দেশের একমাত্র ‘গুচ্ছ ভাস্কর্য’ পূর্ণাঙ্গ হয়নি ৩২ বছরেও

শেখ শাহরিয়ার হোসেন, জবি প্রতিনিধি
  প্রকাশিত : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১৪:৫২
অ- অ+

নির্মাণের ৩২ বছরেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র ব্যতিক্রমধর্মী গুচ্ছ ভাস্কর্য ‘৭১-র-গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি’। এত বছরেও ভাস্কর্যটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে না পারায় ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, দেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্যটির নির্মাণ শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। যা শেষ হয় ১৯৯১ সালে। ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম খান এটি উদ্বোধন করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় জগন্নাথ কলেজের ভেতরে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হতো। এরপর এসব মৃতদেহের স্তূপ সাজিয়ে দেওয়া হতো গণকবর। নির্মম সেই হত্যাযজ্ঞের স্মারক হিসেবে গণকবরের ওপরে এ ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়।

ভাস্কর্যের নিচে রয়েছে পানি, যা দিয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশকে বোঝানো হয়েছে। আর পানির ভেতরে রয়েছে বাংলা বর্ণমালা, যা দিয়ে ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বোঝানো হয়েছে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সফলতায় বাংলার মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার ভাবনা আসে।

ভাস্কর্যটির যে অংশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে বেদনার জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ২৫ মার্চের কালরাতকে। এ অংশে দেখানো হয়েছে— এই রাতে ইয়াহিয়া খান মাতাল অবস্থায় আছে, পাকিস্তানিরা হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। গর্ভবতী মাকে অত্যাচার করে হত্যা করা হচ্ছে। লাশ ফেলে রাখা হচ্ছে যেখানে সেখানে। ভাস্কর্যের অংশ হিসেবে রয়েছে একটি পত্রশূন্য বৃক্ষ। তার ওপর একটি শকুন বসে আছে। এর দ্বারা সে সময়ে শ্মশান হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের প্রতীক চিহ্নিত করা হয়েছে।

ভাস্কর্যের অন্য অংশে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির চিত্র। বাংলার সর্বস্তরের মানুষ একত্রিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে লড়ছেন। দা, বটি, খুন্তি, কোচ, বর্শা সবকিছু নিয়ে শত্রুর মুখোমুখি হয়েছেন তারা। পরের অংশে দেখা যায়, সবাই আধুনিক অস্ত্র নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। যুদ্ধে নামার পর যখন মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে পারেন, পুরোনো পদ্ধতি দিয়ে তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা সম্ভব নয়। তখন সবাই প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন, যেখানে রয়েছে সব বয়সী নারী-পুরুষ। পরিপূর্ণ যুদ্ধের জন্য গেরিলা কৌশল, মাঝারি আকারের অস্ত্রের ব্যবহার শিখছেন তারা। ভাস্কর্যের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন প্রশিক্ষণ নেওয়া সাহসী এক কৃষকের ছেলে। তার চোখে যুদ্ধজয়ের নেশা। মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিতে সবার চোখে প্রতিশোধের স্পৃহার ছাপ রয়েছে। ভাস্কর্যে সবার মাথা সোজা, মুখ লালবর্ণের। এর কারণ রাগ হলে মানুষের চেহারাও লালবর্ণ ধারণ করে। অন্যদিকে গণহত্যার দৃশ্যের রং ধূসর, কারণ এটি আমাদের বেদনাদায়ক স্মৃতি।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্য আমাদের ক্যাম্পাসে অবস্থিত জেনে গর্ব হয়। শুনেছি ভাস্কর রাসা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পাঁচটি ভাগে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। আশাকরি প্রশাসনের সহায়তায় অতি দ্রুত এর নির্মাণ শেষ হবে।’

এ বিষয়ে ভাস্কর্যটির স্থপতি ভাস্কর রাসা বলেন, ‘গুচ্ছ ভাস্কর্যে এখনো তিনটি অংশের কাজ বাকি রয়েছে। বিজয়ের ভাস্কর্যটা পিতলের করতে চাই। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ, ঘাতক ও বিজয়; এই তিনটা ভাস্কর্য সম্পন্ন করতে আমাদের প্রায় চার কোটি টাকা লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার সঙ্গে অনেকদিন হয় যোগাযোগ করেনি। এজন্য এই কাজটা করার আগ্রহ আমি হারিয়ে ফেলেছি।’

বিষয়টি নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
খালেদা জিয়ার সঙ্গে কর্নেল অলির সাক্ষাৎ 
বাড্ডায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ: চিকিৎসাধীন শিশুর মৃত্যু, চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক
টাইব্রেকারে সাফ ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের, চ্যাম্পিয়ন ভারত
পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত আইজিপি হলেন ১২ পুলিশ কর্মকর্তা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা