টাঙ্গাইল-৩: নৌকা-ঈগলের হাড্ডা হাড্ডি লড়াইয়ের আভাস

রেজাউল করিম খান, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল)
 | প্রকাশিত : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ২১:২৩

বিএনপি-জামায়াত অংশ না নেওয়ায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচনি উৎসবে ভাটা পড়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে ভোটার ও সাধারণের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। প্রধান প্রতিপক্ষের শূন্যতা পূরণের লক্ষ্যে একই দলের একাধিক প্রার্থী দিয়ে মাঠ গরমের চেষ্টা চালানো হলেও কিছুতেই জমে উঠছে না নির্বাচনি তৎপরতা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অন্তর্দ্বন্দ্ব, উত্তাপ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছে একই দলের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে। প্রচার-প্রচারণার মধ্যেও অধিকাংশ ভোটার নীরব রয়েছেন। চূড়ান্ত এই সময়ে নিজ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগের।

টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকার প্রার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব, বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য ডা. কামরুল হাসান খানের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের ছেলে সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা।

ফলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘাটাইলে প্রকাশ্য দুইভাগে বিভক্ত হয়ে দুই প্রার্থীর পক্ষেই নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। ঘাটাইলে প্রথমবার নৌকায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া কামরুল হাসানকে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমানুরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে যিনি এই আসনেরই সাবেক দুইবারের সংসদ সদস্য এবং তার বাবা একই আসনে বর্তমান এমপি। ফলে ভোটকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মী সমর্থকদের দ্বিমুখী অবস্থানের প্রেক্ষিতে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে একাধিক সহিংসতার ঘটনা সাধারণ ভোটারদের আতঙ্কিত করছে।

দলের যেকোনো পর্যায়ের কমিটি গঠনের সময় কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। পাল্টাপাল্টি মিছিল-মিটিং, হুমকি সহ পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অনেক উদাহরণ প্রায়শই উত্তপ্ত রেখেছে শান্তিপূর্ণ ঘাটাইলকে। তাঁদের একটা অংশ নৌকায়, আরেকটি পক্ষ ঈগলে ভোট চেয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। ফলে বাড়ছে অস্বস্তি উত্তেজনা।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের মারামারিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি উভয়পক্ষের পাঁচজন। এই ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলায় আসামি ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য সহ অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। আরও বড় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে কি-না, সেটি নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে আশঙ্কা। ৭ জানুয়ারি ঘিরে ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবাই ভাবছেন শেষ পর্যন্ত কী হয় এবং কার গলায় উঠে বিজয় মালা। এমনকি নির্বাচন পরবর্তী অহিংস পরিস্থিতিও জনগণের ভাবনায় রয়েছে।

তবে শান্তিপ্রিয় ঘাটাইলের ভোটাররা ও জনগণ টাঙ্গাইল-৩ আসনে সুষ্ঠু, সংঘাতমূক্ত, শান্তিপূর্ণ, অবাধ, ভয়ভীতিহীন পরিবেশে দ্বাদশ নির্বাচন ও ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন। যত উসকানি, অস্বস্তি, বিবাদ, আশঙ্কাই থাকুক না কেন, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে একটা সংঘাতবিহীন সংসদ নির্বাচন ঘাটাইলে উপহার দেবেন বলেই সাধারণ ভোটারদের মানবিক প্রত্যাশা।

টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ডা. কামরুল হাসান খান (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা (ঈগল), জাতীয় পার্টির মো. আব্দুল হালিম (লাঙ্গল), বিএনএম ঘাটাইল উপজেলা শাখার সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) মো. জাকির হোসেন (নোঙ্গর), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের প্রার্থী মো. সাখাওয়াত খান সৈকত (চাকা), ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির মো. হাসান আল মামুন সোহাগ (আম)।

উত্তর টাঙ্গাইলের বৃহত্তম এই আসনে কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয় বলে নৌকা ও ঈগলের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোটে থাকলেও প্রচারণায় মাঠে নেই অনেক প্রার্থী। শুধু নাম ফলাতেই প্রার্থী হয়েছেন তারা। এমনকি কোনো কোনো প্রার্থী পোস্টারও ছাপেনি এখন পর্যন্ত। তাই এ আসনে নৌকা ও ঈগলের মধ্যে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হবে এমন প্রত্যাশা ভোটারদের।

(ঢাকা টাইমস/০১জানুয়ানি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :