প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে হত্যার হুমকি: র‌্যাব

সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম এলাকার ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী নুরুল হক (৬৭)। তার ব্যবসায়িক কাজে দীর্ঘদিন ধরে বাধা দিয়ে আসছিলেন স্থানীয় সেলিম নামের এক ব্যক্তি। তাই আরেকজনের পরামর্শে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে হত্যার হুমকি দেন।

রবিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফা লাভের আশায় অন্যায়ভাবে গরুর মাংসের মূল্যবৃদ্ধি করে মাংসের বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এতে করে সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে গরুর মাংস ক্রয় করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় গত ১৯ নভেম্বর হতে রাজধানীর শাহজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিল ৫৯৫ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি শুরু করে। এটা ব্যাপক সাড়া ফেলে।

তার এমন সিদ্ধান্তে বাজারে ফিরে আসে স্বস্তি। এসময় যেসব মাংস ব্যবসায়ী ন্যায্যমূল্যে মাংস বিক্রি করছিল, তাদের মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করতে থাকে। এছাড়াও কিছুদিন পূর্বে রাজশাহীর বাঘার আড়ানী হাটে ন্যায্যমূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করায় একজন ব্যবসায়ীকে খুন হওয়ার ঘটনা ঘটে।

তিনি বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর শাহজাহানপুরের আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানের মোবাইল ফোনে একটি নম্বর থেকে ফোন করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাকে ও তার ছেলেকে দুদিনের মধ্যে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এছাড়াও গুলি ও পিস্তল রেডি করা হয়েছে জানিয়ে মোবাইল ফোনে পিস্তল, গুলি, রামদা এবং মাথাছাড়া লাশের ছবি পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়।

এর প্রেক্ষিতে গত ২০ জানুয়ারি মাংস ব্যবসায়ী খলিল রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে বলে জানান তিনি।

খন্দকার আল মঈন বলেন, শনিবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-৩ ও র‌্যাব-৪ এর একটি দল আশুলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাংস বিক্রেতা খলিলকে হত্যার হুমকিদাতা মো. নুরুল হক ও তার অন্যতম সহযোগী মোহাম্মদ ইমনকে (২২) গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হুমকির ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানিয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, নুরুল হক দীর্ঘদিন ধরে আশুলিয়া থানার পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম এলাকায় ডিশ ও ইন্টারনেট লাইনের ব্যবসা করে আসছেন। এলাকায় তার প্রায় ৫শ ডিশ এবং ইন্টারনেট লাইনের সংযোগ রয়েছে। এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিরোধের জের ধরে কিছুদিন পূর্বে প্রতিপক্ষের সঙ্গে মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনায় তার ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে একজন তাকে আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর প্রদান করে তাকে ফোনে হত্যার হুমকি দিতে বলে। এতে তার ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায় কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে না।

ব্যবসায়িক সুবিধার লক্ষ্যে গ্রেপ্তার নুরুল হক গত ১৮ জানুয়ারি মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে ফোন করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাকে হত্যার হুমকি প্রদান করে।

নুরুল হক মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে হত্যার হুমকি প্রদানের সময় চাঁদা দাবির পাশাপাশি তার ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ সেলিমের নাম উল্লেখ করে বলে জানা যায়। একই দিনে নুরুল ইমনকে একটি ফোন ধরিয়ে মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে গালাগালি করতে বলে। ইমন নুরুলের কথামতো খলিলকে ফোন দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং তাকে দুই দিনের মধ্যে হত্যা করবে বলে গুলি ও পিস্তল রেডি করে রেখেছে বলে জানায়। এছাড়াও ইমন খলিলের মোবাইল ফোনে পিস্তল, গুলি, রামদা এবং মাথা কাটা লাশের ছবি পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। পরবর্তী সময়ে হুমকি প্রদানকৃত মোবাইল ও সিম কার্ডটি পানিতে ফেলে দেয়।

নুরুল হক ডিশ ব্যবসার পাশাপাশি কৃষিকাজ করতেন। নুরুল এলাকায় বিভিন্নজনকে হুমকি প্রদানের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত বলে জানা যায়। নুরুলের নামে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানায় হত্যার হুমকি, চাঁদাবাজি এবং মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৪টির অধিক মামলা রয়েছে।

ইমন দীর্ঘদিন যাবত নুরুলের ডিশের ব্যবসার কাজে সহায়তা করতো। এছাড়াও নুরুলের সঙ্গে ইমন এলাকায় বিভিন্ন জনকে হুমকি প্রদানের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত বলে জানা যায়।

হুমকির নেপথ্যে বেশি দামে গরুর মাংস বিক্রির সিন্ডিকেটের কোনো সদস্যের হাত বা ইন্ধন ছিল কি না জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, গতরাতে অভিযানের পর আশুলিয়ার স্থানীয় অনেক মাংস ব্যবসায়ী আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের কারো ইন্ধন ছিল কি না সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি কে বা কারা আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে হুমকি দিতে বলেছিল তাকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

(ঢাকাটাইমস/২৮জানুয়ারি/ এলএম/এসএম)