আচরণবিধির তোয়াক্কা করছেন না ঢাকা-১৯ আসনের প্রার্থীরা

আহমাদ সোহান সিরাজী, সাভার (ঢাকা)
| আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৫৪ | প্রকাশিত : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৪৯

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে প্রার্থীদের ভোটের প্রচারণায় প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। নির্বাচনি ক্যাম্পে হামলা ও মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। এসবের জের ধরে ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র এক প্রার্থীসহ তিনজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। এ ছাড়া দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এবারও আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। এ ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে নির্বাচন করছেন সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং ওরফে মুরাদ জং। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ট্রাক প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দলের আরও সাতজন প্রার্থী রয়েছেন।

আচরণবিধি লঙ্ঘন মুরাদ জংয়ের

প্রায় ১০ বছর পর গত মঙ্গলবার দুপুরে অনুসারীদের নিয়ে সাভারের শিমুলতলায় নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার তৌহিদ জং। এ সময় তার সমর্থকদের গাড়িবহরের কারণে সাভারের বিভিন্ন এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কঘেঁষা রাজনৈতিক কার্যালয়ের একটি অংশের ছাদে দাঁড়িয়ে তিনি ভাষণ দেওয়ার সময় উপস্থিত কয়েক হাজার সমর্থক ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকাগামী সার্ভিস লেনে অবস্থান নিলে লেনটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে লঙ্ঘিত হয় নির্বাচনের আচরণবিধি।

প্রার্থীদের ক্যাম্পে হামলা

গত সোমবার সন্ধ্যায় পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নামাগেন্ডা এলাকায় মোল্লা মার্কেটে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের নির্বাচনি ক্যাম্পে হামলার ঘটনা ঘটে। একই দিন দিবাগত রাত তিনটার দিকে সাভার পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভাগলপুরে অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ জংয়ের ক্যাম্প হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলাকারী মুরাদ জংয়ের সমর্থক আবু সাঈদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা পরে কাতলাপুরে সাভার পৌরসভা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও মুরাদ জংয়ের অনুসারী আবদুল হালিমের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার বিকালে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মুরাদ জংয়ের অস্থায়ী কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

পোস্টার লাগাতে বাধা

অভিযোগ উঠেছে, গত বুধবার রাতে সাভারের নিউমার্কেট থেকে চৌরঙ্গী এলাকায় মুরাদ জংয়ের ঈগল প্রতীকের পোস্টার লাগানোর সময় তার সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সমর্থকদের মারধরের পর যাওয়ার সময় ঈগল প্রতীকের দুই হাজার পোস্টার ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। গত বুধবার দিবাগত রাতে সাভারের তালবাগ এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলামের সমর্থকেরা ট্রাক প্রতীকের পোস্টার লাগাতে গেলে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাদের ওপর হামলা চালায়, মারধর করে।

অভিযোগ নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে

স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর ক্যাম্প ও কর্মীদের ওপর হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিরা নৌকার প্রার্থী এনামুর রহমানের সমর্থক বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। এসব ঘটনায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ও সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি এনামুর রহমানের।

তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, সাভারে কিছু ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটেছে, যা কখনোই কাম্য নয়। যদি কেউ দাবি করেন দায়ী ব্যক্তিরা আমার সমর্থক, তবে সেটি দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউ আমার সমর্থক হতে পারে না।

দুবারের এই সংসদ সদস্য বলেন, কারা এসব করছে, তাদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বিভিন্ন স্থানে নৌকার পোস্টারও ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।

কারণ দর্শানোর নোটিশ ও গ্রেপ্তার

গত সোমবারের ঘটনাগুলোর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাভার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সাভার পৌরসভার কাতলাপুরের সাবেক ছাত্রদল নেতা মো. বাবু ও পলাশকে গত বুধবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার অনুসারীদের নিয়ে সাভারের শিমুলতলায় মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোয় মুরাদ জংকে গত বৃহস্পতিবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কমিটি।

এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মজিপুরের ঢাকা–আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন অংশে মুরাদ জংয়ের ক্যাম্পে হামলা ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় সাভার মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

প্রচারণার কারণে সড়কে যানজটের বিষয়টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর ৬ (ঘ) বিধির লঙ্ঘন। ক্যাম্পে হামলা, ভাঙচুরসহ হুমকির ঘটনা ৬ (ক) বিধির লঙ্ঘন। এ ছাড়া পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাটি আচরণ বিধিমালার ৭(২) বিধির লঙ্ঘন।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ইতিমধ্যে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি বেশ কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। দুজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। সব প্রার্থী ও ভোটারদের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক সবাইকে চলতে হবে। অন্যথায় কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩ডিসেম্বর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :