রাসায়নিকমুক্ত গাছ পাকা আম চেনার কৌশল

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৫ মে ২০২৪, ০৯:৩২ | প্রকাশিত : ২৫ মে ২০২৪, ০৯:২৮

বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন ফল হিসাবে আম অতি জনপ্রিয় একটি ফল। আমকে ফলের রাজা বলা হয় কারণ এতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আম বাংলাদেশের জাতীয় গাছ। ভারত, পাকিস্তান এবং ফিলিপাইনের জাতীয় ফল। আম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা। কয়েক হাজার বছর ধরে আম চাষাবাদ হয়ে আসছে ভারতীয় উপমহাদেশে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত উষ্ণ প্রধান জলবায়ুর অঞ্চলগুলোতে আমের চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে অর্ধেকের কাছাকাছি আম উৎপাদন হয় শুধুমাত্র ভারতেই। এর পর অন্যান্য যেসব দেশ আম উৎপাদন করে তার মধ্যে আছে চীন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর-দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা প্রভৃতি। বাংলাদেশের রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় ভালো মানের এবং রপ্তানিযোগ্য আম চাষ হয়ে থাকে।

আমের স্বাদের যে ভিন্নতা সেটি মূলত এর জাতের ওপর নির্ভরশীল। ১৫০০টিরও বেশি জাত ও ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতি রয়েছে আমের এবং সবগুলো জাতই একে অপরের থেকে আলাদা। টক আর অতি মিষ্টি এবং এর মাঝখানে যত রকম স্বাদ রয়েছে সবই আমাদের আমের জাতগুলোতে রয়েছে।

আমাদের দেশের জনপ্রিয় জাতের আমগুলোর সুন্দর সুন্দর বাহারী নাম রয়েছে। এক নামে সারাদেশের মানুষ এদের চিনতে পারে। এসব জাতের একটা আলাদা কদর আর চাহিদা রয়েছে আমাদের কাছে। স্বাদে গন্ধে এসব জাতের কোন তুলনা হয় না। সে রকম জনপ্রিয় জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- হিমসাগর, ল্যাংড়া, খিরসাপাতি, হাড়িভাঙ্গা, কোহিতুর, গোপালভোগ, লক্ষণভোগ, মোহনভোগ, কিষাণভোগ, অমৃতভোগ, মিসরীভোগ, কৃষ্ণভোগ, রাজভোগ, ক্ষীরপুলি, শাহী-পছন্দ, রানী-পছন্দ, দিল-পছন্দ, মির্জাপুরী, ফজলি, চসা, আশ্বিনা, বোম্বাই (মালদা), সূর্যপুরী, শ্রীধন, গোলাপ খাস, বৃন্দাবনী, দিল খোশ, কোহিনুর, চৈতালী, জাফরান, দিল খোস, দুধ কুমার, দুধসর, বাবুই ঝাঁকি, মধুচাকী, মিঠুয়া, শ্রাবণী, স্বর্ণরেখা, সুবর্ণরেখা, ক্ষীরপুলি, মল্লিকা, বেগমপসন্দ, মিয়াজাকি আম ইত্যাদি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আম ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম, আমের হলুদ এবং কমলা অংশে বিটা কেরোটিন পাওয়া যায়। আমের সন্ধান পাওয়া বিটা ক্যারোটিনে অনেক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। আমে থাকা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, আমের পলিফেনল স্তন ক্যানসারের কোষের বৃদ্ধিকে বাঁধা দেয়। এছাড়া কোলন ক্যানসার, রক্তস্বল্পতা ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।

আম ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যা রক্তনালী এবং স্বাস্থ্যকর কোলাজেন বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে কাজ করে। এছাড়াও ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত কমাতে সহায়ক। আমে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, পেকটিন, ভিটামিন ‘সি’ কোলেস্টেরল লেভেলের ভারসাম্য বজায় রাখে। ত্বকের জন্য আম খুবই উপকারী। ব্রণ এবং ত্বকের অন্যান্য অনেক সমস্যা প্রতিরোধ করে আম।

চিকিৎসকদের মতে, আম হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সক্ষম, দেহের হার্ট সম্পর্কিত সিস্টেম অর্থাৎ কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকেও সমর্থন করে। আম ম্যাগনেসিয়াম এবং ইন পটাসিয়াম সমৃদ্ধ। আম পাচনতন্ত্রকে স্থিতিশীল রাখে, ফলে হজম ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে, আমের উপস্থিতিতে অ্যামাইলেস যৌগ এবং ডায়েটারি ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও কাজ করে।

প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ২৭৪০ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন থাকে। আম শ্বেতসারের ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ২০ গ্রাম শ্বেতসার পাওয়া যায়। রয়েছে ১০৭ ক্যালরি, ৩ গ্রাম আঁশ, ২৪ গ্রাম শর্করা। এছাড়া এতে রয়েছে ২৫৭ মি.গ্রা. পটাসিয়াম, ০.২ মি.গ্রা ভিটামিন বি-৬।

সুস্বাদু মৌসুমি ফল আমের সুঘ্রান চারদিকে ছড়িয়ে পরায় কমবেশি সবাই কিনছে আম। কিন্তু অধিকাংশ ক্রেতাই নিজের অজান্তে কিনে ফেলছেন রাসায়নিকযুক্ত অপরিপক্ক আম। একদিকে স্বাদ গন্ধহীন আম কিনলে খাওয়াটা হয়ে যায় পণ্ড অন্যদিকে আর্থিক লোকসান। গাছপাকা না হওয়ায় আমগুলো পাকানো হয় কেমিক্যাল বা রাসায়নিক দিয়ে। এতে আমের স্বাদ তো থাকেই না, সেইসঙ্গে এটি শরীরের জন্যও ভীষণ ক্ষতিকর।

ক্যালসিয়াম কার্বাইড, অ্যাসিটিলিন গ্যাস, কার্বন-মনোক্সাইডের মতো রাসায়নিকগুলো ব্যবহার করে কাঁচা আম ও অন্যান্য কাঁচা ফল পাকানো হয়। রাসায়নিকগুলো এতটাই ক্ষতিকারক যে, ফলের মাধ্যমে তা শরীরে গেলে ত্বকের ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, জরায়ুর ক্যান্সার, লিভার ও কিডনির সমস্যা, মস্তিষ্কের ক্ষতির মতো মারাত্মক রোগ হওয়ার ঝুঁকি দেখা যায়। তাই ভালো আম চেনার উপায় জানতে হবে। ভালো ও মিষ্টি আমের বৈশিষ্ট্যগুলো কী রকম, জেনে নেওয়া যাক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকা আম দেখলেই তা সঙ্গে সঙ্গে কিনে নেওয়া ঠিক হবে না । অনেকসময়, কৃত্রিম পদ্ধতিতে রাসায়নিক ব্যবহার করে আম পাকানো হয় । কৃত্রিমভাবে পাকানো আম খেলে নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে । যেমন, মুখ, গলা জ্বালা করতে পারে, পেটে ব্যথা হতে পারে, ডায়ারিয়ার সমস্যা হতে পারে। বাজারে গিয়ে কীভাবে গাছ পাকা আম ও কৃত্রিমভাবে পাকানো আমের মধ্যে পার্থক্য বের করবেন ? আপনাদের জন্য রইল কিছু টিপস ।

কৃত্রিমভাবে পাকানো আম কম রসালো হয় । সেই তুলনায় গাছ পাকা আম বেশি রসালো হয় ।

যদি, আমের গায়ে হলুদ এবং সবুজ রঙের মিশ্রণের প্যাচ থাকে, তাহলে বুঝবেন সেটা রাসায়নিক উপায়ে পাকানো হয়েছে । কারণ গাছ পাকা আমের রঙে সবুজ ও হলুদের সংমিশ্রণ থাকে ।

আম যদি চাপ দিয়ে নরম লাগে, তা হলে তা গাছ পাকা আম বলে ধরে নেওয়া যায় । কিন্তু যদি তা না হয়, তাহলে রাসায়নিক ব্যবহার করেই পাকানো হয়েছে ।

আম কেনার পর কিছুক্ষণ রেখে দিন। গাছ পাকা আম হলে গন্ধে মৌ মৌ করবে চারপাশ। ওষুধ দেওয়া আমে এই মিষ্টি গন্ধ হবে না। আর পরিপক্ক আম চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো পাকা আম সাধারণ হলুদাভ হয় এবং পানিতে রাখলে ডুবে যায়।

লক্ষ্য করুন যে স্থান থেকে আম কিনছেন সেখানে রাখা আমের গায়ে মাছি বসছে কিনা। কেননা ফরমালিন যুক্ত আমে মাছি বসবে না।

গাছ পাকা আমের শরীরে এক রকম সাদাটে ভাব থাকে। কিন্তু ফরমালিন বা অন্য রাসায়নিকে চুবানো আম হবে ঝকঝকে সুন্দর। কারবাইড বা অন্য কিছু দিয়ে পাকানো আমের শরীর হয় মোলায়েম, দাগহীন ও আগাগোড়া হলদেটে। কারণ, আমগুলো কাঁচা অবস্থাতেই পেড়ে ফেলে ওষুধ দিয়ে পাকানো হয়। অন্যদিকে, গাছ পাকা আমের দাগ পড়বেই।

আম নাকের কাছে নিয়ে ভালো করে শুঁকে তারপর কিনবেন। গাছ পাকা আম হলে অবশ্যই বোটার কাছাকাছি ঘ্রাণ থাকবে। ওষুধ দেওয়া আমে মিষ্টি গন্ধ তো থাকবেই না, উল্টো বিচ্ছিরি গন্ধ বের হবে। আম খাওয়ার সময় যদি টক, মিষ্টি কোনো স্বাদ না পেয়ে পানসে স্বাদ পান, তাহলে বুঝবেন আমে ওষুধ দেওয়া।

এবড়ো-থেবড়ো নয় এমন আম কিনুন। যে আমের খোসা কুঁচকে গেছে সেটি কিনবেন না। হিমসাগর ছাড়াও নানা জাতের আম আছে, পাকলেও সবুজ থাকে এবং মিষ্টি হয়। ওষুধ দিয়ে পাকানো হলে আমের শরীর হয় মসৃণ ও সুন্দর।

যে আম কিনবেন সেখান থেকে একটি আম নিয়ে আঙুলের মাথা দিয়ে হালকা টিপে দেখবেন। আম যদি পাকা হয় তবে সেটি নরম হবে। যদি আঙুলের চাপে গর্ত হয়ে যায় তাহলে কিনবেন না। কারণ, আম আগেই বেশি পেকে গেছে। যা খেতে একদমই স্বাদ লাগে না।

প্রাকৃতিকভাবে পাকা আম কাটলে এর ভেতরের শাসটি হবে লালচে হলুদ রঙের কিন্তু ফরমালিন যুক্ত আমের ভেতরের অংশটি হবে হালকা অথবা গাঢ় হলুদ রঙের। এর মানে হলো বাইরে থেকে আমটি পাকা দেখালেও ভেতরটি পাকা নয়।

প্রাকৃতিকভাবে পাকা ফলের চামড়ার ওপর এক ফোঁটা আয়োডিন দিলে তা গাঁঢ় নীল অথবা কালো বর্ণের হয়ে যাবে। কিন্তু ক্যামিকেল দ্বারা পাকানো ফলে আয়োডিনের রং অপরিবর্তিত থাকে।

প্রাকৃতিকভাবে পাকা আম বেশ মিষ্টি হয় এবং এতে অনেক বেশি রস থাকে। কিন্তু ফরমালিনযুক্ত আমে রস অনেক কম হয়। ভেতরটা পাকা থাকে ঠিকই কিন্তু রস কম পাওয়া যায়।

বাজার থেকে আম এনে খাওয়ার আগে অন্তত ১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে নিন। এবার খোসা ছাড়িয়ে উপভোগ করুন মজার ও পুষ্টিকর প্রিয় ফল আম।

(ঢাকাটাইমস/২৫ মে/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :