জিকে সেচ প্রকল্পের পাম্প অকেজো, বিপাকে ৪ জেলার বোরো চাষি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০১ মার্চ ২০২৪, ১৮:১৫| আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৪, ২২:০০
অ- অ+

গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের প্রধান খাল চলতি মাসে পানিতে টইটম্বুর থাকার কথা থাকলেও খালটি এখন পানিশূন্য। এতে বিপাকে পড়েছেন ওই সেচ প্রকল্পের আওতায় থাকা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ মাগুরার কয়েক লাখ কৃষক। শঙ্কা দেখা দিয়েছে বোরো আবাদ নিয়ে।

জানা যায়, সেচ প্রকল্পের তিনটি পাম্প নষ্ট থাকাসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটি সময়মতো খালে পানি দিতে পারেনি। ফলে বোরো চারা রোপণ করতে না পারায় নষ্ট হচ্ছে বীজতলা। তবে এখনো অনেকে চাষ দিয়ে জমি তৈরির অপেক্ষায় আছেন। সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে বোরোর উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

সরেজমিন কুষ্টিয়া সদরের বটতৈল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জিকের প্রধান খাল পানিশূন্য রয়েছে। পানির স্তর একেবারে নিচে নেমে গেছে।

বটতৈল চারমাইল এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরিষা তোলার পর মাঠে জিকের পানি আসে। কিন্তু এবার ২০ থেকে ২৫ দিন আগে সরিষা তুললেও পানি আসার লক্ষণ নেই। কয়েক বিঘা জমি চাষ দিয়ে ফেলে রেখেছি, জমি পাকাতে পারছি না। বোরো আবাদের কী হবে, বুঝতে পারছি না।

মো. সাহাবুদ্দিন নামে জেলার আরেক কৃষক জানান, অন্যান্য বছর সময় মাঠে ধান রোপণ শেষ হয়ে যায়। এবার শুরুই করতে পারিনি। দুএকজন শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পানি তুলে চারা রোপণ করেছেন। জিকের পানি দিয়ে এক বিঘা আবাদে খরচ যেখানে বছরে ৩০০ টাকা, সেখানে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিয়ে খরচ পড়ে প্রায় হাজার টাকা পড়ে। ফলে লোকসানের ভয়ে অনেকেই আবাদ শুরু করছেন না।

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার বাগচুয়া গ্রামের কৃষক হেকমত আলী বলেন, ‘দুই বছর ধরে জিকের পানি পাচ্ছি না। সামর্থ্যবানরা শ্যালো মেশিন দিয়ে পানির ব্যবস্থা করছেন। বাকিরা পিছিয়ে পড়েছেন।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বাদেমাজু গ্রামের কৃষক আশাদুল হক জানান, পানি দেরিতে দেওয়ায় বোরো রোপণে বিলম্ব হচ্ছে। খাল পানিশূন্য থাকায় জমিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিকল্প হিসেবে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে পানি দিতে গিয়ে খরচ বাড়ছে।

একইভাবে ঝিনাইদহের শৈলকুপা মাগুরার কয়েকটি উপজেলার কৃষকরা কোনো ফসলই আবাদ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।

জিকে পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সভাপতি সাফায়েত হোসেন পল্টু বলেন, ‘পাম্প নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে বোরো আবাদে ব্যাঘাত ঘটবে।

জিকে সূত্র জানায়, ভেড়ামারায় প্রধান পাম্প হাউসের দুটির মধ্যে ২০২২ সাল থেকে একটি নষ্ট। অন্যটি দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছিল। জানুয়ারির শুরুতে চুয়াডাঙ্গায় পানি দিলে চাষিরা বোরো রোপণ করেন। কিন্তু কুষ্টিয়া এলাকায় জানুয়ারিতে সরিষা থাকায় কর্তৃপক্ষ ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পানি ছাড়া শুরু করে। দুদিন চলার পর পাম্পে ত্রুটি দেখা দিলে পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এখন পাম্প হাউসের তিনটি যন্ত্রই বিকল।

পাম্প হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, একমাত্র পাম্পও হঠাৎ করে বিকল হয়ে গেছে। দুই বছর আগে নষ্ট পাম্পটি মেরামতে জাপানের প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। আপাতত পানি সরবরাহ বন্ধ। আমরা দ্রুত পাম্প সচলের চেষ্টা করছি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

পানি দিতে না পারায় বিকল্প উপায়ে ধান রোপণের অনুরোধ জানিয়েছেন জিকের মরফোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন।

এদিকে পাম্প অচল হওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। সেখানে বোরো মৌসুমে পানি সরবরাহ করা নাও হতে পারে বলে মত দিয়েছেন প্রকৌশলীরা। এতে বোরো আবাদে বিঘ্নের পাশাপাশি চার জেলায় পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ জানান, পদ্মা নদীর পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ভেড়ামারায় তিনটির মধ্যে একমাত্র সচল পাম্পটিও হঠাৎ বিকল হয়ে গেছে। পানি সরবরাহ কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে, তা বলা সম্ভব হচ্ছে না।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, পদ্মার পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া সেই সাথে পাম্প বিকল হয়ে পড়ায় আমরা জিকে সেচ প্রকল্পে পানি সরবরাহ করতে পারছি না।

উল্লেখ্য, জিকের অধীনে সেচের জমি আছে লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে বোরো চাষ হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার আর আমন চাষ হয় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে।

(ঢাকাটাইমস/০১মার্চ/প্রতিনিধি/পিএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে ট্রল, দিনাজপুরের এএসপি প্রত্যাহার
‘গোপালগঞ্জে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি’
“চাঁদাবাজ যতই প্রভাবশালী হোক, পার পাবে না”
গোপালগঞ্জে বৃহস্পতিবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা