কী হচ্ছে চিনির বাজারে!

​​​​​​​লিটন মাহমুদ, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০১| আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:১৩
অ- অ+

সামনে রমজান। ইফতারে শরবতসহ বিভিন্ন পদের খাবারে ঘরে ঘরে চিনির ব্যবহার বাড়ে। মানুষের বাড়তি চাহিদাকে পূঁজি করে রমজানের আগেই অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন চিনির বাজারে কারসাজিতে উঠে পড়ে লেগেছে। সরকার চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করেছে গত বছরেই। এছাড়া বাজারে কারসাজি ঠেকাতে নানা অভিযান চললেও কাজ হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার সরকারি লাল চিনির দাম বাড়ানোর ঘোষণা স্থগিত করলেও বাজারে কারসাজি শুরু হয়ে গেছে। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে— কী হচ্ছে চিনির বাজারে!

সরকার ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার লাল চিনির দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু তারপরেও খুচরা পাইকারিবাজারে সাদা চিনির দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়ে সাদা চিনি হয়েছে ১৪৫ টাকা। পাইকারি বাজারে বস্তাপতি বেড়েছে ১০০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। আবার অল্প সংখ্যক খুচরা দোকানে আগের দাম ১৪০ টাকাতেই বিক্রি করলেও অনেক দোকানি বলছেন চিনি নেই। অন্যদিকে কম সংখ্যক খুচরা দোকানে লাল চিনি পাওয়া গেলেও বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৬০ টাকায়।

শুক্রবার রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক কারওয়ান বাজারে ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বৃহস্পতিবার পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে চিনি কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানি থেকে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

এদিন কারওয়ান বাজারের পাইকারি চিনি বিক্রির দোকান মেসার্স ইব্রাহিম স্টোর রহিম স্টোরে দেখা যায় দেশবন্ধু গ্রুপের ৫০ কেজির সাদা চিনির বস্তা ছয় হাজার ৭৫০ এবং ফ্রেশ কোম্পানির সাদা চিনি ৫০ কেজির বস্তা ছয় হাজার ৮৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা ব্যবসায়ী পরিচয়ে চিনি কিনতে চাইলে মেসার্স ইব্রাহিম স্টোরের মালিক মো. ইব্রাহিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বুধবার দেশবন্ধু গ্রুপের চিনি প্রতি বস্তা ছয় হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। আর ফ্রেশ চিনি ছয় হাজার ৭২০ টাকায় বিক্রি করছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সরকার চিনির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু পরে আবার বলেছে দাম বাড়াবে না। এর পরেই দাম বাড়িয়েছে কোম্পানি।

কারওয়ান বাজারের খুচরা চিনি বিক্রিতে নাজমুল বলেন, ‘সকালে ছয় হাজার ৯০০ টাকা বস্তা চিনি কিনতে হয়েছে। এ কারণে বাধ্য হয়েই আমাদের দাম বাড়াতে হয়েছে।'

একই বাজারের আরেক খুচরা বিক্রেতা আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমার আশেপাশের দোকানে ১৪৫ টাকায় চিনি বিক্রি হলেও আমার আগের চিনি ছিল এজন্য ১৪০ টাকায় বিক্রি করছি। শুনেছি পাইকারি দামই বাড়ছে। এজন্য সবাই দাম বাড়িয়েছে।' রোজার আগে চিনির দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে বলে ঢাকা টাইমসকে জানান এই খুচরা চিনি বিক্রেতা।

দেশে চিনির বাজারে (সাদা চিনি) গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে অস্থিরতা বিরাজ করছে। গত বছরের ২ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কাঁচা ও পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করেছিল। দেশের বাজারে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও চিনির দাম না কমে বরং বেড়েছে। সরকার দফায় দফায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে চিনির দাম ঠিক করে দিলেও বাজারে দাম কার্যকর করতে পারেনি।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বৃহস্পতিবারের বাজারদরের প্রতিবেদন অনুসারে ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। সরকার ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে ঠিক করে দেওয়া দামখোলা চিনির ক্ষেত্রে ১৩০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনির বেলায় ১৩৫ টাকা কেজি।

স্থানীয় চিনিশিল্পের সুরক্ষায় বিদেশ থেকে আমদানি করা চিনিতে সরকার উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে রেখেছে। এরপরও বিএসএফআইসির উৎপাদিত স্থানীয় লাল চিনির উৎপাদন মোট চাহিদার মাত্র শতাংশ। দেশে চিনি আমদানি হয় বছরে ২০২২ লাখ টন। আর লাল চিনি উৎপাদিত হয় মাত্র ৩০ হাজার টনের মতো। অর্থাৎ চিনির বাজার প্রায় পুরোপুরি আমদানির ওপর নির্ভরশীল।

জন্য সরকারি লাল চিনির পরিবর্তে আমদানি করা সাদা চিনির ওপরই ক্রেতাদের নির্ভর করতে হয়। বিদেশ থেকে অধিকাংশ চিনি অপরিশোধিত অবস্থায় আসে। দেশে আসার পর তা পরিশোধন করে বাজারে ছাড়া হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/এলএম/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ভারতের সামরিক অভিযানের দ্রুত, দৃঢ় ও কঠোর জবাব দেওয়া হবে: পাকিস্তানের সেনাপ্রধান
সুনামগঞ্জে কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় ৯০টি গরুসহ নৌকা জব্দ 
সাবেক আইজিপি মোদাব্বির হোসেন চৌধুরীর ইন্তেকাল 
মনোহরদীতে এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসায় সিলিং ফ্যান, নলকূপ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা