তাহলে কী লাল ফিতায় আটকে গেল এডিসি হারুনকাণ্ডের তদন্ত, যা জানা গেল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৩৩ | প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৪৮

এডিসি হারুনকাণ্ডে ডিএমপি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন চার সপ্তাহেও জমা পড়েনি। চার দফায় পিছিয়ে সর্বশেষ ১ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সেই তারিখেও জমা দেয়া হয়নি প্রতিবেদন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, হারুনকাণ্ড কি লাল ফিতায় বন্দি হয়ে গেল? তা না হলে বারবার তারিখ পেছানোর পরেও কেন প্রতিবেদন জমা দেয়নি তদন্ত কমিটি? কেন এত কালক্ষেপণ? এমন প্রশ্ন এখন ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে।

হারুনকাণ্ডের পর তদন্ত প্রতিবেদন দিতে কেন দেরি হচ্ছে এসব বিষয় নিয়ে ঢাকা টাইমস সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা বলছেন, নতুন কমিশনার দায়িত্ব নেয়ার পর বিষয়টি তাকে ব্রিফিং করা হয়নি। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি কমিটি করেছে; তাদের প্রতিবেদনের দিকে তাকিয়ে আছেন পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে নতুন দায়িত্ব নেয়া ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, এডিসি হারুন-সানজিদার ঘটনাটির তদন্ত চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটির রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গত ৯ সেপ্টেম্বর শাহবাগ থানায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বেদম প্রহার করেন রমনা জোনের তৎকালীন এডিসি (সাময়িক বরখাস্ত) হারুন অর রশীদ ও থানা পুলিশের কতিপয় সদস্য। তাদের উপর্যুপরি নির্যাতনে ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম গুরুতর আহত হন। এতে নাঈমের পাঁচটি দাঁত উপড়ে যায়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে সম্প্রতি তিনি হাসপাতালে ছেড়েছেন। তবে তার কানে অপারেশন করতে হবে।

গত সপ্তাহের শুরুতেই প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল, তারপরেও কেন দেরি- এমন প্রশ্নে ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখনও এগুলো নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুন কমিশনার দায়িত্ব নিয়েছেন, তাকে ব্রিফিং করতে হবে। তিনি তো সবকিছু ওয়াকিবহাল নন। এসব নিয়ে কেউ এখন ভাবছেও না। আর এ মুহূর্তে দেয়ার মতো কোনো তথ্যও নেই।’

শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধরের ঘটনায় গঠিত পুলিশের তদন্ত কমিটি চার দফায়ও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। ওই মারধরের ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের বরখাস্ত হওয়া অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সর্বশেষ দিনক্ষণ থাকলেও আরও তিনদিন সময় চায় কমিটি। পরে আরও তিন কার্যদিবস সময় বাড়ানো হয়, যা ১ অক্টোবর শেষ হয়ে গেছে।

আলোচিত এ ঘটনায় আরেক তদন্ত কমিটি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের প্রতিবেদনের দিকে তাকিয়ে আছে পুলিশের তদন্ত কমিটি। তবে পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত কমিটির কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মন্ত্রী বলেছেন, যতটুকু অপরাধ করবে, ঠিক ততটুকু শাস্তি দেওয়া হবে। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে আমিও একই কথা বলতে চাই, যতটুকু অপরাধ করবে, ঠিক ততটুকু শাস্তি দেওয়া হবে।’

ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতনের ঘটনায় প্রথমে এডিসি হারুনকে পিএমও উত্তর বিভাগে বদলি করা হয়। এরপর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দপ্তরে, পরবর্তীতে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) গোলাম মোস্তফাকেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, তদন্ত কমিটির কাছে এডিসি হারুন, এডিসি সানজিদা আফরিন, তার স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। জড়িত ছাত্রলীগের নেতাদেরও বক্তব্য নিয়েছে তদন্ত কমিটি। তাদের বক্তব্যে সেদিন কী ঘটেছিল, তা জানা গেছে। এ ঘটনায় সব পক্ষের দায় পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্ত শেষ হয়েছে।’

প্রতিবেদন জমা দিতে গড়িমসির কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করেছে। কমিটির প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।’

জানা গেছে, এডিসি হারুন অর রশিদ রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক এবং তার স্ত্রী সানজিদা আফরিনের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে শাহবাগ থানায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শাহবাগ থানায় ধরে এনে মারধর করেন। এ ঘটনায় তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। দুই দিনের ভেতরে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হয়ে পাঁচ দিনের সময় চেয়ে আবেদন করে তদন্ত কমিটি। পরে কমিশনার তাদের আবেদন মঞ্জুর করেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাদের প্রতিবেদন দাখিলের শেষ দিন ছিল। কিন্তু কমিটি প্রতিবেদন দাখিল না করে আবার সাত দিন সময় বৃদ্ধির আবেদন করে। কমিশনার তিন দিন সময় বাড়িয়ে দেন। এ হিসাবে ২৪ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের শেষ সময় ছিল। কিন্তু প্রতিবেদন না দিয়ে নতুন করে তিন দিনের সময় চায় কমিটি। সেই হিসাবে ২৭ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। এরপরেও আরও তিন কার্যদিবস তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আবেদন করা হয়, যা গত ১ অক্টোবর শেষ তারিখ ছিল।

মারধরের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ ও রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হককে নিয়ে কথা বলেছেন নতুন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গত সোমবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটির রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা যতটুকু অপরাধ করবে, ঠিক ততটুকু শাস্তি দেওয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/০৮অক্টোবর/এসএস/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :