মেলান্দহে অরক্ষিত রেল ক্রসিং যেন মরণফাঁদ!
‘নিজ দায়িত্বে পারাপার হোন, পারাপারের সময় দুর্ঘটনার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়’—এমন লেখা সংবলিত সাইনবোর্ড রয়েছে লেভেল ক্রসিংগুলোর দুপাশে। কিন্তু নেই কোনো গেটম্যান। অরক্ষিত এসব লেভেল ক্রসিং দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যাত্রী ও পণ্যবাহী ছোট-বড় যানবাহন। এমনি
চিত্র দেখা গেছে জামালপুরের মেলান্দহের একাধিক লেভেল ক্রসিংয়ে।
অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এসব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে নেই কোন গেটম্যান। শুধু সতর্কতা মূলক সাইনবোর্ড দিয়েই এর দায়ভার এড়ানোর চেষ্টা করছে সংশ্লিষ্টরা। এতে মৃত্যু ঝুঁকি বেড়েই চলছে।
রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, মেলান্দহ উপজেলায় রেলপথে ১২টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৪টিতে গেটম্যান আছে। বাকি ৮টি লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত কোনো গেটম্যান নেই । এই সব লেভেল ক্রসিং গুলোতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু।
স্থানীয়রা জানান, 'অরক্ষিত লেভল ক্রসিং প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রতিবছরই দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে মানুষ। ২০১৫ সালে শ্যামপুর লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার যাত্রী একই পরিবারের ৩ জনসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। 'ওই দুর্ঘটনার পরে ওই জায়গায় গেটম্যান নিয়োগ দেয়া হয়। বাকি অরক্ষিত যেসব লেভেল ক্রসিং প্রতিনিয়ত ঘটেছে দুর্ঘটনা। সবাই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। অথচ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা বলছেন, অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়লেও তা প্রতিরোধে নেই শক্ত কোনো পদক্ষেপ। দ্রুত এসব ঝুঁকিপূর্ণ লেভেল ক্রসিংয়ে বেরিয়ার ও গেটম্যান নিয়োগের দাবি জানান এলাকাবাসী।
সরেজমিনে উপজেলার শাহজাদপুরে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে গিয়ে দেখা যায়,'গেটম্যান না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে পরিবহন। সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগিয়ে রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
অটোচালক বাবুল বলেন, 'গেটম্যান না থাকায় ট্রেন আসছে কি না গাড়ি থামিয়ে আগে দেখতে হয়। আবার শীতের রাতে দেখাও যায় না। হঠাৎ কোন সময়ে যদি না দেখা হয়। তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। যেসব জায়গায় গেটম্যান নেই, 'দ্রুত সেসব জায়গায় গেটম্যান দেয়ার দাবি জানাই।
অরক্ষিত রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং এলাকার নজরুল ইসলাম নামে এক বলেন, 'কখন ট্রেন আসে তার তেমন ঠিক ঠিকানা নেই। রাতে ইসলামপুর দিকে থেকে যদি ট্রেন আসে শীতের রাতে তাহলে রাস্তায় থেকে দেখা যায় না। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গেটম্যান বলেন, 'স্টেশনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় সময়ই ট্রেন আসার অনেক আগে লেভেল ক্রসিং বন্ধ করতে হয়। মোবাইল করে অন্য গেটম্যানদের কাছে থেকে জেনে নিতে হয়। লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের ইঞ্জিন দেখে ব্যারিয়ার দিয়ে ট্রেন পার করতে হয়। রাতে ঘন কুয়াশায় ট্রেনের শব্দ শুনে দায়িত্ব পালন করতে হয়। আবার গভীর রাতে ট্রেনের আলো দেখে কিংবা হুইসেল শুনে ব্যারিয়ার দিতে হয়। এ কাজ করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়।
মেলান্দহ রেলওয়ে স্টেশনে কর্মকর্তা (স্টেশন মাস্টার) মফিজুর রহমান বলেন, 'গেটম্যান নিয়োগের ব্যাপারে এটি আমাদের কোন কাজ না। রেলওয়ে বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভালো জানে এ বিষয়ে। তবে যেসব লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান নেই, সেখানে সতর্কতামূলক নির্দেশনা সাইনবোর্ড দেওয়া রয়েছে। সর্তকতার সঙ্গে রেলক্রসিং পারাপারের পরামর্শ দেন এ কর্মকর্তা।
(ঢাকাটাইমস/১৯নভেম্বর/এআর)