সরকারি ‘মুক্তা পানি’ কেন নেই বাজারে

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট, মৈত্রী শিল্প’ কর্তৃক উৎপাদিত ব্র্যান্ড ‘মুক্তা পানি’। গুণগত মানের জন্য এই বোতলজাত পানির বেশ চাহিদা থাকলেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ বলছে, উৎপাদন সক্ষমতা কম থাকায় বাজারে এই পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। পৌঁছানো যাচ্ছে না প্রতিটি দোকানে।
তবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় করপোরেট শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদিত বোতলজাত পানি আনাচে-কানাচে পৌঁছে গেলেও সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত মুক্তা পানি কেন পৌঁছে না- এ নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। মুক্তা পানিকে সংকুচিত রাখার পেছনে কেউ কেউ ইঙ্গিত করছেন বোতলজাত পানি উৎপাদনকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তবে মুক্তা পানি সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি বিশুদ্ধ পানির কারখানায় অত্যাধুনিক ‘রিভারস অসমোসিস’ (আরও) প্রক্রিয়া ব্যবহার করে মুক্তা পানি প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। এ পানির ব্র্যান্ডটির উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিয়োজিত সবাই শারীরিক প্রতিবন্ধী। এই পানি থেকে আয়কৃত অর্থের পুরোটাই ব্যয় হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য।
শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের সহায়তায় মৈত্রী শিল্পের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় ‘মুক্তা ড্রিংকিং ওয়াটার প্লান্ট’ স্থাপন করা হয়। বিশ্ববিখ্যাত আমেরিকান ওয়াটার পিউরিফিকেশন অ্যান্ড বটলিং প্লান্ট মেশিনারীজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সেল এ্যাকুয়া টেকনোলজিস ইনকরপোরেট হতে আমদানিকৃত মুক্তা ড্রিংকিং ওয়াটার প্লান্ট। মুক্তা বোতলজাত সুপেয় পানি অত্যাধুনিক মেশিন দ্বারা ১১টি ধাপে ‘রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতিতে’ পরিশোধিত হয়।
উৎপাদন কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের সার্বক্ষণিক হাইজেনিক চেক, পরিস্কার-পচ্ছিন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়। প্রতি ব্যাচে উৎপাদিত মুক্তা বোতলজাত সুপেয় পানি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা ও গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। মুক্তা বোতলজাত বিশুদ্ধ পানির মিনারেল কম্পোজিশন বাজারে প্রচলিত অন্যান্য বোতলজাত পানির তুলনায় ভারসাম্যপূর্ণ, যা মানবদেহের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু এই পানির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বাজারে পানির সরবরাহ নেই বললেই চলে। কয়েক বছর আগে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তা পানির বাজারজাতকরণ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা দোকানিরা মুক্তা পানি সম্পর্কে কিছ্ইু জানেন না। আর যারা জানেনও তারাও এই পানির দেখা পান না।মুক্তা পানির চাহিদার থাকলেও শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট উৎপাদন ও সরবারাহের সীমাবদ্ধাতায় আটকে আছে। তাদের দাবি, মুক্তা পানির গুণগত মানে কোনো ঘাটতি নেই। চাহিদাও ব্যাপক। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতায় উৎপাদন কম থাকায় সাধারণ মানুষ পর্যন্ত এই পানি সরবারাহ করা যাচ্ছে না। তবে তারা উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের কারখানা ব্যবস্থাপক মো. মহসীন আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মুক্তা পানির চাহিদা প্রতিদিন যদি দুই লাখ লিটার হয়, তাহলে আমার দৈনিক ৫০ হাজার লিটার উৎপাদন সক্ষমতা আছে।’
মহসীন আলী বলেন, উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন ৫০ হাজার লিটার। কিন্তু চাহিদা অনেক। এ জন্য আমরা প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি, অটোমেশন প্লান বসানোর জন্য। আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী সাপ্লাই দিচ্ছি।এই কর্মকর্তা বলেন, গাজীপুরে ‘এ’ এবং ‘বি’ ক্যাটাগরির ৪০টি হোটেলের ওপরে আমার গবেষণার রিপোর্ট অনুযায়ী, এক একটা হোটেলে ২৪ ঘণ্টায় অন্তত এক হাজার পানির বোতলের মুখ খুলা হয়। এতে দেখা যায় এই ৪০টা হোটেলেই প্রতিদিন ৪০ হাজার পানির বোতল দরকার হয়। কিন্তু গাজীপুরে তো হোটেল সংখ্যা এক হাজারেরও উপরে। এই গাজীপুরের হোটেলগুলোতেই যদি মুক্তা পানি দিতে যাই তাহলেও কমপক্ষে প্রতিদিন প্রতিটি হোটেলে ২০০ কওে বোতল দিলেও দুই লাখ পানির বোতল দরকার। কিন্তু আমাদের তো মাত্র ৫০ হাজার লিটার উৎপাদন সক্ষমতা। উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা ধীরে ধীরে আগাচ্ছি।
মহসীন আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণভবন, বঙ্গভবন, পর্যটক হোটেলগুলো, ইন্টারকন্টিনেন্টাল, সেতু ভবন, মৎস ভবন, মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর, ঢাকার মধ্যে সরকারের সব অফিসে মুক্তা পানি যায়।
এ বিষয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট, কার্যক্রম ও মূল্যায়ন) মো. নজরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, মুক্তা পানির উৎপাদন বাড়ানো ও বাজারজাত করার পরিকল্পনা আছে।
উৎপাদনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ হাজার লিটারে আটকে আছে। এ বিষয় নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন কারণ ও প্রতিবন্ধকতায় মুক্তা পানির উৎপাদন ৫০ হাজার লিটারে আটকে আছে। তবে উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’
(ঢাকাটাইমস/২৩জানুয়ারি/টিআই/কেএম)

মন্তব্য করুন