রহস্যময় করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ থাকার উপায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৪৯

রহস্যময় করোনাভাইরাস নতুন করে আবার চোখ রাঙাচ্ছে। করোনার দাপট অনেক কম থাকলেও পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়নি অদৃশ্য এই ভাইরাস। গত চার বছরে গোটা পৃথিবীর চেহারাটাই বদলে দিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস। সম্পূর্ণ নতুন এই অসুখটি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা একেবারে ব্যাহত করে দিয়েছিল। প্রাণ কেড়েছে বহু মানুষের। বর্তমানে চারিদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দাপট থেমে নেই। যে কোনো সময় যে কাউকে আক্রমণ করতে পারে করোনাভাইরাস। করোনা সংক্রমণ রুখতে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে বলছেন চিকিৎসকরা।

করোনাভাইরাসের উপসর্গগুলো জানুন। কোনটি করোনার উপসর্গ, কোনটি ফ্লুয়ের উপসর্গ আর কোনটি সাধারণ সর্দি জ্বরের উপসর্গ- সে বিষয়ে ভালো করে জানুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। করোনার উপসর্গ দেখা গেলে আলাদা করে সাবধান হওয়ার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। করোনাভাইরাসের উপসর্গগুলো হলো: জ্বর, টানা কাশি, ঘ্রাণ ও স্বাদের লোপ, শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভব করা, গা ব্যথা, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, সর্দি অথবা নাক বন্ধ, ক্ষুধামন্দা, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া।

ঠান্ডা লাগা এড়িয়ে চলুন। ভালো করে নাক, মুখ, গলা ঢেকে শীতের সময়ে বাইরে যান। কারণ এই সময়ে দূষণের কারণে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। আর সেটি যে কোনো ধরনের সংক্রমণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।

মুখে মাস্ক পরুন। করোনা চলে গেছে ভেবে মাস্ক পরাও ছেড়ে দিয়েছেন? এই সময়ে সেটি আবার ফিরিয়ে আনুন। কারণ শীতের সময়ে করোনা তো বটেই, অন্য ছোঁয়াচে রোগও ফিরে আসতে পারে। তাই এই সময়ে মাস্ক পরুন। তাতেই নিরাপদ থাকতে পারবেন।

ভিড় যতটা সম্ভব এগিয়ে চলুন। করোনার দাপট কমে গেছে বলে এখন আর দেশে সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। তবে শীতের সময়ে যেহেতু অনেকেরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পায়, তাই নানা মানুষ নানা রোগে ভোগেন। এই সময়ে যতটা সম্ভব বেশি ভিড় এড়িয়ে চলুন। তাতে রোগের হাত থেকে বাঁচতে পারবেন।

সব সময় হাত পরিষ্কার রাখুন। করোনা সংক্রমণের বাড়াবাড়ির সময়ে যেমন নিয়মিত ভালো করে হাত পরিষ্কার করতেন, এখনো তেমন করুন। সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে থাকুন। তাতে করোনার মতো সংক্রমণের আশঙ্কা কিছুটা কমবে।

বাইরে দেখা করুন। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে চান? তাহলে খোলা জায়গায় দেখা করুন। বদ্ধ জায়গায় দেখা করলে একজনের থেকে আরেকজনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়বে। এই নিয়মগুলো মেনে চললে করোনা থেকে সুস্থ থাকতে পারবেন।

কর্মক্ষেত্রে অফিসে ডেস্কে বসে কাজ শুরুর আগেই চারপাশ ভালোভাবে মুছে নিন। কি-বোর্ড, কম্পিউটার মাউস, ফোন ও অন্যান্য জিনিস যেগুলোতে আপনি হাত দেন, সেগুলো সব মুছে নিন। ওয়াইপ দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে মুছতে হবে ডেস্ক। এছাড়া ফোন থেকে ভাইরাস ছড়ানোর প্রবণতা থাকে। আর ফোন আপনি সবসময় ব্যবহার করছেন, তাই সেটা পরিষ্কার রাখা খুব জরুরি। ফোনের স্ক্রিন ও ব্যাক কভার ভালোভাবে ওয়াইপস দিয়ে মুছে নিন। তবে কোনও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যাতে পানি না ঢোকে, সেদিকেও নজ রাখতে হবে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে মুছতে হবে ফোনটি।

করোনার আক্রমণে শরীর ও ফুসফুস দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে সরাসরি ফুসফুসে আক্রমণ করে, মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। করোনার দাপট এখন বেশিমাত্রায়, তাই এখন ফুসফুসের প্রতি বাড়তি যত্ন নিতেই হবে।

করোনাভাইরাস ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। ফুসফুসের মধ্যে টাইটোনিমোসাইড বা টি সেলে ভাইরাস বংশবিস্তারের জন্য উপযুক্ত স্থান। যখন শরীরে কোনো ভাইরাস ঢোকে, তখন প্রথমে আমাদের শরীরে থাকা বিভিন্ন কোষ সক্রিয় হয়ে ওঠে। আর এই কোষগুলোই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে, তাদের কোষ সক্রিয়তাও বেশি থাকে। আবার অনেক সময় ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে শরীর প্রচুর পরিমাণে কোষ ছাড়তে থাকে। এই অবস্থাকে শরীরে সাইটোকাইন স্ট্রম বলে। ফলে, শরীর আরও অসুস্থ হয়ে যায়। তখনই রোগীকে আইসিইউতে নিতে হয়। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রধান কার্যকর উপাদান হচ্ছে জিঙ্ক। এ ছাড়া যারা একেবারে খেতে পারে না বা মুখে রুচি নেই, তাদের জিঙ্ক ওষুধ দেওয়া হয়। জিঙ্ক মুখের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে জিঙ্ক বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ট্যাবলেটের পাশাপাশি আমরা পেতে পারি মাংস, গরুর কলিজা, দুধ, ডিমজাতীয় খাবারে।

শরীরচর্চা করার পাশাপাশি ফুসফুসের প্রতি হয়ে উঠুন আরও একটু বেশি যত্নবান। সাধারণত ফুসফুস কতটা সুস্থ রয়েছে, তা বোঝা যায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের হিসাবে তার বাতাস ধরে রাখার ক্ষমতা দেখে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই ধারণক্ষমতা কমে। তাই বয়স ৪০ পেরোলেই ফুসফুসের প্রতি নিয়মিত বেশি খেয়াল রাখা দরকার। কম বয়স থেকেই সেই যত্নের পাঠ শুরু হলে তা আরও ভাল ফলদায়ক।

ফুসফুসকে সুস্থ রাখার বিষয়ে খাবারের একটা বড় ভূমিকা আছে। বিশেষ করে যাদের বয়সের কারণে বা পরিবেশ দূষণের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে ফুসফুস এমনিই কমজোর হয়ে গেছে বা হাঁপানি-সিওপিডি জাতীয় শ্বাসের অসুখ আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই সময় ফুসফুসের যত্নের কথা মাথায় খেতে হবে কিছু খাবার।

‘আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশন’-এর মতে সিওপিডি জাতীয় অসুখ যাদের আছে, তাদের কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারে রাশ টেনে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খেতে হবে বেশি। কারণ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কার্বোহাইড্রেট পরিপাকের সময় বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়। আর উপকারি ফ্যাট পরিপাকের সময় তা তৈরি হয় কম পরিমাণে। কাজেই হাঁপানি বা সিওপিডির রোগী থালা ভরে ভাত-রুটি-আলু-পাস্তা-নুডুল ইত্যাদি খেতে শুরু করলে কষ্ট বাড়তে পারে।

অন্যদিকে ‘লাং জার্নাল’-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এমনিতে অতি স্বাস্থ্যকর মেডিটেরিয়ান ডায়েট না খেয়ে যারা প্রায় কার্বোহাইড্রেটহীন কিটো ডায়েট খান, তাদের শরীরে কার্বন ডাই-অক্সাইড কম তৈরি হয়।

কার্বোহাইড্রেট কম মানে কত কম? ভারতীয় পুষ্টিবিদ বিজয়া আগরওয়াল জানিয়েছেন, “কার্বোহাইড্রেট সুষম খাবারের অঙ্গ। তাই তাকে একেবারে বাদ দেওয়া যাবে না। বরং কার্বোহাইড্রেটের ধরনটা পাল্টে দিন। সিম্পল কার্বোহাইড্রেটের বদলে খান কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট। কম স্টার্চ আছে এমন শাক-সব্জি বেশি করে খান। আলু-পটল-কুমড়ো-গাজর ইত্যাদি খান। খোসা না ছাড়িয়ে তরকারি করে খেতে পারলে আরও ভাল। ময়দার বদলে খান আটার রুটি, সাদা ভাতের বদলে ব্রাউন রাইস, কিনোয়া, বার্লি ইত্যাদি। এতে ফুসফুসের ক্ষতি যেমন কম হবে, ওজন ও ডায়াবিটিস বেশি থাকলে, তারও সুরাহা হবে।”

পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার ফুসফুসের জন্য ভালো। অতএব, সবুজ শাক, টমেটো, বিট, আলু, কলা খান নিয়মিত। প্রোটিন একটু বেশি করে খান। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, দই, ডাল, ছোলা, রাজমা ইত্যাদি। পুষ্টিবিদদের মতে, পোলট্রির মাংস, ডিম বা ভেড়ির মাছের বদলে দেশি মুরগি ও নদী-পুকুর-সমুদ্রের মাছ খাওয়া উচিত। টাটকা মাছ-মাংস যা পাবেন তাই খান। অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট— যেমন, সব রকম ভাজা, প্যাকেটের যে কোনও খাবার, প্রসেস করা মাংস যথাসম্ভব কম খান। স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খান পর্যাপ্ত।

ফুসফুসের স্বাস্থ্য তথা পুরো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে দিনে ২-৩ লিটার পানি অবশ্যই পান করতে হবে। এতে রক্তের ঘনত্ব ঠিকঠাক থাকে বলে সারা শরীরের সঙ্গে ফুসফুসেও রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। ফুসফুসের শ্লেষ্মা পাতলা থাকে। ফলে বাতাসের বিষ, জীবাণু হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বার করে দিতে সুবিধে হয়।

নিয়ম মেনে খাওয়া-দাওয়া করার পাশাপাশি কয়েকটি বিশেষ খাবার খেলে ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে যাদের ফুসফুস একটু কমজোর।

ফুসফুসকে যত্নে রাখতে কেবল ধূমপান ছাড়লেই হবে না, খাদ্যাভাসেও আনতে হবে বেশ কিছু বদল। এমন কিছু শাকসব্জি ও ফল আছে, যা ফুসফুসকে চাঙ্গা রাখে। জেনে নিন কী কী পাতে পড়লে ভাল থাকবে ফুসফুস।

পেঁয়াজ ও রসুন এই দুই আনাজ প্রদাহের প্রবণতা কমায়। সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জোগায়। ‘জার্নাল অফ ক্যানসার এপিডেমিওলজি’ ও ‘বায়োমার্কার্স অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এ প্রকাশিত প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যে সব ধূমপায়ী কাঁচা রসুন খান, ফুসফুসের বিভিন্ন অসুখে ভোগার আশঙ্কা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যায় তাঁদের।

আদা প্রদাহ কমায়। অল্প করে আদা কুচি নিয়মিত খেলে ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভাল থাকে।

কাঁচামরিচ খেলে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। সংক্রমণের আশঙ্কা কমে।

তিসির বীজে আছে ভিটামিন ই, বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আখরোটের ওমেগা থ্রি কার্যকারিতা বাড়ায় ফুসফুসের।

হলুদের কারকিউমিন প্রদাহ কমায়। এই সময়ে নিয়মিত দুধ-হলুদ রাখুন ডায়েটে। ফুসফুস চাঙ্গা রাখতে এই পানীয় দারুণ উপকারী।

ফল ও সব্জি বেশি করে খান। আপেল, পেয়ারা, শসা, সবেদা— এই সব ফল ফুসফুসের যত্নের জন্য খুবই ভাল। আপেল ও বাতাবি লেবুর ফ্ল্যাভেনয়েড ও ভিটামিন সি নিশ্চিত ভাবে কার্যকারিতা বাড়ায় ফুসফুসের। গাজর, কুমড়ো, বেল পেপারে থাকে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও ভিটামিন সি। সারা শরীরের পাশাপাশি ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এই সব সব্জি। কাজেই এগুলিও রাখতে হবে পাতে।

ভিটামিন-এ জীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। তবে ট্যাবলেট ক্যাপসুল নয়, খাবারে থাকা ভিটামিনই ভালো। ভিটামিন-এ পাওয়া যায় গাজর, কমলালেবু, টমেটো, ডিমের কুসুম, পালংশাক, রাঙা আলু, ব্রোকোলি-সহ নানা টাটকা ফল ও সবজিতে।

আমলকিসহ সব ধরনের লেবুতে থাকা ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

নিয়মিত গোলমরিচ খান আপনার শ্বাস কষ্ট থাকবে না।

অ্যাজমা ও ব্রংকাইটিসের মতো অনেক শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় কার্যকর হতে পারে গুড়। তিলের সঙ্গে গুড় মিশিয়ে খেলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়।

ফুসফুসকে রক্ষা করতে পারে তুলসিপাতা। বাতাসে থাকা ধূলিকণা শোষণ করতে পারে তুলসিগাছ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন অল্প করে তুলসীপাতার রস খেলে শরীরের শ্বাসযন্ত্রের দূষিত পদার্থ দূর হয়।

খাবার আগে ভালো করে হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে। অকারণে মুখে-নাকে-চোখে হাত না দেওয়া।

হাঁচি, কাশি, গলাব্যথা বা সর্দি-জ্বর হলে প্রয়োজনে অবশ্যই আলাদা থাকুন ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

(ঢাকাটাইমস/২৭ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :