দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা
ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে সর্বস্তরের মানুষ

মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের দিনটি অশেষ তাৎপর্য ও মহিমায় অনন্য। এক মাস সিয়াম সাধনার পর ধর্মীয়-ভাবগাম্ভীর্য আর উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সারাদেশে উদযাপন হচ্ছে ঈদুল ফিতর। ঈদের আনন্দে মেতেছে গোটা দেশ। ঈদের নামাজে ধনী-গরিব সব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে শামিল হয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। যেখানে একাকার শৈশব, কৈশর, যৌবন আর বার্ধক্যের রঙ।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, জাতীয় ঈদগাহ সহ সারাদেশে মসজিদ ও ঈদগাহে বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকে কাছাকাছি সময়ে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের জামাত।
নামাজ শেষে মুসল্লিরা দেশ ও মানুষের কল্যাণ কামনায় মুনাজাত করেন। মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। প্রত্যাশা, ঈদের দিনের দিনের মতোই সুন্দর আর আনন্দময় হোক প্রতিটি দিন।
বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদগাহে প্রতি বছরের মতো এবারও নারীদের জন্য নামাজের বিশেষ ব্যবস্থা ছিল।
এখানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, সচিব ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সর্বস্তরের হাজারো মানুষ শ্রেণি-পেশার মানুষ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও উপস্থিত ছিলেন।
সকাল পৌনে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সর্বস্তরের মানুষ ঈদের নামাজ পড়তে এসেছেন। হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়েছেন। বাবার হাত ধরে ছোট্ট শিশুরাও এসেছে ঈদগাহে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদগাহ মাঠে সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও দক্ষিণ সিটির পক্ষ থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ।
ঈদগাহে আগত মুসল্লিদের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঈদগাহে প্রবেশ করানো হয়েছে। কয়েক স্তরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল।
নামাজের আগে জাতীয় ঈদগাহে হামদ, নাত ও পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করা হয়। এছাড়া ঈদের গুরুত্বের বিষয় আলোচনা করা হয়।
নামাজ শেষে পড়া হয় খুতবা, এরপর দোয়া ও মোনাজাত। এরপর বুকে বুক মিলিয়ে হৃদয়ের উষ্ণতায়, প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হন সবাই।
ঈদের নামাজ পড়তে বাবা হাত ধরে জাতীয় ঈদগাহে নামাজ পড়তে এসেছে ৮ বছরের তামিম। সে ঢাকা টাইমসকে বলে, বাবার সঙ্গে নামাজ পড়তে এসেছি। খুব ভালো লাগছে।
ষাটোর্ধ্ব আব্দুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, রোজাদারদের জন্য ঈদের নামাজের অনুভূতি অন্য রকম। ৩০টা রোজা রাখার পর ঈদে নামাজ পড়তে জাতীয় ঈদগাহে এসেছি। এ অনুভূতি যারা রোজা রাখেনি, তারা পাবে না।
জাতীয় ঈদগাহে নারীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা ছিল। ভাইয়ের সঙ্গে নামাজে এসেছেন মোসা. মহীমা খাতুন (২৮)। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, এবার প্রথম জাতীয় ঈদগাহে নামাজ পড়েছি। খুব ভালো লেগেছে। সবার সঙ্গে দেখা হয়েছে। এক সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ নামাজ পড়েছে।
ঈদের প্রধান জামাতের ইমাম ছিলেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন এবং মোকাব্বির হিসেবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের মুয়াজ্জিন কারি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান দায়িত্ব পালন করেনে।
জাতীয় ঈদগাহে ২৫ হাজার ৪০০ বর্গমিটার আয়তনের মূল প্যান্ডেলে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি ঈদের নামাজের জামাত আদায় করেছেন। এছাড়াও অনেক মুসল্লি মূল প্যান্ডেলের বাইরে ঈদের জামাত আদায় করেছেন।
তবে একদিন আগে বুধবার দেশের চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, ঝিনাইদহ, জামালপুর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল, শরীয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ, পটুয়াখালী, বরিশাল ও নোয়াখালীর বিভিন্ন জায়গায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করেছেন।
(ঢাকাটাইমস/১১এপ্রিল/টিআই/ইএস)

মন্তব্য করুন