স্মার্ট কর্মসংস্থান মেলাসহ রংপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নানামুখী কর্মসূচি

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ০৪ জুন ২০২৪, ২১:০৩| আপডেট : ০৪ জুন ২০২৪, ২১:১৬
অ- অ+

শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেস্মার্ট কর্মসংস্থান মেলাসহ রংপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রে নানামুখী কর্মসূচির আয়োজন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

মঙ্গলবার রংপুর কারমাইকেল কলেজে স্মার্ট কর্মসংস্থান মেলার আয়োজন করা হয়। আর রংপুর টিচার ট্রেনিং কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মডারেশন, উত্তরপত্র মূল্যায়নের গুণগত মানোন্নয়ন বিষয়ে মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়।

এছাড়া রংপুর সরকারি কলেজে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।

দিনব্যাপী এইসব আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর . মো. মশিউর রহমান।

এদিন সকালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই কারমাইকেল কলেজ যৌথভাবে আয়োজিত স্মার্ট কর্মসংস্থান মেলায় দেশের প্রসিদ্ধ ২০টি কোম্পানি অংশগ্রহণ করে। এসব প্রতিষ্ঠানে হাজার ৩০ জনের কর্মসংস্থানের চাহিদা রয়েছে।

মেলায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রংপুর অঞ্চলের কলেজগুলোর প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। শিক্ষার্থীরা প্রবল আগ্রহ নিয়ে মেলায় অংশ নেয় এবং চাকরির জন্য করণীয় এবং কী কী দক্ষতা যোগ্যতার প্রয়োজন সে সব বিষয়ে সম্যক জ্ঞান অর্জন করে। পাশাপাশি কীভাবে কারিকুলাম ভিটা লিখতে হয় সেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করেন তারা।

স্মার্ট কর্মসংস্থান মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর . মো. মশিউর রহমান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ ধরে আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে অগ্রসরমান। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হলে স্মার্ট সিটিজেন যেমন দরকার তেমনি স্মার্ট কর্মসংস্থানও দরকার। আমি চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা মেলায় এসে চাকরি খুঁজবে না। তাদেরকে চাকরিদাতা খুঁজে নেবে। সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। নিজেদের দক্ষ এবং যোগ্য করে গড়ে তুললে চাকরি কোনো সমস্যা নয়। একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা এই স্মার্ট কর্মসংস্থান মেলার আয়োজন করেছি। যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হয়। শিক্ষার উৎকর্ষতা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে যেন এই উদ্যোগ কাজে লাগে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য . মশিউর রহমান আরও বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা যদি ১ম বর্ষ থেকে মাস্টার্স শ্রেণি পর্যন্ত সবাই ক্লাসরুমে নিয়মিত উপস্থিত হয়। কলেজে এবং বাসায় নিয়মিত বই পড়ে। তাহলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। আমাদের নতুন কারিকুলামে আইসিটি অবশ্যপাঠ্য করা হয়েছে। সফট স্কিল রাখা হয়েছে। এসব বিষয়ে যদি আমাদের শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই প্রস্তুতি নেয় তাহলে চাকরিদাতারা তোমাদের খুঁজে নেবে- আমার গভীর বিশ্বাস। তোমরা জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়কে হেলায় নষ্ট করবে না। হিসাব মত যদি তোমরা না চলো তাহলে এর মাশুল তোমাকেই দিতে হবে। তোমার পিতা, মাতাকে দিতে হবে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়কে অযথা নষ্ট করা নিজেকে রক্তাক্ত করার সমান। ৪টি বছরে একটি ক্যাম্পাসে থাকলে, নিয়মিত লাইব্রেরিতে গেলে, বইয়ের সঙ্গে সম্পর্কে করলে, শিক্ষকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করলে তার কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কঠোর পরিশ্রমের ফলে ওই শিক্ষার্থী সফল হবেই। এসব করার মধ্য দিয়েই আমাদের উদ্যোগ এবং স্বপ্ন সফলতা পাবে।

স্মার্ট কর্মসংস্থান মেলায় কারমাইকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. রোজাইনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকপূর্ব শিক্ষা বিষয়ক স্কুলের ডিন অধ্যাপক . মো. নাসির উদ্দিন, এটুআই এর ফিউচার স্কিলস এমপ্লয়মেন্টের কো-অর্ডিনেটর মো. হাবিবুর রহমান।

এদিকে দুপুরে রংপুর শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজেজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মডারেশন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন-এর গুণগত মানোন্নয়নশীর্ষক বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য . মশিউর রহমান বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনার কোনো বিকল্প নেই। অধিভুক্ত কলেজের প্রত্যেকটিতে দুইজন শিক্ষককে আইসিটি এবং দুইজন শিক্ষককে প্যাডাগোজি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যদিয়ে সারা দেশের সকল কলেজকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এতে করে শিক্ষকরা দক্ষ হবেন। উপাচার্য . মশিউর রহমান আরও বলেন, বিভিন্ন কলেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে কম আসে। অনেকে মনে করেন দারিদ্র্যের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসে না, সেটির সঙ্গে আমি একমত নই। এরপরও আমরা বিষয়টিকে এড্রেস করে প্রতি বছর প্রতি কলেজের জন্য জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছি। শুধু দারিদ্র্য সংকট নয়। সংকট অন্য জায়গায়, সেটি আমাদের বের করতে হবে। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন নিয়ে নানা রকম কথা হয়। আমাদের প্রশ্নপত্রের ধরন ভালো না। কোনো মতে লিখছে, পাস করছে সেই জায়গায় থাকা যাবে না। শিক্ষার্থীরা মনে করে পুরো সিলেবাস পড়া লাগে না। কারণ গত / বছরের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করলেই একজন শিক্ষার্থী বুঝতে পারে পরবর্তী বছর কী প্রশ্ন আসবে। এই অবস্থা চলতে পারে না। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

এই প্রশ্নপত্র প্রণয়নের কাজে কলেজ শিক্ষকরা যুক্ত থাকেন জানিয়ে উপাচার্য বলেন, আমরা কলেজ শিক্ষকদের এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে চাই। কীভাবে সৃজনশীল প্রশ্নপত্র তৈরি করা যায় সে বিষয়ে তাদের জানা আবশ্যক। অন্যথায় মৌলিক পরিবর্তন আসবে না। আমরা টেক্সট বই রচনার জন্য গ্রন্থ রচনা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি। কিন্তু তেমন সাড়া পাইনি। মাত্র ১৩৪টি আবেদন পেয়েছি। গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখেছি। কিন্তু সেটিতেও তেমন সাড়া মেলেনি। পর্যাপ্ত গবেষণা প্রস্তাবনা পাইনি। এসব প্রকল্পে বেশি বেশি আবেদন প্রয়োজন। দরিদ্র্য শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। সাড়ে সাত কোটি টাকা এতে বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু এখনো অনেক কলেজ তালিকা পাঠায়নি। যারা এখনো পাঠাননি দ্রুত সময়ের মধ্যে আবেদন পাঠান, আমরা অর্থবরাদ্দ দেব। উত্তরপত্র মূল্যায়নে দ্বিতীয় এক্সামিনার সিস্টেম চালু করা যায় কিনা এবং প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং মডারেশনে শিক্ষকদের মধ্য থেকে প্যানেল করা যায় কিনা সে বিষয়ে ভাবনার জন্য আহ্বান জানান উপাচার্য। মতবিনিময় সভায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অর্ধিভুক্ত রংপুর অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি ২৮২টি কলেজের অধ্যক্ষ শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অধ্যক্ষ শিক্ষকবৃন্দ পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নে করণীয় বিষয়ে এবং নানা ক্ষেত্রে উন্নয়নের বিষয়ে পরামর্শ তুলে ধরেন। উপাচার্য তাদের পরামর্শ মনোযোগ সহকারে শুনেন এবং সে আলোকে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুস সালাম হাওলাদার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মেজবাহ্ উদ্দিন, তথ্য প্রযুক্তি (আইসিটি) দপ্তরের পরিচালক মো. মুমিনুল ইসলাম, জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মো. আতাউর রহমান, প্রকাশনা বিপণন দপ্তরের পরিচালক . মালেক সরকার, অর্থ হিসাব দপ্তরের পরিচালক মো. সাজেদুল হক, মানবসম্পদ উন্নয়ন শুদ্ধাচার দপ্তরের পরিচালক জয়ন্ত ভট্টাচার্য্য, আঞ্চলিক কেন্দ্র সমন্বয় দপ্তরের পরিচালক হোসনেয়ারা বেগম, সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান, রংপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক মো. রবিউল হক অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মু. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। এদিকে একইদিন বিকালে রংপুর সরকারি কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশিক্ষণে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য . মশিউর রহমান। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শুনেন উপাচার্য। শিক্ষকরা এই প্রশিক্ষণকে দেশব্যাপী আরও বিস্তৃত করার দাবি জানান। উপাচার্য তাদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, মেন্টাল হেলথ বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেশব্যাপী বিস্তৃত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণকে অঞ্চলভিত্তিক ছাড়িয়ে দেওয়া হবে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ শেষে উপাচার্য কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এসময় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোশারফ হোসেনসহ কলেজের শিক্ষক পরিষদের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/০৪জুন/পিএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
শার্শায় ১০ স্বর্ণের বারসহ পাচারকারী আটক
মুজিবনগর সীমান্তে ১০ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন বিএসএফের
সিলেটে গাঁজাসহ কারবারি গ্রেপ্তার
চার ম্যাচ পর মেসির গোল, মায়ামির জয়
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা