আইসল্যান্ডে কেন এত ভূমিকম্প?

শাহনূর শাহীন
| আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৫৮ | প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:১৪

পৃথিবীর সর্ব উত্তরের মানব বসতি বরফের দেশ আইসল্যান্ড। নাম শুনলেই মনে হয় বরফে আচ্ছাদিত এক রাজ্য। আটলান্টিকের বুকে পৃথিবীর আশ্চর্যতম প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময় পরিবেশের অপার সৌন্দর্যের এক দেশ আইসল্যান্ড। ভৌগলিকভাবে আইসল্যান্ড উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অংশ বা কাছাকাছি হলেও দেশটি ইউরোপের অন্তর্ভুক্ত। আইসল্যান্ডের নিকটবর্তী দেশটিও ৮০০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত- দক্ষিণ পূর্ব উপকূলের ব্রিটিশ স্কটল্যান্ড।

আজ থেকে প্রায় ১১ শত বছর আগে ইউরোপের ডেনমার্ক থেকে ভাইকিং জলদস্যুরা সরকার বা প্রশাসনিক বাধা বিপত্তি এড়াতে সাগর পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর অষ্টম ও ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই দ্বীপে এসে আশ্রয় নেয়। এখান থেকেই তারা সমুদ্রপথে পরিচালনা করতে থাকে ভয়ংকর সব দস্যুতা, সেই প্রথম মানব বসতি আইসল্যান্ডে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো দস্যুদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই ভূমি এখন পৃথিবীর সব থেকে সুখী দেশগুলোর একটি। যেখানে নেই কোনো সেনাবাহিনী কিংবা বিমান বাহিনী। এমনকি এক লাখ তিন হাজার ১২৫ বর্গ কিলোমিটারের এই দেশটির বিশাল আকারের সমুদ্রসীমা থাকলেও নেই কোনো নৌবাহিনী। পুলিশের হাতে থাকে না কোনা বন্দুক।

দেশটি এতটাই পরিষ্কার যে, পুরো দেশে একটি মশাও নেই। এই দেশটির নাম শুনলেই শুধু হিমবাহের কথা মনে পড়ে। কিন্তু অবাক করা তথ্য হলো এখানে এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানি এতটাই গরম যে, তীব্র শীতের দিনেও বাসিন্দাদের পানি গরম করতে হয় না। পানি থেকে সব সময় জলীয় বাষ্প উদগিরণ হতে থাকে। যার কারণে দেশটির রাজধানীর নাম হয়ে যায় ‘ধোঁয়াটে উপসাগর’। হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন। স্থানীয় ভাষায় ‘রেইকিয়াভিক’ নামের অর্থ ‘ধোঁয়াটে উপসাগর’। শীতকালে এখানে সূর্যের আলোর দেখা মিলে না। অন্যদিকে গ্রীস্মের সময় কখনো কখনো ২৪ ঘণ্টাই দিনের আলোতে উজ্জ্বল থাকে বরফের এই দেশ।

সমুদ্রের মাঝে অবস্থান হওয়া এই দেশটিতে চাষাবাদের উপযোগী ভূমি নেই বললেই চলে। পৌনে চার লাখ জনসংখ্যার এই দেশে পশুপালন ও সমুদ্রে মাছ ধরাই প্রধান পেশা হিসেবে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তথাপিও প্রাকৃতিক সম্পদ ও পর্যটন আকর্ষণের কারণে দেশটি বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশগুলোর প্রথম সারির একটি। বেকারদের ভাতা দেওয়া হয় এখানে সর্বনিম্ন ৩০০০ হাজার ইউরো। কিন্তু প্রশ্ন হলো এত চমৎকার একটি দেশ কেন বারবার ভূমিকম্পের মুখে পড়ে? এর কি কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে? গেল শুক্রবার দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মাত্র ১৪ ঘণ্টায় ৮০০ বার ভূমিকম্পন অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে যার সর্বোচ্চটির মাত্রা ছিলো ৫.২।

বিজ্ঞান বলছে, ভূগর্ভস্থ টেকটনিক প্লেটের পারস্পরিক সংঘর্ষের কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে। আর উত্তর আটলান্টিক মহাসগারের এই দেশটির তলদেশে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সার্বক্ষণিক সক্রিয় ভূ-গাঠনিক প্লেটগুলির আন্তঃসীমানা অবস্থিত। প্রতিনিয়ত সমুদ্রের গর্জন ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এই টেকটনিক প্লেটে ঘনঘন সংঘর্ষ হয়ে থাকে। আর এই কারণেই আইসল্যান্ডে এত ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের পরিমাণ এত বেশি যে, এখানকার বাসিন্দাদের কাছে ভূমিকম্প একটি অতি সাধারণ ব্যাপার। তবে এবারের ভূমিকম্পগুলো ভয়ংকর হওয়ার বার্তা দিচ্ছে। কেননা ভূমিকম্প প্রবন এই টেকটনিক প্লেটের সীমানার ঠিক উপরেই রয়েছে একটি আগ্নেয় দ্বীপ বা আগ্নেয়গিরি।

অতিরিক্তি ভূমিকম্পের কারণে এই আগ্নেগিরি থেকে অগ্নুৎপাত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই কারণে এই অঞ্চলের প্রায় ৪ হাজার বাসিন্দাকে ইতোমধ্যে দেশের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে দেশটির সরকার।

(ঢাকা টাইমস/১২নভেম্বর/এসএস/কেএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :