ঢাকার নজর পশ্চিমা সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে 

সামিয়া রহমান প্রিমা, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:১১ | প্রকাশিত : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:২৪

ভোট নিয়ে পশ্চিমা বিরোধিতার মুখে গঠিত হয় নতুন সরকার। এ নিয়ে এক ধরনের চাপও দেখা যায়। তবে নতুন সরকারের এক সপ্তাহ পার হতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বলয়কে সামাল দেওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গত রবিবার থেকে অফিস শুরু করা নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে অত্যন্ত কৌশলী দেখা গেছে কূটনীতিক সম্পর্ক জোরদারে। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও ইন্দো প্যাসিফিক আইপিএস ঘিরে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে।

এ অবস্থায় ভারত, চীন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রেখেই পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পথেই এগোচ্ছে সরকার, এমন বার্তাই পাওয়া যাচ্ছে গত এক সপ্তাহে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের সৌজন্য সাক্ষাৎ বা বৈঠক থেকে।

এছাড়া পশ্চিমাশক্তির সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতার ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের ক্ষমতাসীন নেতাদের বক্তব্যেও। যুক্তরাষ্ট্রের আচরণেও পরিবর্তন দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও সাবেক কূটনীতিকরা। তারা বলছেন, ভূরাজনৈতিক কারণে বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের যা অবস্থান তা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের পররাষ্ট্রনীতিকে শক্তিশালি করা জরুরি।

এদিকে নতুন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কেন্দ্র করে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন মহলের আগ্রহ রয়েছে। টানা চতুর্থ মেয়াদে এসে আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন আসছে কি না, পশ্চিমাসহ আন্তর্জাতিক চাপ কীভাবে সামলানো হবে- এসব প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছে আলোচনায়।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, পররাষ্ট্রনীতিকে শক্তিশালি করতে হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক সৌহার্দ্য ও মানবাধিকারের ওপর জোর দিতে হবে নতুন সরকারকে। বাড়াতে হবে কূটনৈতিক তৎপরতাও।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরাশক্তিধর দেশগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থান দেখা গেছে। এমন বাস্তবতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পরিবর্তন এনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়।

এরপরেই নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি বহুপাক্ষিক কূটনীতির অংশ হিসেবেও নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ চলমান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। পশ্চিমাদের সঙ্গে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এর আগে বাংলাদেশের দ্বাদশ নির্বাচনের ফল ও নতুন সরকারকে সমর্থন জানিয়েছে ভারত, চীন ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ ও কানাডাসহ পশ্চিমা দেশগুলোও বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে ভোট সুষ্ঠু হয়নি এবং অনিয়ম লক্ষ্যণীয়। একইসঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক বা ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে কেন্দ্র করে বিদ্যমান অংশিদারত্ব এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গিকারের কথাও উল্লেখ করেছে ওয়াশিংটন।

অর্থাৎ একদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে মার্কিনিদের ভিসা নীতি বা নিষেধাজ্ঞার নানা হুমকি, অন্যদিকে এই অঞ্চলে দেশটির অন্যতম এজেন্ডা ইন্দো-প্যাসিফিক অংশিদারিত্ব। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়টি নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়া বা বিবৃতিতে নিয়ে আসা মার্কিনিদের পক্ষ থেকে কোনো ইঙ্গিত কি না এই প্রশ্নের জবাবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু এই অঞ্চলে তাদের প্রধান স্বার্থ ইন্দো-প্যাসিফিক, সেটাই যুক্তরাষ্ট্র পুনর্ব্যক্ত করেছে।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন ‘দরকষাকষি এমন এক বিষয় যা একটি চলমান প্রক্রিয়া। সম্পর্ক যত ভালো বা খারাপই হোক না কেন, দরকষাকষি চলতেই থাকে। ইন্দো-প্যাসিফিকের বিষয়টি উঠে আসা সেরকমই একটা বিষয়।’

কিছুটা পার্থক্য রেখে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ুন কবির ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দর কষাকষি এমন একটা বিষয় যখন দুই পক্ষের সক্ষমতা থাকে। পশ্চিমাদের সাথে পাল্লা দেয়ার অবস্থাতেই নেই আমরা। এই অঞ্চলে চীনের পাল্টা বলয় বা শক্তি তৈরি করাই ইন্দো-প্যাসিফিকের মূল উদ্দেশ্য। এখানে যত রাষ্ট্র যুক্ত হবে বা যত বন্ধু পাবে মার্কিনিদের ততই লাভ।’

উল্লেখ্য, ইন্দো-প্যাসিফিক তথা ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে কেন্দ্র করে গত বছরের এপ্রিলে রূপরেখা ঘোষণা করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগ মুহূর্তে ব্যবসা-বাণিজ্যকে প্রাধান্য দিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক আইপিএস রূপরেখা দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া ২০১৯ সালে চীন সফরেও প্রধানমন্ত্রী ইন্দো-পাসিফিককে ঘিরে বাংলাদেশের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

এছাড়া আইপিএসকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাপান, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ তাদের অবস্থান বা কৌশল ঘোষণা করেছে।

এর আগে ২০১৭ সালে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) ঘোষণা করে হোয়াইট হাউজ। যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত এই উদ্যোগে জাপান, ভারত ও অষ্ট্রেলিয়া এরইমধ্যে যুক্ত রয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সরাসরি আইপিএসের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার কথা বলে আসছে।

এই প্রসঙ্গে এম. হুমায়ুন কবির আরও বলেন, ‘ইন্দো- প্যাসিফিক নিয়ে মার্কিনিদের প্রস্তাবে তো আমরা কখনো না করি নাই। আর ভূরাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশকে বহুমাত্রিক লেন্সে দেখে যুক্তরাষ্ট্র। এখানে বুঝতে হবে নির্বাচন ইস্যুটা দ্বিপাক্ষিক। এখানে যে সমস্যা আছে এটা তারা পরিষ্কার করেছে। একইসঙ্গে যে কথাগুলো সম্প্রতি পিটার হাস (ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত) বলেছেন ব্যবসা-বাণিজ্য, রোহিঙ্গা সংকট ও জলবায়ু সংকট এগুলো তাদের আঞ্চলিক তথা আন্তর্জাতিক ইস্যু এসব নিয়ে তারা সম্পর্ক এগোতে চান। এখানেই আমরা অনেকেই বুঝতে ভুল করি।’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের আমন্ত্রণে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে নয়াদিল্লি যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ভারতের সঙ্গে তিস্তা ইস্যু ও সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যাসহ নানা অমীমাংসিত বিষয় থাকলেও এখনও এই সফরের মূল বিষয়বস্তু চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে আইপিএসে এই অঞ্চলে ভারতকে অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে না হলেও এনিয়ে আলোচনা অস্বাভাবিক নয়।

সাবেক কূটনীতিকরা বলছেন, যেহেতু ক্ষমতাসীন দল বা সরকারের সঙ্গে প্রতিবেশি ভারতের দীর্ঘদিন ধরে ভালো সম্পর্ক রয়েছে তাই তাদের অবস্থানটা বাকিদের চাইতে ভিন্ন। বাংলাদেশ-ভারত এর সোনালী সময়, ঐতিহাসিক সম্পর্ক এসব কথা বারবার দুই পক্ষই বলেছে। প্রতিটি পক্ষই তাদের স্বার্থের প্রেক্ষিতে সম্পর্কের ধরন নির্ধারণ করবে। দেশের স্বার্থ রক্ষায় আমাদেরও এখন থেকে তাই করা উচিৎ।

এছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বেচাকেনার আগ্রহ দেখিয়ে আসছে ওয়াশিংটন। সম্প্রতি হাছান মাহমুদ-পিটার হাস সৌজন্য বৈঠকেও সামরিক সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে তেল অনুসন্ধানেও আগ্রহ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এই বিষয়গুলোকে দ্বিপাক্ষিক বিবেচনার পাশাপাশি ইন্দো-প্যাসিফিক বা আইপিএসের অভ্যন্তরেও দেখার সুযোগ রয়েছে। মোটাদাগে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করাই এবারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে উল্লেখ করে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘পশ্চিমারা যখন গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন, সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে তাদেরকে বেশ শক্ত ভাষায় সমালোচনা করা হয়েছে। সুসম্পর্ক তৈরি করার উদ্যোগ দেখা যায়নি। মনে রাখতে হবে চীন, রাশিয়া ও ভারত পশ্চিমাদেশগুলোর বিকল্প নয়। ভারতের অন্যতম রপ্তানির বাজার যেমন বাংলাদেশ, তেমনি বাংলাদেশের বাজার যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ। ভারত ও চীন থেকে আমদানি করতে যে বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের দরকার হয়, তা পশ্চিমা দেশগুলো থেকেই পাই। তাই নিজেদের স্বার্থেই পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে হবে।’

নতুন সরকারের পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় আমাদের মনোযোগি হতে হবে। আমাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যুক্ত করে দেশের পররাষ্ট্রনীতিকে শক্তিশালী করা দরকার। যাতে আমরা আরও বেশি শক্তি নিয়ে দরকষাকষি করতে পারি।’

বিগত ২ বছরে বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সবচেয়ে বেশি চাপে ফেলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাবের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার মাধ্যমে দেশে প্রথম নিষেধাজ্ঞা দেয় ওয়াশিংটন। সুষ্ঠু নির্বাচনকে সামনে এনে ২০২৩ সালের মে মাসে বাংলাদেশে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা এবং গত সেপ্টেম্বরে তা কার্যকরের কথাও জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। এমন বাস্তবতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে সরিয়ে ড. হাছান মাহমুদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিগত দুই আমলে এই মন্ত্রণালয়ে শাহরিয়ার আলম দায়িত্ব পালন করলেও এখন পর্যন্ত এই পদে কাউকে বেছে নেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

(ঢাকাটাইমস/২০জানুয়ারি/এসআরপি/আরআর/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

দেশের অর্থনীতিতে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের প্রভাবের আশঙ্কা প্রধানমন্ত্রীর

রবীন্দ্রনাথ মানুষের পরিশুদ্ধতার কথা ভাবতেন: সিমিন হোসেন

স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তি মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা: প্রতিমন্ত্রী

ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্তরাজ্যের সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

গণমাধ্যমের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

ভোক্তার কাছে প্রতিনিয়ত সস্তা হচ্ছে তামাকজাত দ্রব্য: গবেষণা

প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলার ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় ভোটার উপস্থিতি কম: সিইসি

প্রযুক্তি খাতে নারীদের বিশেষ কোটা চালুর কথা জানালেন প্রতিমন্ত্রী পলক

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :