সড়ক দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে তিন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে সেল গঠনের পরামর্শ

সড়ক দুর্ঘটনার সঠিক পরিসংখ্যান ও কারণ উদঘাটনে সরকারকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একক সেল গঠন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
সোমবার বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে নিরাপদ সড়ক চাই আয়োজিত সড়ক দুর্ঘটনায় বিভ্রান্তিকর পরিসংখ্যান নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য নিয়ে। আবার বিআরটিএ ভিন্ন পরিসংখ্যান দেয়। এই দুই পরিসংখ্যানের সঙ্গে পুলিশের দেওয়া তথ্যের বিস্তার ফারাক। আবার বেসরকারি কিছু সংগঠন যে তথ্য দেয় যার সাথে অসামঞ্জস্যতা থেকে যায়। সরকারি সংস্থাই যদি বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয় তাহলে সড়ক দুর্ঘটনার সঠিক কারণ ও প্রতিকার সম্ভব হবে না। এজন্য আমরা চাই সড়ক দুর্ঘটনার সঠিক পরিসংখ্যান ও কারণ উদঘাটনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একক সেল গঠন করতে হবে। সরকার আমাদেরকে দায়িত্ব ও সহযোগিতা করলে আমরাও কাজ করতে প্রস্তুত আছি।
লিখিত বক্তব্যে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সারাবিশ্বের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশ করে থাকে। তাদের দেওয়া তথ্য মতে সড়ক দুর্ঘটনা তথ্য রোডক্র্যাশে প্রতি বছর সারা বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ১২ লাখ ছুঁইছুঁই। দক্ষিণ-এশিয়া অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। শতকরা হিসাবে এটি ২৮ শতাংশ। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা বা রোডক্র্যাশে মৃত্যু হয়েছে ২১ হাজার ৩১৬ জনের। তবে পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৩৭৬ জনের। একইভাবে ২০১৮ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে ২৪ হাজার ৯৪৪ জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৬৩৫ জনের। ২০২১ সালের রিপোর্টে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে মৃত্যু হয়েছে ৩১ হাজার ৫৭৮ জনের। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০১৬ সালে প্রতি লাখে মৃত্যুহার ছিল ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ২০২১ সালে এই মৃত্যুহার ছিল প্রতি লাখে ১৯ জনের মতো।
অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, ২০২৩ সালে ৫ হাজার ৪৯৫ সড়ক দুর্ঘটনায় সারা দেশে নিহত হয়েছেন ৫ হাজার ২৪ জন। পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে ওই বছর ৫ হাজার ৯৩ দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৪৭৫ জন নিহত। আরও দু-একটি সংগঠনের তথ্যও এরচেয়ে অনেক বেশি। আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে সেটিও প্রত্যেক রিপোর্টের সাথে মিলছে না। এতে করে দেখা যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সরকার, পুলিশ ও বিভিন্ন রিপোর্টে ভিন্নতা রয়েছে। আমরা মনে করি এতে করে জাতি বিভ্রান্ত হচ্ছে। কারণ সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের সকল তথ্যকে অগ্রহণযোগ্য বলে তীব্র প্রতিবাদ জানাই। বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তোলে।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানের যে ধারা আমরা শুরু করি এবং টানা ১১ বছর চলমানও রাখি। কিন্তু ভাবনার জায়গায় আমরা কখনই স্থির হতে পারিনি। পারিনি বলেই ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে আমরা আর সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশ করবো না।
সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও সরকারের, সড়ক মন্ত্রণালয়ও সরকারের। তাহলে দুটি মন্ত্রণালয়ের সড়ক দুর্ঘটনার ডাটার হিসাব ভিন্ন ভিন্ন কেন? আমরা মনে করি সরকারের দুটি মন্ত্রণালয়ের এই পারস্পরিক বিরোধী অবস্থার কারণে দেশে সঠিকভাবে দুর্ঘটনা নিরসনের কারণ উদঘাটন করা যায়নি। এই কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এখনও আমাদের দেশে একটি বিষ ফোড়ার মতো হয়ে আছে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিসংখ্যান দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতি বছরই বিগত বছরের রেকর্ড ভাঙছে। মৃত্যুর পাশাপাশি আহতের তালিকাও বেড়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ হচ্ছে।
এই সমস্ত কারণে আমরা তখন থেকেই মনে করে আসছিলাম আমরা যে কাজটি শুরু করেছি সরকারকে পথ দেখাতে সরকার এই বিষয়ে উদ্যোগী হোক। সরকার এই বিষয়ে কাজ শুরু করুক। সরকার গত বছর থেকে কাজটি শুরু করেছে। তবে বেসরকারিভাবে ডাটা উপস্থাপনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর এতে করে এই জাতির বিভ্রান্তি কাটবে না বলে মনে করি। (ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/এমআই/এসএম)

মন্তব্য করুন