ডিভাইড এন্ড রুল

তৌহিদ এলাহী
 | প্রকাশিত : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৪২

প্রবাদটি শুনলেই মনে পড়ে ব্রিটিশদের কথা। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে প্রায় ২০০ বছর ভারত উপমহাদেশ শাসন করে গেছে ইংরেজরা। তবে এই আইডিয়া আরো বহু পুরোনো। এই ফ্রেজের বুতপত্তি ল্যাটিন Divide et empera থেকে।

লিখিত ও সুস্পষ্টভাবে প্রথম এ ধারণা পাওয়া যায় আজ থেকে ২৫০০ বছর আগে চাইনিজ সমরনায়ক ও দার্শনিক সান জু এর লিখিত স্ক্রিপচারে; আমাদের কাছে পরিচিত আর্ট অফ ওয়ার নামে। তিনি লিখেছেন, ডিভাইড এণ্ড কনকোয়ার। তার মতে, শত্রুকে ভাগ করে ফেললে অস্ত্র না ধরেও যুদ্ধ বা দেশ জয় করা যায়।

ডিভাইড এন্ড রুল ধারণাটি এখনো বহুল চর্চিত। দেশে দেশে জাতিগত বিদ্বেষ উসকে দিয়ে, অশান্তি সৃষ্ঠি করে ফায়দা লুটে নিচ্ছে আধুনিক সিউডো-ইম্পেরিয়ালিস্টরা। আফ্রিকা কিংবা মধ্য প্রাচ্যের দিকে তাকালেই দেখবেন কোথাও তেলের জন্য , কোথাও সোনা-দানা- হীরাসহ নানা প্রাকৃতিক সম্পদের লোভে একই দেশে নানা জাতিভেদ তৈরি করে শোষণ চলমান। আবার অনেক অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক শক্তি নানা গোত্র বা এলাকার মধ্যে বিভক্তি তৈরি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে।

আসল কথায় আসি। ডিভাইড এন্ড রুল এক চিরন্তন কার্যকরী হাতিয়ার। সবচেয়ে বেশি কার্যকর আমাদের নিজেদের জন্য।

মানুষ মাত্রই সমস্যা বিপদ-আপদের ধারক ও বাহক। আমরা নানাবিধ নানামুখী সমস্যার আধার। বিপদের ধর্ম হচ্ছে, এগুলো একা আসে না। অনেকগুলো বিপদ ও সমস্যা ঝাকবেধে আসে। আর্থিক, সামাজিক, সম্পর্কগত, স্বার্থগত, রোগ-শোক কৃত্রিম-প্রাকৃতিক কতশত বিপদ-সমস্যা নিয়ে আমাদের পথ চলতে হয়। এরাই আমাদের প্রধান শত্রু। এত শত বিপদ নিয়ে আমরা দিশেহারা হয়ে যাই, চারদিক থেকে ভেঙ্গে পড়ি। আমাদের সুখগুলো ক্ষণস্থায়ী, সমস্যাগুলো চিরন্তন। সুখ এড়াতে পারি, সমস্যা এড়ানো সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব। তাহলে করনীয়?

নিজের সকল সমস্যা একসাথে দূর করা সম্ভব না। সমস্যাগুলোকে ভাগ করে ফেলা যায়। সবগুলো সমস্যা বা বিপদ তালিকা করে একটা একটা করে আলাদা করে ফেলা যায়। সবচেয়ে ছোট সমস্যা আগে সমাধান করলে একটা ফ্লো আসে, আত্ববিশ্বাস বাড়ে। তারপর আস্তে আস্তে প্রয়োজন অনুযায়ী বড় বড় সমস্যা সমাধান করতে পারি। সব বিপদ একসাথে মোকাবেলা করতে গেলে তালগোল পাকিয়ে যাবে , আমরা হতাশ হয়ে পড়ব।

পৃথিবীর সবচেয়ে অজেয় রাজ্য আমাদের মন; শাসন করা কঠিন আমাদের ভেতরের নৈরাজ্যকে। আমরা সকল সমস্যাকে দেখি বহি:জগতের প্রভাব হিসেবে; নিজের রাজ্যের শাসন করব কি , রাজ্যের খোজখবর পর্যন্ত নিতে পারিনা। এত ব্যস্ততা, এত বিশৃঙ্খলার মাঝে সকল কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সমস্যাগুলো ধারাপাতের মত গণনা করার ইচ্ছে, আলাদা ভাবে ভাগ করে করে আগানো ও সমস্যা সমাধানের নিমিত্ত চিন্তা করার মত নীরব ধ্যানের সময় আমাদের কই?

নিজের ভেতরের সমস্যা ও বাইরের বিপদকে আলাদা আলাদা ভাগে ভাগ করে একান্ত নিজের রাজত্বটুকু শাসন করলেই আমরা প্রত্যেকেই রাজা।

"ও যার আপন খবর আপনার হয় না

একবার আপনারে চিনতে পারলে রে

যাবে আচেনারে চেনা"- লালন

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :