দিনাজপুরে প্রসূতির পেটে গজ ও ফুল রেখে সেলাই করার অভিযোগ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার রায়হান ক্লিনিকে মাইমুনা আক্তার মীম (১৮) নামের এক প্রসূতির সিজারের সময় পেটের মধ্যে গজ ও ফুল রেখে সেলাই করার অভিযোগ উঠেছে গাইনি চিকিৎসক ডা. মোছাম্মৎ তাহেরা খাতুন লাভলীর বিরুদ্ধে। প্রসূতির পিতা এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জনের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ নিয়ে বুধবার বিকালে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করেছেন জেলা সিভিল সার্জন।
বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, মেডিকেল অফিসার ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার এই তিনজনকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রসূতি মাইমুনা আক্তার মীম নবাবগঞ্জ উপজেলার নওদাপাড়া গ্রামের ইসাহাক আলীর স্ত্রী।
প্রসূতির পিতা মতিয়ার রহমান বলেন, আমার মেয়ের প্রসব ব্যথা উঠলে, গত ৬মার্চ বিরামপুর রায়হান ক্লিনিকে ভর্তি করি। পরে ওইদিন ডা. তাহেরা খাতুন আমার মেয়ের সিজার করেন। তিনদিন পর মেয়েকে রিলিজ দেয় এবং বাড়ি নিয়ে যাই। ৭দিন পর সেলাই কাটা হয়। তার ২৭দিন পর মেয়ের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। পরে ৩এপ্রিল তাকে আবার রায়হান ক্লিনিকে ভর্তি করি। ভর্তির পরও কোনো মতে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যাচ্ছিল না। শেষে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। ডাক্তাররা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবার মেয়েকে অপারেশন করেন। তখন ডাক্তাররা বলেন মেয়ের পেটের মধ্যে গজ ও অনেক ময়লা ছিল। এছাড়াও আপনার মেয়ের জরায়ুতে ইনফেকশন হয়েছিল, সে ভবিষ্যৎ আর মা হতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে আর কোনোদিন মাতৃত্বের স্বাদ নিতে পারবে না, তার জীবন শেষ। আমি আমার মেয়ের এই ক্ষতির ন্যায্য বিচার চাই। সিভিল সার্জনের নিকট অভিযোগ করেছি। আমি চাই আর কোনো মেয়ের যেন এমন সর্বনাশ না হয়।
প্রসূতি মাইমুনা আক্তার মীম বলেন, গত ৬ মার্চ আমার প্রসব ব্যথা উঠে। ডা. তাহেরা ম্যাডাম আমার সিজার করেন। পরে আমার প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। দিনাজপুরে আবার অপারেশন করে। অপারেশন করে আমার পেট থেকে গজ আর অনেক ময়লা বের করা হয়। ডাক্তাররা বলেছেন আমি আর কোনো দিন মা হতে পারবো না।
রায়হান ক্লিনিকের ম্যানেজার মাহবুব আলম বলেন, গত ৬মার্চ আমাদের ক্লিনিকে মাইমুনা আক্তার মীম নামের একজন প্রসূতি ভর্তি হয়। ডা. মোছাম্মৎ তাহেরা খাতুন লাভলী ম্যাডাম তার সিজার করেন। কিছু দিন পর ওই রোগীর রক্তক্ষরণ হয় এবং আমাদের এখানে ভর্তি করে। সেদিন তাহেরা ম্যাডাম ছিলেন না, দিনাজপুর ছিলেন। শেষে আমাদের ক্লিনিকের এ্যাম্বুলেন্সে করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম রসূল রাখি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মোছাম্মৎ তাহেরা খাতুন লাভলীর বিরুদ্ধে একজন প্রসূতির সিজার নিয়ে দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছে। সিভিল সার্জন আমাকেসহ তিনজনকে দিয়ে একটি তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই প্রসূতির পরিবারের লোকজনকে ডাকা হয়েছে, তদন্ত চলছে।
এ বিষয়ে গাইনি চিকিৎসক ডা. মোছাম্মৎ তাহেরা খাতুন লাভলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। তার পেটে কোনো গজ বা ফুল রাখা হয়নি। এটা আমাকে হেয়-প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে।
(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/প্রতিনিধি/পিএস)

মন্তব্য করুন