পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলে কুমড়ায় হাসি ফুটেছে চাষিদের

ফরিদপুরের পদ্মার বুকজুড়ে বিস্তীর্ণ বালুচরে মানুষ অব্যবহৃত পতিত জমিকে ব্যবহার উপযোগী করে নানা ফসলের আবাদ করছে। কয়েক বছর ধরে তারা বালু মাটিতে কুমড়া চাষ করছেন এবং কুমড়া চরাঞ্চলবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়েছে। জেলায় এ বছর ৫০ কোটি টাকার অধিক মূল্যের কুমড়ার বাজার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রীচর ও চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের পদ্মার দূর্গম চরে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার বুকজুড়ে জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ বালুচর। যেদিকে দৃষ্টি যায় শুধু বালু আর বালু। এসব বালু মাটিতে আগে তেমন ফসল ফলানো যেতো না। কিন্তু এখন বদলে গেছে চিত্র। চরের কৃষকরা অনাবাদি সেই জমিকে ব্যবহার উপযোগী করে ফসল ফলাচ্ছেন। কয়েক বছর ধরে বালু আর পলি মাটিতে কুমড়া চাষ করছেন তারা।
এই পতিত জমির কুমড়া চরাঞ্চলবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়েছে। জেলায় এবছর ৫০ কোটি টাকার অধিক মূল্যের কুমড়া উৎপাদন হয়েছে। এর বেশিরভাগই চরাঞ্চলে উৎপাদিত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারীরা এসে খেত থেকেই কৃষকের উৎপাদিত কুমড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া কুমড়া বিক্রির জন্য হাটও রয়েছে। এ বছর কুমড়ার বাম্পার ফলন এবং দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চাষীরা। প্রতি কেজি কুমড়া খেত থেকে বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
কথা হয় চরাঞ্চলে কুমড়া আবাদ করেছেন এমন এক কৃষকের সঙ্গে। তার নাম খলিলুর রহমান। তিনি জানান, প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে কুমড়া আবাদে খরচ হয়েছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। উৎপাদিত কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই কুমড়া বিক্রির উপযোগী হয়ে থাকে। সাথি ফসল হিসেবেও কুমড়া চাষাবাদ করা হয়।
এভাবেই চরের মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে কৃষি অর্থনীতি। এখানকার চাষীদের বক্তব্য— চরে আগে গবাদি পশু পালনের বাইরে ভূট্টা আর বাদামের আবাদ হতো। কিন্তু এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে। এই চরের বাসিন্দারা এখন, বিভিন্ন জাতের সবজি, ডাল, কলা, তরমুজ, কুমড়াসহ নানা ধরনের ফসলের আবাদ করছেন। এতে করে আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ছে চাষীদের।
কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর ধরে অনাবাদি জমি চাষের উপযোগী করে তুলেছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। তাদের সকল ধরনের সহায়তা করা হয়ে থাকে। এছাড়া পদ্মাসেতু নির্মাণের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হওয়ায় এ অঞ্চলের চাষীরা লাভবান হচ্ছেন।
তিনি বলেন, কৃষি অর্থনীতির মাধ্যমে অবহেলিত চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটেছে। সরকারি ব্যবস্থায় দূর্গম চরে বিদ্যুত পৌছে গেছে, হয়েছে সড়কের উন্নায়ন। যার ফলে তারা (চরবাসি) সহজেই তাদের উৎপাদিত পণ্যটির বাজারজাত করতে পারছেন।
জেলার এই কৃষিকর্মকর্তা জানান, জেলায় এবছর চরাঞ্চলে ৮শ ৫০ হেক্টর জমিতে কুমড়ার চাষাবাদ হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৭মার্চ/প্রতিনিধি/এসআইএস)

মন্তব্য করুন