লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ পালন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যসহ বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৩’ পালন করেছে।
স্থানীয় সময় বুধবার লন্ডনে ন্যাশনাল আর্মি মিউজিয়ামে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম জাতির পিতা এবং সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যসহ বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে ধর্মনিরপেক্ষ এবং প্রগতিশীল মূল্যবোধ ভিত্তিক বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য এবং দূরদর্শী নেতৃত্বে যুক্তরাজ্যের সাথে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা ও কৌশলগত সম্পর্ক গত এক দশকে আরও সুদৃঢ় হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ, উন্নত, আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে গঠন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাইকমিশনার বলেন, গত বছর বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে প্রথম প্রতিরক্ষা সংলাপ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। শীঘ্রই দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা সংলাপ শুরু হবে।
তিনি ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ বাস্তবায়নসহ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের সাথে বহুমাত্রিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও জোরদারের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
হাইকমিশনার বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর অসাধারণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বৈশ্বিক মঞ্চে জাতীয় পতাকাবাহী হিসেবে এ পর্যন্ত ৪৭টি দেশে ৬৫টি মিশনে অংশ নিয়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
হাইকমিশনার গত মে মাসে যুক্তরাজ্যে রাজার করোনেশন প্যারেডে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেন, যুক্তরাজ্যের সশস্ত্র বাহিনীর সাথে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর দীর্ঘ এবং দৃঢ় প্রতিরক্ষা সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে উভয় দেশ সন্ত্রাস দমন, দুর্যোগ মোকাবিলা এবং অন্যান্য পারস্পরিক স্বার্থে প্রশিক্ষণ প্যাকেজ বিনিময় করে। কৌশলগত অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করতে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য থেকে উল্লেখযোগ্য সামরিক সরঞ্জামও সংগ্রহ করেছে।
অনুষ্ঠানে লন্ডন হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল মতিন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো নির্মাণ, আর্তমানবতার সেবাসহ জাতি গঠনমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমেও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ সুনাম অর্জন করেছে।
তিনি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ ও আন্তরিক বলে উল্লেখ করেন।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি সিকিউরিটি ও অপারেশন বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মো. মুহিব রহমান অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে ১৯৭২ সালে লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর সফর এবং ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে স্যার এডওয়ার্ড হীথের সাথে ঐতিহাসিক বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অন বাংলাদেশের চেয়ার বিরেন্দ্র শর্মা এমপি, সাইপ্রাসের হাইকমিশনার এন্ড্রিয়াস এস কাকউরিস এবং নামিবিয়ার হাই কমিশনার মিসেস লিন্ডা স্কটসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, কূটনৈতিক ফোরামের সদস্য, যুক্তরাজ্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কমনওয়েলথ ও এফসিডিও এর সম্মানিত প্রতিনিধিগণ এবং যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকবৃন্দ, বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং লন্ডনে বাংলাদেশি-ব্রিটিশ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিষ্ঠা ও দেশে-বিদেশে এর বিশেষ ভূমিকা সম্বলিত বর্ণিল ব্যানারে সুসজ্জিত অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনীর ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডনের সহকারী প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা উইং কমান্ডার মো. সাইফুর রহমান, অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
(ঢাকাটাইমস/২৩ নভেম্বর/ইএইচ)

মন্তব্য করুন