ইরানে বিরল ‘মাছ বৃষ্টি’, কেন হয় এমনটা?
আকাশ থেকে বৃষ্টি, তুলার মতো বরফ পড়তেও দেখা যায়। মাঝে মাঝে শিলাবৃষ্টিসহ উল্কাবৃষ্টিও দেখা যায়। তবে বৃষ্টির ফোঁটার সঙ্গে আকাশ থেকে ঝড়ে পড়ছে মাছ- যাকে বলে মাছের বৃষ্টি। বিরল হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৃষ্টির সঙ্গে মাছ ঝরে পড়ার একাধিক ঘটনা দেখা গেছে। সম্প্রতি এই বিরল ঘটনা ঘটেছে ইরানের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ কোগিলওয়ে-বোয়ের আহমাদ প্রদেশের ইয়াসুজ শহরে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে সম্প্রতি ১২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে- বৃষ্টির সঙ্গে ঝরে পড়ছে মাছ। প্রতিটি মাছের গড় আকৃতি ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি এবং প্রতিটিই জীবন্ত।
জানা গেছে, গত ৪ মে ভারী বর্ষণের সময় অজস্র মাছ পাকা ফলের মতো ঝরে পড়েছে ইয়াসুজ শহরজুড়ে। সে সময়েই ভিডিওটি ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন এক ব্যক্তি, যা এখন ভাইরাল।
২.২ মিলিয়নেরও বেশি ভিউসহ, ভিডিওটিতে কয়েক হাজার কমেন্ট করা হয়েছে। একজন ব্যবহারকারী রসিকতা করে লিখেছেন, ‘মিসাইল বৃষ্টির পরিবর্তে মনে হচ্ছে ইসরায়েল মাছ পাঠিয়েছে।’
অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘সমুদ্র আজ রাতে ইরানের জনগণকে রাতের খাবার সরবরাহ করেছে।’
কী কারণে ঘটে মাছ বৃষ্টি?
বিজ্ঞানীদের মতে, ‘মাছ বৃষ্টি’ অস্বাভাবিক হলেও প্রকৃতিতে এটা ঘটে থাকে। মাছসমৃদ্ধ কোনো কম গভীরতার জলাশয়ের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণিবায়ুর কেন্দ্র বয়ে যাওয়ার সময় পানিতে থাকা ছোট ছোট মাছ, ব্যাঙসহ সবকিছুই ঘূর্ণিবায়ুর সঙ্গে আকাশে উঠে ঝড়ের সঙ্গে অনেক দূরে যেতে পারে। এমনকি এই জলঘূর্ণি থেমে যাওয়ার পরও মেঘের স্তরের কারণে এরা সাময়িকভাবে আটকে থাকে। ঝড় ও জলঘূর্ণি থেমে গেলে বৃষ্টির সঙ্গে ঝরে পড়ে জলজ প্রাণীগুলো।
এরআগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরেও যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের টেক্সারকানা শহরে এমনই এক ঘটনা ঘটে। ওই শহরের বাসিন্দারা ঝড়বৃষ্টি চলাকালীন আচমকা বিকট শব্দ শুনতে পান। শহরবাসী বাইরে বের হয়ে দেখেন, আকাশ থেকে শত শত মাছ পড়ছে। মাছের সঙ্গে আছে ছোট ব্যাঙ ও ছোট ছোট কাঁকড়াও। পরে টেক্সারকানা শহরের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে একটি পোস্ট করা হয়।
এছাড়া প্রতি বছরের মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে হন্ডুরাসের বিভিন্ন স্থানে ‘মাছ বৃষ্টি’ হয় বলে দাবি করেন সেখানকার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা এ বৃষ্টির নাম দিয়েছে ‘জুভিয়া দে পেতেস’। স্প্যানিশ এই শব্দটির অর্থ হল ‘মাছের বৃষ্টি’। আকাশ থেকে অঝোরে ঝরে পড়তে থাকে মাছ, স্কুইড, ব্যাঙ ইত্যাদি।
একটা সময় পর্যন্ত এ অঞ্চলের বহু মানুষ বিশ্বাস করতেন, এক সন্তের আশির্বাদেই এমনটা হয়। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি (১৮৫৬ সাল ও ১৮৬৪ সাল) সময়ে খ্রিষ্ট ধর্মযাজক হোসে সুবিরানা হন্ডুরাসে আসেন। সে সময় এই অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ অত্যন্ত অনটন আর দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাতেন। তাঁদের দুর্দশা দূর করতে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন তিনি। হোসে সুবিরানার প্রার্থনার পর থেকেই দারিদ্র্যের কষ্ট দূর করতে ঈশ্বর আকাশ থেকে ‘মাছের বৃষ্টি’ করেন বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেন এই অঞ্চলের মানুষ।
(ঢাকাটাইমস/০৯মে/এমআর)