অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত ভোলার চরাঞ্চল

এইচ আর সুমন, ভোলা
  প্রকাশিত : ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ২১:৫০
অ- অ+

অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল। নানা প্রজাতির রং-বেরংর পাখিদের কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত চরের নিঝুম প্রান্তর। বিশেষ করে ডুবোচরগুলোতে দেখা যায় দল বেঁধে পাখিদের খুনসুটি। কাদার মধ্যে খাবার সংগ্রহ, ডুব সাঁতার কিংবা পাখিদের উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য যে কারো মন ভোলায়।

ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা দল বেঁধে মেতে উঠে জলকেলিতে। সুদূর সাইবেরিয়াসহ দূরদূরান্ত থেকে আসা এসব অতিথি পাখি বছরের নভেম্বরের প্রথম দিকে আসতে শুরু করে এবং মার্চ পর্যন্ত অবস্থান নেয়।

এদিকে পাখি শিকারকে নিরুৎসাহিত করার জন্য স্থানীয় বন বিভাগের পক্ষ থেকে চালানো হচ্ছে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা। একইসঙ্গে পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জোরদার করা হয়েছে টহল ডিউটি। ফলে অতিথি পাখিদের অবাধ বিচরণে প্রকৃতিকে করছে আরো প্রাণবন্ত।

যে সব চর জোয়ারে ডুবে যায় ও ভাটার সময় জেগে উঠে এমন চরগুলোতে পাখিরা বেশি আসছে। কারণ কাঁদা-মাটিতে পাখিদের খাবার উপাদান থাকে।

সাধারণত এসব চরে জুলফি পানচিল, গাঙ্গচিল, সোনাজিরিয়া, উত্তরীয় লেঞ্জাহাঁস, কালোলেজ জৌরালি, ইউরেশিও গুলিন্দা, ধূসর মাথা টিটি, সিথি হাঁস, খুন্তে হাঁস, খয়রা চোখাচোখি, ছোট পাকৌরী, ছোট বগা, বড় বগা, পিয়ঙ হাঁস, ধূসর বগা, পাতি হাঁস, কালো মাথা গাঙচিল, ছোট ধলাজিরিয়া, ছোট নর্থ জিরিয়া, গো বগা, মেটে রাজ হাঁস, পাতি বাটান, চেগা, পাতি চেগাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মেলে।

বিশিষ্ট পাখি পর্যবেক্ষক এম এ মুহিত জানান, আমাদের উপকূলীয় এলাকার অতিথি পাখিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো ভোলা। এখানে অনেক নির্জন চর রয়েছে, যাতে পাখিদের নিজস্বতা রক্ষা পায়। এ সময়ে সারাবিশ্বে বিপন্ন এমন অনেক পাখি এ চরাঞ্চলে দেখা যায়। যেমন চামুচ ঠুঁটো বাটন, ইন্ডিয়ান স্কিমার, নার্ন সেভেলারসহ অনেক পাখি। প্রকৃতি ভালো রয়েছে বলেই পাখিরা আসছে। তাই পাখিরা যাতে বিরক্ত না হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।

জেলার সর্ব দক্ষিণের ঢালচর, মনপুরা চর, কলাতলীর চর, চর কুকরী মুকরি, চর শাহজালাল, চর শাজাহান, চর পিয়াল, আইলউদ্দিন চর, চরনিজাম, চর পাতিলা, ডেগরারচরসহ মেঘনা-তেঁতুলিয়ার উপকূলবর্তী মাঝের চর, চর চটকিমারা, মদনপুরাসহ বিভিন্ন চরে পাখিদের আনাগোনা বাড়ছে। শীতের সকালে গায়ে কুয়াশা মেখে পাখিরা উড়ছে আপন মনে। চারদিকে সাগর-নদী, চর আর সবুজ গহিন বনের দু’পাশে পাখিদের কিচির-মিচির মাতিয়ে রাখে সকাল-বিকেল। কান পাতলেই শোনা যায় পাখির ডাক।

চর কুকরী-মুকরীর চর-পাতিলায় দেশি-বিদেশি পাখি দেখার জন্য বন বিভাগের রয়েছে পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। এখান থেকেই চরের অতিথি পাখি সহজেই দেখা যায়।

চর পাতিলায় পাখি দেখতে আসা লিয়াকত হোসেন ও সুমন রহমান বলেন, ব্যস্ত ও শব্দের শহরের বাইরে এটা একটি ভিন্ন জগৎ। বিশেষ করে শীতের সময়ে এখানকার প্রধান আকর্ষণ অতিথি পাখি। তাই পাখি দেখছেন ও সুযোগ পেলে পাখির ছবি তুলছেন।

পর্যটক কবির হোসেন বলেন, শীতের সময় সুস্থ মৌসুম হওয়াতে ডুবো চরগুলো জেগে থাকে। সেইসঙ্গে চলে চরে অতিথি পাখিদের আনাগোনা। যা অপরূপ মায়ায় মন ভরে দেয়।

চর কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসেম মহাজন বলেন, এ বছর মৌসুমের শুরু থেকেই এখানে অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। এ পাখি দেখার জন্য অনেক পর্যটক ভিড় করছেন কুকরিতে। চর কুকরি-মুকরির পাখি সংরক্ষণ ও বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে লিফলেটসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ভোলার বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারো আমাদের চরগুলোতে বিপুল পরিমাণ অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। এসব পাখিদের আবাসস্থল যাতে কেউ বিনষ্ট করতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের বন কর্মীসহ সবাই সচেষ্ট রয়েছে। তবে আশার কথা হলো মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। তারা পাখি শিকার থেকে নিজেদের বিরত রাখছে।

তিনি আরও বলেন, অতিথি পাখিরা না আসলে আমাদের প্রকৃতির সমস্যা হবে, এটা এখন মানুষ বুঝতে পারছে। এছাড়া পাখি শিকার বন্ধ করতে লিফলেট বিতরণসহ অন্যান্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রতিটি রেঞ্জ থেকে আমাদের টহল জোরদার করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস২১জানুয়ারি/ ইএইচ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
জনতা ব্যাংকের রংপুর বিভাগীয় শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন অনুষ্ঠিত 
সিরিয়ায় পুরনো বোমা বিস্ফোরণে নিহত ১৬, আহত ১৮
অবসর ভেঙে আবারও ফিরতে পারেন কোহলি, তবে দিলেন শর্ত
আড়ং কক্সবাজারে উদ্বোধন করলো তাদের ৩১তম আউটলেট
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা