স্ত্রীকাণ্ডের পর আক্কেলপুর ইউএনও ওএসডি
স্ত্রীকাণ্ডের পর জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আরিফুর ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তাকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব কানিজ ফাতেমা স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলামকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী সচিব) পদে নিয়োগ করা হলো। জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে স্ত্রীর অধিকার পেতে জয়পুরহাট আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিকুল ইসলামের কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন জিনাত আরা খাতুন নামের এক শিক্ষিকা। তিনি দিনাজপুর কলেজিয়েট গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক বলে জানিয়েছেন জিনাত আরা খাতুন। ঘটনার দিন বিকাল প্রায় ৪টার দিকে জিনাত আরা খাতুন সন্তান ও পরিবারের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুল ইসলামের কার্যালয়ে যান। এরপর সেখানে শুরু হয় হৈচৈ। ইউএনও তার মোবাইল কেড়ে নিয়ে আনসার সদস্যদের দিয়ে হেনস্থা করে বাইরে বের করে দেন বলে অভিযোগ করেন জিনাত আরা। এরপর বাধ্য হয়ে জিনাত আরা ইউএনওর কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সড়কে বাস থামিয়ে অনশন শুরু করেন। সেখানে এ নিয়ে বেশ উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
জানা যায়, বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বুরুজ গ্রামের জোনাব আলীর বিবাহিত ছেলে আরিফুল ইসলামের সঙ্গে তৎকালীন দিনাজপুর সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার ভূমি দায়িত্ব থাকালীন সময় দিনাজপুর সদর উপজেলার উপশহর এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের মেয়ে শিক্ষিকা জিনাত আরার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রায় ২০ লাখ টাকা দেন মোহরে রেজিষ্ট্রি মূলে বিয়ে হয় আক্কেলপুর ইউএনও আরিফুল ইসলামের সঙ্গে। বিয়ের সময় তিনি প্রথম স্ত্রীর পরিচয় গোপন রাখেন। এরপর তাদের সংসারে ১৭ মাসের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ইউএনও আরিফুল ইসলামের দুই স্ত্রীর মোবাইল ফোনে দুজনই আরিফুলের স্ত্রীর পরিচয়ে ঝগড়া হয়।
এরপর বুধবার বিকালে ইউএনওর স্ত্রী জিনাত আরা তার ১৭ মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে আরিফুল ইসলামের বাসায় গেলে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ইউএনওর বাড়িতে থাকা আনসার সদস্য তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এ সময় ইউএনওর স্ত্রী জিনাত আরা তার শিশু সন্তানকে নিয়ে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনের সড়কে বসে পড়ে। এ সময় উৎসুক জনতা সড়কে ভিড় করলে দু'পাশে অনেক যানবাহন আটকা পড়ে।
এক পর্যায়ে আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম আকন্দ তার অফিসের নারী ও পুরুষ কর্মচারী ও স্থানীয় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী জোরপূর্বক ইউএনও'র স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যেতে চায়। এ সময় ইউএনওর স্ত্রী যেতে না চাইলে বিষয়টি মীমাংসা এবং সুবিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জোরপূর্বক টেনে হিঁচড়ে উপজেলা পরিষদে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ জিনাতের।
এরপর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কক্ষে বসিয়ে ইউএনওর স্ত্রীকে জানানো হয়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ইউএনও তার স্ত্রী জিনাত আরাকে তালাক দিয়েছেন। এমন খবর জানতে পেরে সন্ধ্যার পর ইউএনও'র স্ত্রী জিনাত আরা তার সন্তানকে নিয়ে চেয়ারম্যানের কক্ষ থেকে বের হয়ে যান।
জিনাত আরা খাতুন দাবি করে বলেন, দিনাজপুর সদরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব ছিলেন আরিফুল ইসলাম। তখন আমি একটি জমি খারিজ করতে গিয়ে তার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ হয়। পরে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। একপর্যায়ে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউসে আমাদের বিয়ে হয়। চলতি মাসের ২৪ শে সেপ্টেম্বর আরিফুল ইসলাম আমাকে একতরফা তালাক দেয় সেটি আমি জানতাম না। আমি যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সব মাধ্যম থেকে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমি বাধ্য হয়ে আক্কেলপুর আরিফুলের বাসভবনে এলে আমাকে নানাভাবে অপদস্ত, হেনেস্থা এবং মোবাইল ফোন করে নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তখন আমি রাস্তায় বেশি অনশন শুরু করি। এরপর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ অনেকেই আমাকে টেনে হিঁচড়ে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যায়। আরিফুল আমার আরেকটি সন্তান গর্ভে নষ্ট করতে বাধ্য করেন বলে তিনি জানান।
এর আগে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে। আইনের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে। এটি একটি পারিবারিক বিষয়।
(ঢাকা টাইমস/২৯সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এসএ)