ভুঁড়ি কমানোর স্বাস্থ্যসম্মত সহজ উপায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৯ মে ২০২৫, ০৮:৪১
অ- অ+

ভুঁড়ির অতিরিক্ত মেদ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রায় সবার জন্যই কঠিন হয়ে পড়ে। ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে শরীরে নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়। উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার যে পেটের মেদ বাড়ায় তা নয়, বেশি ক্যালরিযুক্ত যেকোনো খাবারই পেটের মেদ বাড়াতে পারে। একবার পেটে মেদ জমলে সেটা কাটিয়ে ওঠা যাবে না, এ ধারণা ভুল। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্থ হলে সহজে মেদ কমিয়ে ফেলা সম্ভব।

গবেষকেদের মতে, যখন একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়, তখন সেখানে ট্রান্সফ্যাট উৎপন্ন হয়। ট্রান্সফ্যাট পেটের মেদ বাড়িয়ে দেয়। পেটের মেদ অতিরিক্ত জমে যাওয়ার আগেই সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

সাধারণত মদ্যপান, মিষ্টিজাতীয় খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ, ডুবো তেলে ভাজা খাবার, কোমল পানীয়, অস্বাস্থ্যকর বাইরের খাবার, নিয়মিত লাল মাংস (রেড মিট) খাওয়া, স্যাচুরেটেড চর্বি গ্রহণ ইত্যাদি পেটের মেদ বাড়িয়ে তোলার পেছনে ভূমিকা রাখে।

শরীরের ওজন কমানোর জন্য সাধ্যমতো পরিশ্রমও করেন অনেকে। কিন্তু সফল হন কেউ কেউ। পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, আসলে এ ক্ষেত্রে চেষ্টার মধ্যেই থেকে যায় গলদ। জিমে যাওয়া, খাওয়াদাওয়ায় নিয়ম মানা, বাইরের খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখা প্রতিদিনের জীবনে এমন হাজার নিয়ম মেনে চলেও মেদ ঝরতে চায় না কিছুতেই।

সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এমন অনেকেই রয়েছেন, যারা স্থূলতা বা শরীরে মেদ জমার সমস্যায় ভুগছেন। এবং খুব দ্রুত রোগা হতে চান। তবে খাওয়াদাওয়া একেবারে বন্ধ করে কিংবা কঠোর ডায়েট করে নয়, ওজন কমাতে পারেন স্বাস্থ্যকর উপায়ে। পুষ্টিবিদরা এমন মানুষদের জন্য কিছু নিয়মের কাজের তালিকা দিয়েছেন।

ঠিকঠাকভাবে কাজগুলো করতে পারলে একদিনেই ১ কেজি ওজন কমানো সম্ভব। যে দিনটি আপনি ওজন কমানোর জন্য নির্বাচন করবেন, সে দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের ওজন নিন। তার পর শুরু করুন আপনার ওয়েট লস রুটিন। ২৪ ঘণ্টা পরে আবার ওজন নিয়ে দেখবেন প্রায় ১ কেজির মতো ওজন কমে গেছে। জেনে নিন কী কী করতে হবে এই এক দিনে-

মেদ কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে পানি। শরীরে জমে থাকা টক্সিন এবং শর্করাকে শরীর থেকে বার করে দিতে সক্ষম পানি। প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের এই সমস্ত ক্ষতিকর পদার্থ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এতে শুধু যে শরীরকে সুস্থ মনে হয় তা-ই নয়, পাশাপাশি মেদও কমে। পানি পানে বিপাক প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। খিদা কমায় এবং ব্যায়ামে কার্যকর করতে ভূমিকা রাখে। আর এসব মিলিয়ে ওজন কমানোতে প্রভাব রাখে। সারাদিন ধরে পানি পানের অভ্যাসে খাওয়ার পরিমাণ কমে। বিশেষ করে কোনো খাবার খাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি পানের অভ্যাস গড়লে ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। পানি হজমের কাজে সাহায্য করে, শক্তি দেয় এবং কার্ব গ্রহণের ইচ্ছা কমায়।

গ্রিন টি ওজন কমায়। গ্রিন টি হজম প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। গ্রিন টি উপস্থিত কেটাচিন পেটের মেদ ঝরাতে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই অতিরিক্ত ওজন কমাতে নিয়মিত গ্রিন টি খেতে পারেন। কালো চা বা দুধ চা বাদ দিন, শুধুমাত্র গ্রিন টি পান করুন আগামী ২৪ ঘন্টা। এতে পাচনতন্ত্রে জমে থাকা ক্ষতিকর খাদ্যগুণ শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। এটা শরীরকে মেদমুক্ত করার প্রথম ধাপ। তবে মনে রাখবেন, কফি খাওয়া বারণ। কালো চা এবং কফিতে ক্যাফিন থাকে। অম্লমিশ্রিত ক্যাফিন শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।

মেটবলিজমে সাহায্য করার কারণে শশা মেদ ঝরিয়ে ওজন কমাতেও সাহায্য করে। তাই রোগা হতে চাইলেও ডায়েটিশিয়ানরা শশা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শশা এমন একটি সবজি যা শরীরকে অ্যালকালাইন-মুক্ত হতে সাহায্য করে। পাশাপাশি শশা খেলে অল্পেই পেট ভরে যায়। তার ফলে খাবার পরিমাণ আপনা থেকেই কমে আসে।

সবজি এবং ফল-এ প্রোটিনের পরিমাণ সাধারণ ভাবে কম থাকে। আর প্রোটিন শরীরে মেদ জমার অন্যতম কারণ। বিনস জাতীয় সবজিতেও অবশ্য প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। সেই কারণে বিনস পরিহার করুন। অল্প প্রোটিনযুক্ত শাকসবজির উপর ভরসা করুন।

আখরোট, কাঠবাদাম ও সামুদ্রিক মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস। তাই এসব খাবার পেটের মেদ কমাতে কার্যকর।

ঝাল খাবার খান, পেটের মেদ কমে যাবে। অবাক হচ্ছেন? অবাক হবেন না। ঝাল খাবেন কিন্তু সেই ঝাল আসবে দারুচিনি, আদা, গোলমরিচ এবং কাঁচামরিচ থেকে। এসব রান্নায় ব্যবহার করুন। এই মসলা স্বাস্থ্যকর ও পেটের মেদ কমাতে কার্যকর।

কাঁচা রসুনের কয়েক কোয়া সকালবেলা চুষে খান। এই অভ্যাসের ফলে দ্রুত আপনার ওজন কমবে আর পেটের মেদ ঝরবে। কাঁচা রসুন শরীরের রক্তপ্রবাহ সহজ করে। পেটে মেদ জমতে দেয় না।

সকাল শুরু করুন এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করে। এতে শরীরের হজমপ্রক্রিয়া ভালো থাকবে এবং শরীরে মেদ জমার প্রক্রিয়া ধীর হবে।

অতিরিক্ত চিন্তা ও কম উদ্যোগের ফলেও কোমরের চারপাশে বা পেটে মেদ জমতে পারে। তাই ভুঁড়ি কমাতে অবশ্যই চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করতে হবে।

অনেকেই খাবার খাওয়ার পর বসে থাকেন বা শুয়ে পড়েন। তাদের খাবার সঠিকভাবে পরিপাক হয় না, ফলে পেটে চর্বি জমতে থাকে। সে জন্য খাবার খাওয়ার পর একটানা শুয়ে-বসে না থেকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা উচিত।

যাঁদের সারা দিন টেবিলচেয়ারে বসে কাজ করতে হয়, তাঁদের পেটে সহজে মেদ জমে যায়। ভুঁড়ি গোল হতে শুরু করে। তাই তাঁদের উচিত ৩০-৪০ মিনিট বসে কাজ করার পর উঠে ১০-১৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা।

বিনা পরিশ্রমে দ্রুত মেদ কমানো অসম্ভব। ফলে শারীরিক পরিশ্রম করতেই হবে। দৌড়নো, সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার কাটার মতো কার্ডিও ভ্যাস্কিউলার এক্সারসাইজ করুন। অর্থাৎ এমন কাজ করুন, যাতে হাঁপ ধরে এবং প্রচুর ঘাম নির্গত হয়। এতে শরীরে জমে থাকা মেদ গলে যাবে।

কী খাবেন তা তো জানলেন। পাশাপাশি কী কী খাবেন না, সে দিকেও আপনাকে নজর রাখতে হবে। দুধ, মিষ্টি, অ্যালকোহল আগামী ২৪ ঘন্টার জন্য একেবারে বর্জন করুন। রাতে অন্তত ৭ ঘন্টা ঘুমোন। পরের দিন সকালে আবার ওজন নিন নিজের। তফাতটা নিজের চোখেই দেখে নিন। আপনার এই অভ্যাসগুলো সহজে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

একবারে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ না করে অল্প অল্প করে বারবার খাবার গ্রহণ করুন। সারা দিনের অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার খাবারকে ৫-৬ বারে গ্রহণ করুন। সেখানে তিনবার প্রধান খাবার ও দুই-তিনবার নাশতাজাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।

ওজন কমানোর জন্য এই অভ্যাসগুলো নিজের জীবনযাপনের অংশ করে নিন। আপনি সহজেই ঝরঝরে হয়ে উঠবেন।

(ঢাকাটাইমস/১৯ মে/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
অস্ত্রসহ বনদস্যু করিম শরীফ বাহিনীর সদস্য আটক
ডিএমপির তিন সহকারী পুলিশ কমিশনাকে বদলি
কমনওয়েলথ চার্টার কর্মশালার উদ্বোধন করলেন উপদেষ্টা আসিফ
নুরুল হুদার সঙ্গে মব সৃষ্টিকারীদের বিচারের দাবি রিজভীর
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা