যেভাবে ট্রেনের টিকিট হাতিয়ে নিয়ে কালোবাজারে মুনাফা লুটত সেলিম-উত্তম সিন্ডিকেট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:৪৩ | প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:২৩

বিভিন্ন কারসাজি করে দেশব্যাপী ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির অভিযোগে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর এলাকা থেকে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩ এর সদস্যরা। এসময় তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে সংগ্রহ ও মজুদকৃত ১২শ এর অধিক ট্রেনের টিকেট উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতা মো. সেলিম (৫০), মো. আনোয়ার হোসেন কাশেম (৬২), শ্রী অবনী সরকার সুমন (৩৫), মো. হারুন মিয়া (৬০), মো. মান্নান (৫০), মো. আনোয়ার হোসেন ডাবলু (৫০), মো. ফারুক (৬২), মো. শহীদুল ইসলাম বাবু (২২), মো. জুয়েল (২৩), মো. আব্দুর রহিমকে (৩২) গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে উত্তম সিন্ডিকেটের মূলহোতা উত্তম চন্দ্র দাস (৩০), মো মোর্শিদ মিয়া ওরফে জাকির (৪৫), আব্দুল আলী (২২), মো. জোবায়েরকে (২৫)।

শুক্রবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব জানায়, মলাপুর রেলস্টেশনে সেলিম এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনে উত্তমের নেতৃত্বে চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন যাবত মহানগর প্রভাতি, তূর্ণা নিশিথা, চট্টলা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি করে আসছিল। সেলিম এবং উত্তমের সহযোগীরা প্রথমত ট্রেনের কাউন্টারে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ যাত্রী, রেলস্টেশনের কুলি, স্টেশনের আশেপাশের এলাকার টোকাই, রিকশাওয়ালা ও দিনমজুরদেরকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে লাইনে দাড় করিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতেন। তাদের প্রত্যেককে ৪ টি করে টিকেট সংগ্রহ করার বিনিময়ে ১০০ টাকা করে দেওয়া হতো। এছাড়াও কাউন্টারে থাকা কিছু অসাধু টিকেট বুকিং কর্মচারীদের দিয়ে বিভিন্ন সাধারণ যাত্রীদের টিকেট কাটার সময় দেওয়া এনআইডি সংগ্রহ করে রেখে পরবর্তীতে সেগুলো ব্যবহার করে প্রতিটি এনআইডি দিয়ে একাধিক ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করতো চক্রটি। এভাবে তারা প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শতাধিক টিকেট সংগ্রহ করতো। এছাড়াও ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষে করে রেলস্টেশনে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মচারী এবং অনলাইনে টিকেট ক্রয়ের জন্য ব্যবহৃত ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান সহজ ডট কম এর কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সার্ভার রুম/আইটি এর সদস্যদের সহযোগিতায় তাদের কাছে সংরক্ষিত জনসাধারণের এনআইডি এর তথ্য ব্যবহার করে এমনকি সার্ভার ডাউন করে তারা অনলাইনে টিকেট সংগ্রহ করতো। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দিয়ে অনলাইনে টিকেট কেটে সেগুলো তাদের নিকট থেকে সংগ্রহ করতো। এছাড়াও স্টেশনে থাকা তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যদের দিয়ে কাউন্টার থেকে স্ট্যান্ডিং টিকেট সংগ্রহ করতো।

এরপর সংগ্রহকৃত টিকিটগুলো নিয়ে চক্রের সদস্যরা উপযুক্ত সময় বুঝে রেলস্টেশনের ভিতরে অবস্থান করতো। রেলস্টেশনে এসে টিকেট না পাওয়া সাধারণ যাত্রীদের কাছে অধিক মূল্যে এসব টিকেট বিক্রি করতো তারা। ট্রেন ছাড়ার সময় যত ঘনিয়ে আসতো তাদের টিকিটের দাম ততো বৃদ্ধি পেতো। ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন বিশেষ দিনে এই মূল্য আরও ৩-৪ গুন বেড়ে যেত। টিকিট বিক্রির এই লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ নিতেন চক্রের সদস্যরা আর বাকিটা পেতেন কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী-কর্মকর্তা এবং সহজ ডট কমের সদস্য ও আইটি বিশেষজ্ঞরা।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত সেলিম প্রায় ৩৫ বছর যাবত টিকেট কালোবাজারির সাথে জড়িত রয়েছে। সে কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় টিকেট কালোবাজারির দায়ে ৭টি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে। সে জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় টিকেট কালোবাজারি শুরু করেন। গ্রেপ্তার মো. আনোয়ার হোসেন কাশেম প্রায় ১৫ বছর যাবত ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির সাথে জড়িত। ইতিপূর্বে সে মাদক মামলাসহ একাধিক মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত অবনী সরকার ও হারুন মিয়ার দায়িত্ব ছিল চট্টগ্রাম এলাকার কাস্টমার সংগ্রহ করা। একইভাবে মান্নান এবং আনোয়ার ডাবলুর দায়িত্ব ছিল সিলেট এলাকার কাস্টমার সংগ্রহ করা। ফারুক এবং শহীদুল ইসলাম বাবুর দায়িত্ব ছিল ভৈরব ও কিশোরগঞ্জের কাস্টমার দেখাশোনা করা। জুয়েল এবং আব্দুর রহিমের দায়িত্ব ছিল ব্রাহ্মনবাড়িয়া ও আখাউড়ার যাত্রী সংগ্রহ করা। এদিকে গ্রেপ্তারকৃত উত্তমও প্রায় ১৫ বছর যাবত ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির সাথে জড়িত। সে বিমানবন্দর রেলস্টেশনের টিকেট কালোবাজারি চক্র উত্তম সিন্ডিকেটের মূলহোতা। তার সহযোগী গ্রেপ্তারকৃত আলী ও ফারুকসহ রাজধানীর আশকোনা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় অবস্থান করে এসকল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সে শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং এই সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে রেলস্টেশন এলাকায় সব সময় অবস্থান করে টিকেট কালোবাজারি চক্র গড়ে তোলে। তার বিরুদ্ধে টিকেট কালোবাজারির দায়ে ৪টি মামলা রয়েছে। উক্ত মামলায় সে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। সে জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় টিকেট কালোবাজারির কাজে লিপ্ত হয়।

র‌্যাব জানায়, অনলাইনে বা কাউন্টারে টিকেট বিক্রি শুরু হওয়ার সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায় এই রুটের ট্রেনের টিকেট। কিন্তু কালোবাজারিদের কাছে ২-৩ গুন দামে টিকেট বিক্রি হতে দেখা যায়। চাহিদা অনুযায়ী টিকেট না পাওয়ার এবং টিকেট কালোবাজারি কর্তৃক অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচিত হয়। ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধ ও কালোবাজারিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব । এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব-৩ এর অভিযানিক দল রাজধানীর কমলাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ট্রেনের এই টিকেট কালোবাজারির সদস্যদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ২৪৪টি আসনের টিকেট, ১৪টি মোবাইল ফোন এবং টিকেট বিক্রয়ের নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা স্বীকারদ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

(ঢাকা টাইমস/২৬জানুয়ারি/আরআর/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

চলতি মাসেও বেশি থাকবে তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত বেড়ে বন্যার শঙ্কা

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে: ধর্মমন্ত্রী

শুক্রবার রাতেও রাজধানীতে বৃষ্টির আভাস অ্যাকুওয়েদারের

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১৪ বছরে বাংলাদেশের অবনতি ৪২ ধাপ

কোথাও বৃষ্টি কোথাও নেই, কেন এমন হয়

শনিবার থেকে ট্রেনভাড়া বাড়ছে, জানুন কোন রুটে কত

তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর

গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ: উদ্ধার সহায়তায় বিজিবি

নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের 

উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ, স্টেশন মাস্টারসহ বরখাস্ত ৩

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :