খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত কুষ্টিয়ার গাছিরা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:০২| আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:২৫
অ- অ+

প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা জানান দিতে শুরু করেছে কার্তিক মাসের শুরু থেকেই। শহরে এর প্রভাব বোঝা না গেলেও গ্রামাঞ্চলে সন্ধ্যা হলেই শীত-শীত অনুভূত হয়, দেখা মিলে কুয়াশারও। কার্তিকের শেষভাগে অগ্রহায়নের শুরু থেকেই বাড়তে শুরু করেছে শীতের তীব্রতা। শীতের শুরু থেকেই গ্রামীণ জনপদের মাঠে ময়দানে, রাস্তাঘাটে খেজুর গাছে দেখা মিলছে গাছিদের। একজন গাছি খেজুর গাছকে সুন্দর করে পরিস্কার করে গাছের বুক চিরে রস বের করে। সুস্বাদু এই রসের চাহিদা রয়েছে দেশের আনাচে-কানাচে। শীত যত বাড়ে খেজুর রসের চাহিদাও ততো বাড়ে। আবহমানকাল থেকে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে খেজুর রস দিয়ে তৈরি হয় নানা ধরনের পিঠা পায়েস।

বর্তমানে শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ভ্রাম্যমাণ টং দোকান দিয়ে যান্ত্রিক ইট পাথরের মানুষকে কিছুটা শীত মৌসুমের পিঠার স্বাদ দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। মিষ্টি শীতের শুরুতেই কুয়াশা উপেক্ষা করে খেজুরের রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কুষ্টিয়ার গাছিরা।

শহরের ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৭নং ওয়ার্ডের ফুলবাড়িয়া গ্রামে কুষ্টিয়া বাইপাস সড়কের পাশে ও বটতৈল গ্রামে আছে প্রচুর খেজুরের গাছ। এখানে রাজশাহী থেকে গাছিরা এসে রস সংগ্রহ করেন। এছাড়া মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলা এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার অন্তর্গত গ্রামগুলোতেও প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে আগুনে জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি (ঝোলা) গুড়।

শীত মৌসুমের রস সংগ্রহের এই সময়টাতে কাজের চাপে যেন দম ফেলারও সময় নেই গাছিদের। কুষ্টিয়া শহরে খেজুর রসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এক গ্লাস রস সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু রস বিক্রি করে অনেকটা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে গাছিরা। খেজুর গাছের বুক চিরে সাদা অংশ বের করে একটি পাইপ লাগিয়ে মাটির পাত্র (কলসি) বেঁধে সকাল ও সন্ধ্যায় রস সংগ্রহ করা হয়।

নেইমার মেসি নামে এক গাছি জানান, শীতের শুরু থেকেই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করতে শুরু করি। তবে আরও আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। আমরা খেজুর বাগান মৌসুম ভিত্তিতে লিজ (চুক্তিভিত্তিক) নিয়ে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করি। বর্তমানে শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির কারণে লাভ খুব সামান্য হয়। রস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পাটালিগুড়, লালি (ঝোলা) গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। বর্তমানে পাইকারি পাটালিগুড় বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়।

পরিবেশবিদ রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও কুষ্টিয়ায় যে পরিমান খেজুর গাছ ছিল এখন তা অর্ধেকেরও কম। আবার কিছু গাছে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় খেজুর রসকে তারি (নেশাদ্রব্য) বানিয়ে বিক্রি করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আরও একটু বৃদ্ধি পেলে এই গাছগুলো থেকে গুড় তৈরির রস সংগ্রহ সম্ভব। মানুষ প্রয়োজনে আবার কিছুটা অপ্রয়োজনে খেজুর গাছ কেটে ফেলছে, এক সময় খেজুর গাছের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে।

ডা. হোসেন ইমাম জানান, খেজুর রস সুস্বাদু ও উপকারী পানীয়। তবে ঐতিহ্যের ধারক এই খেজুর রসের মাধ্যমে বর্তমানে ‘নিপা ভাইরাস’ নামক একটি রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। নিপা ভাইরাস মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। তবে অন্তত ৭০-৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ফুটিয়ে খেতে পারলে নিপা ভাইরাস ছড়ানোর আশংকা অনেকাংশে কম থাকে। তাই নিজের কথা চিন্তা করে সবাইকে খেজুর ও তালের রস ফুটিয়ে খাওয়া উচিত।

(ঢাকাটাইমস/১৪ নভেম্বর/ইএইচ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আ.লীগকে নিষিদ্ধ করলে ভালো হতো: জামায়াত আমির
জামালপুরে মাদ্রাসায় ছাত্রী ভর্তিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০
ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছে ডিএনসিসির কর বকেয়া ৩০ কোটি টাকা
শহীদ নিজামীর খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে ইনশাআল্লাহ: রফিকুল ইসলাম 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা