসহায় মানুষের কি কোনো উপায় নেই? সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতি কি তাহলে আমাদের বাস্তুহারা মানুষের জন্য কোনো প্রতিফলন হবেনা? তারা দাবি করেন দ্রুত এই ভোগান্তি লাগবে সরকার যেন ভূমিহীনদের ঘর ও জমি দিয়ে পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করেন।
উপকূলে বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তির শিকার ৯৫% মানুষ ভূমিহীন। এদের নেই কোনো স্থায়ী বসবাসের জমাজমি। অসহায়ত্বের বেড়াজালে কোথাও যেতে পারছে না তারা। তাই নিরুপায় হয়ে শত ঝড়-বন্যা উপেক্ষা করে বাধ্য হচ্ছেন এসবের মধ্যে বসবাস করতে। উপকূলে ভূমিহীন মোসা. শাহিনুর, মো. মিলন, বিধবা চিনিমতি, শাহজাহান, সাইফুল, আ. সোবাহান, মো. নাঈমসহ অর্ধ শতাধিক বাসিন্দাদের সাথে কথা হলে তারা জানান, সরকারের মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন ছাড়া আমাদের বিকল্প অবলম্বন নেই। সমুদ্রের পানি আমাদের ঘরে প্রবেশ করে, আমাদের ঠাঁই নেয়ার মতো কোন স্থান নেই। আরো অর্ধ শতাধিক ভূমিহীন বাসিন্দারা দাবি করে বলেন, উপকূলের অসহায় মানুষের জন্য জমি ও ঘর বরাদ্দের মাধ্যমে পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি যোগদানের আগেই কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধের বাইরে বাড়িঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে। মূলত কুয়াকাটা মানুষ ঘুরতে এসে নান্দনিক সৌন্দর্য দেখতে চায়। আধুনিক মানের পর্যটন নগরী সৃষ্টির লক্ষ্যে মাস্টার প্লানের আওতায় কুয়াকাটাকে সাজানোর পরিকল্পনা করছেন সরকার। বেরিবাঁধের বাইরে ছেঁড়া পলিথিন, ভাঙ্গাচুরা ছেঁড়া ফুটা দোচালা টিন দিয়ে বসবাস খারাপ দেখায়। আমরা তাদের কথা ভেবে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করতেছি, তারা চাইলে আমরা সেখানে ভালো পরিবেশে তাদের জন্য ঘর নির্মাণ করে দিবো।
(ঢাকা টাইমস/২২সেপ্টেম্বর/এসএ)
সংবাদটি শেয়ার করুন
বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

বগুড়ায় যুবককে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা

ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ

চট্টগ্রামে আটকে পড়ল বিমান, ৩৪ ঘণ্টা অপেক্ষা ১৭০ যাত্রীর

মানিকগঞ্জে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

স্মার্ট নড়িয়া-সখিপুর-শরীয়তপুর গড়তে সকলের সহযোগিতা চাই: এনামুল হক শামীম

শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে সকল ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ইসি আলমগীর

কলেজছাত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক, বিয়ের দাবিতে অনশন

এমপি হতে চান পরিচ্ছন্নতাকর্মী রোকেয়া

বরিশালের দুটি আসনের প্রার্থীদের সম্পদ বেশি, স্ত্রীদেরও কম নয়
