অক্টোবর ঘিরে চলবে রাজপথ দখলের লড়াই

রুদ্র রাসেল, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৩৩ | প্রকাশিত : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:২৭

১ নভেম্বর শুরু হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গননা। সে কারণে রাজনীতিতে অক্টোবর মাস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এছাড়া দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিও অক্টোবরকে ঘিরে তৈরি করেছে রাজপথ দখলে রাখার ছক। এ কারণে মাসটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে।

বিএনপি এ মাসে সরকার পতনের আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পরিকল্পনায় মাঠে রয়েছে। আওয়ামী লীগও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। সব মিলিয়ে অক্টোবর মাসজুড়ে প্রকট হচ্ছে রাজনীতির লড়াই। একইসঙ্গে বাড়ছে উদ্বেগ ও শঙ্কাও।

বিশ্লেষকদের ধারণা, অক্টোবরের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি। দলটির নেতারা ইতোমধ্যে এও বলেছেন যে ৩০ অক্টোবরের মধ্যেই সরকারের পতন ঘটবে।

আর বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্য শুনে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগও। দুই দলই ঘোষণা করেছে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাজপথ দখলে রাখতে টানা কর্মসূচি দিয়ে যাবে বলে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেছেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, নভেম্বরের শুরুতেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগের সময়টা খুবই স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচনা করছে ক্ষমতাসীনেরা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণা দেওয়ার পর আওয়ামী লীগ ও সরকার কিছুটা হলেও চাপে পড়েছে। এ সুযোগে বিরোধী দল বিএনপি এক দফার দাবিতে ‘মরণকামড়’ দিতে চাইছে। এ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। তার কিছু হলে দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে আসতে পারেন, এমন আশঙ্কাও আছে। ফলে সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগ রাজপথ দখলে রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, অক্টোবর মাসজুড়ে বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি থাকবে আওয়ামী লীগের। এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বিএনপি যে ধরনের কর্মসূচি দেবে, আওয়ামী লীগও একই রকম কর্মসূচি নেবে। বিএনপির কর্মসূচি না থাকলেও সহযোগী সংগঠনকে দিয়ে ফাঁকা দিনগুলোয়ও আওয়ামী লীগ কোনো না কোনো কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকবে।

এদিকে তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারের ওপর চাপ তৈরি করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে একটি ফয়সালায় পৌঁছাতে চায় বিএনপি। এ কারণে অক্টোবর মাসে টানা কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে সে চাপ তৈরি করাই এখন দলটির লক্ষ্য।

এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিনগুলোকে হিসাবে নিয়ে ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন বিএনপিকে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অক্টোবর মাসকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তারা। এটি হবে তাদের দিক থেকে সরকারবিরোধী টানা আন্দোলন-কর্মসূচির শেষ ধাপ। বর্তমানে রাজধানী ঢাকা ঘিরে সমাবেশ ও অঞ্চলভিত্তিক রোডমার্চ কর্মসূচি চলছে। ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ১৫ দিনের এ কর্মসূচি ৫ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। চট্টগ্রামে রোডমার্চ শেষে সমাবেশ থেকে পরবতী কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘৫ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি আছে। চলমান আন্দোলনে শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে নতুন কর্মসূচি ঠিক করে ঘোষণা করা হবে।’

এ অবস্থায় চলমান আন্দোলনের গতি বাড়াতে অক্টোবরে নতুন ধরনের কর্মসূচির চিন্তা করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। গত সোমবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অক্টোবরে ঢাকায় মহাসমাবেশ, সচিবালয় ঘেরাও, ঢাকা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির প্রস্তাব এসেছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন হলে আর হাতে সময় আছে তিন মাস। ১ নভেম্বর থেকে নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে। কারণ, সংবিধান অনুসারে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ১ নভেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। এ সময়ে যে সরকার থাকবে, তা নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে পরিচিত।

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২৪ মে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। ঘোষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না দেশটি। এর প্রায় চার মাস পর ২২ সেপ্টেম্বর ওই ভিসা নীতি কার্যকরের পদক্ষেপ নেওয়া শুরুর কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার পর বিএনপি মাঠে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ পায়। এখন দেশটির ভিসার বিধিনিষেধ কার্যকরের সিদ্ধান্তের পর বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো সরকার পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবিতে চূড়ান্ত কর্মসূচির পথে এগোচ্ছে, যা অক্টোবরে শুরু হতে পারে। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩৬ দিনের সময়সীমা এসেছে। সব মিলিয়ে অক্টোবর ঘিরে রাজপথে থাকছে দুই দলের সমানে সমান লড়াই।

(ঢাকাটাইমস/০১অক্টোবর/আরআর/আরকেএইচ/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এবারের জাতীয় নির্বাচন সহজ নয়: নাছিম

মৃত বিএনপি নেতাকে আড়াই বছরের সাজা

বিএনপির সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চুপ থাকা বুদ্ধিজীবীরা সুবিধাবাদী: তথ্যমন্ত্রী

নাশকতা মামলা: টুকু-জুয়েলের দুই বছরের কারাদণ্ড

নির্বাচনের নাটক মঞ্চস্থ করতে আ.লীগ দেশকে বিপর্যয়ের পথে ঠেলে দিয়েছে: গণতন্ত্র মঞ্চ

অবরোধের সমর্থনে ধানমন্ডিতে ছাত্রদলের মিছিল

শ্রমজীবী মানুষদের প্রতি নির্দয় আচরণ করছে সরকার: এবি পার্টি

স্বৈরশাসককে বিদায় করতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই: এলডিপি

নির্যাতিত ও কারাবন্দি নেতাদের পরিবারের পাশে বিএনপি

সরকার অত্যন্ত সুকৌশলে পোশাক শিল্প ধ্বংসের নীল নকশা বাস্তবায়ন করছে: রিজভী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :